Thursday, October 6, 2022

মলয় রায়চৌধুরীর 'ডোমনি' : বিকাশ দাস

 ডোমনি" কবিতা পুস্তিকার ভূমিকা । লিখেছেন বিকাশ দাস

ডোমনির সঙ্গে আমার পরিচয় এই বইয়ের কবি মলয় রায়চৌধুরীর সূত্রে । আমি ও মলয় রায়চৌধুরী একই শহরে থাকি, মুম্বাইতে। আমরা দু'জনে একে আরেকজনকে চিনি, কবিতার সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াতের সময় আমাদের বাক্য-চিত্রকল্প-পংক্তি নিজেদের মধ্যে কথা বলে নেয় । এবার ডোমনিকে সাজিয়ে-গুজিয়ে নিয়ে যাবো মলয়দার বাড়িতে, তাঁর হাতে সঁপে দেবার জন্য । ডোমনির বয়স আমার দু'জনের থেকে কয়েক শতক বেশি, তবু সে চিরতরুণী, যখন তাকে কবিরা ডোম্বী বলে চিনতেন ।
মলয় রায়চৌধুরীর কবিতার বিশেষ কোনো টেমপ্লেট নেই বলেই আমার মনে হয়, যেমন আছে রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ বা শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের । এই ব্যাপারে মলয় রায়চৌধুরীর কবিতাগুলি প্রতিটি বইতে স্বীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে দেখা দিয়েছে, মলয় রায়চৌধুরীর প্রিয় কবি বিনয় মজুমদারের মতো । ষাটের দশকে সাহিত্য-জগতে ঝড়-তোলা 'প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার' থেকে আরম্ভ করে 'শয়তানের মুখ', 'জখম', 'কবিতা সংকলন', 'মেধার বাতানুকূল ঘুঙুর', 'চিৎকারসমগ্র', 'ছত্রখান', 'যা লাগবে বলবেন', 'আত্মধ্বংসের সহস্রাব্দ'. 'পোস্টমডার্ন আহ্লাদের কবিতা', 'কৌণপের লুচিমাংস', 'ছোটোলোকের কবিতা' এবং সাম্পতিক 'মাথা কেটে পাঠাচ্ছি যত্ন করে রেখো' -- প্রতিটি কাব্যগ্রন্হে মলয় রায়চৌধুরীর কবিতায় পরিবর্তন ঘটেছে যা অভাবনীয় । অতি সাধারণ কথার বাক্যে অসাধারণ অন্তর্নিহিত অর্থ ।
আমার মনে হয় তাঁর কবিতায় পরিবর্তন গুলো এসেছে তাঁর অভিজ্ঞতার দৃষ্টিকোন থেকে । তিনি চাকুরি আরম্ভ করেছিলেন পাটনায় ব্যাঙ্কনোট পোড়াবার কাজ দিয়ে, যা আমরা জেনেছি তাঁর প্রথম উপন্যাস 'ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস' থেকে । তারপর কৃষি-উন্নয়নের চাকুরিতে চলে গেলেন লখনউ এবং উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক ঘনঘটার ছায়া পড়তে লাগল তাঁর 'মেধার বাতানুকূল ঘুঙুর' বইয়ের ও পরের কবিতাগুলোয়, তাঁর উপন্যাস 'জলাঞ্জলী' ও 'নামগন্ধ'-তে । লখনউ থেকে মলয় রায়চৌধুরী চলে গেলেন মুম্বাই ও মুম্বাই থেকে ফিরে এলেন কলকাতায় গ্রামীণ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসাবে । তাঁর স্মৃতিকথা থেকে জেনেছি যে পাটনা ছাড়ার পর তিনি প্রায় দেড় দশক কবিতা লেখেননি এবং প্রচুর বিভিন্ন ভাষায় পড়াশুনা করতেন, ভারতের গ্রামেগঞ্জে চাকুরিসূত্রে ট্যূর করে বেড়াতেন । স্বাভাবিক যে তাঁর কবিতায় সেই পড়াশুনা এবং দরিদ্র গণসংযোগ প্রতিফলিত হয়েছে ।
'চিৎকারসমগ্র', ছত্রখান', 'যা লাগবে বলবেন' ও 'আত্মধ্বংসের সহস্রাব্দ'-এর পর তিনি যখন সরাসরি কাব্যগ্রন্হের নামকরণ করলেন 'পোস্টমডার্ন আহ্লাদের কবিতা, তখন আমরা বুঝতে পারি তিনি কবিতায় ঠিক কী ধরণের বৈশিষ্ট্য আনতে চাইছেন বিশ্বের দরবারে । এই সময়ে মলয়দা তাঁর দাদা সমীর রায়চৌধুরীর পত্রিকা "হাওয়া৪৯"-এর একজন পরামর্শদাতা হিসাবে বিভিন্ন দেশের সাহিত্যভাবনা ও কবিতা-লেখন নিয়ে দাদা ও অন্যান্য অনেকের সঙ্গে আলোচনা করতেন ।
মলয় রায়চৌধুরী যে নিজের কবিতার টেমপ্লেট গড়ে তোলেননি তা যতদূর মনে হয় স্বেচ্ছাকৃত । কিন্তু 'প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার' কবিতা ও তার দীর্ঘ মামলার কারণে তাঁর কবিতায় বহু পাঠক যৌনতা খুঁজে পান । আমি নিশ্চিত যে 'ডোমনি' বইয়ের কবিতাগুলোয় তাঁরা যৌনতা খোঁজার চেষ্টা করবেন । 'ডোমনি' যৌনতাহীন হবার কোনো কারণ দেখিনা, কেননা সে তো আদপে ডোম্বী, চর্যাপদের ডোম্বী, মলয় রায়চৌধুরীর প্রেম ও আদরে সে উত্তরাধুনিক ডোম্বী তরুণী ।
বিকাশ দাস
ফটোর কোনো বিবরণ নেই।







No comments:

Post a Comment

হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে

  হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে প্রখ্যাত কবি, হাংরির কবি দেবী রায় ৩ অক্টোবর ২০২৩ চলে গেছেন --- "কাব্য অমৃতলোক " ফ্ল্...