Wednesday, July 25, 2018

মলয় রায়চৌধুরীর পোস্টমডার্ন কবিতা "হাততালি" ও তার বিশ্লেষণ

হাততালি

উৎসর্গ : মীরা বেনুগোপালন

তারপর পলিতকেশ কাশফুলে

পইপই বারণের পুশতুভাষী দুর্যোধন বেরিয়ে পড়েছে

দগদগে রোদে

চন্দনরক্তের পাথরপোশাক রক্ষীদের সরিয়ে

অন্ধকারকে খুঁচিয়ে বের করে এনেছেন সকালের বিকল্প

কাঁচা নরকের উদাত্ত অনুভব

হাহ

রোগা পৃথিবীর শিয়রে রাতজাগা নেশুড়ে

হরতালের দরুন ক্রুশকাঠ থেকে নামতে পারেননি হাততালি

চোখে জলসুদ্ধ হেসেছে শিশুরা

.

একথোকা অন্ধকারে জোর-করে দেখানো স্বপ্নে

যাত্রীডুবির খবরে ডুকরে উঠেছেন লালশালু-নৌকোর হাততালি

না-খেতে পাওয়া হলুদ শীতে

গরম আলকাৎরায় ফোটা ফরসা রজনীগন্ধা

যখন নরুন-খোদাই বাতাসে

নিকেল-চকচকে বিচিবীজ

কাঁধে চাঁদ নিয়ে ভররাত শাসিয়েছে শ্যাওলাধরা করোটি

ঘাসফুলে না-ফোঁপানো ফড়িংপুরুষ

বারবাডোজ পেশির ব্রোঞ্জপুরুষরা

জ্বরগরম কপাল ছুঁইয়েছে তাঁর পশুপশম নাভিতে

.

চিরুনিধার বৃষ্টিতে

ভুরু-কোঁচকানো ঢেউয়ে শুয়ে

জলকে চাপড়েছে ডিজেলচাদর ছায়া

সমস্ত ডানা সরিয়ে ফেলা হয়েছে আকাশ থেকে

হরিবোল দিতে-দিতে দল-বেঁধে সাংবাদিকদের সদ্যছাপা সকাল

চাবির ঘোলাটে ফুটোয় যাবজ্জীবন কয়েদির চোখ

বাইরে

হেমন্তের ঢেঁকিতে গোলাপ-গোড়ালি

লালুং রমণি

ঘামসুগন্ধে বিহ্বল প্রতিধ্বনি ফেরত চেঁচাতে ভুলে যায়

.

তারপর

অপারেশান বুলশিট

মুখে ঘা

শহিদ চবুতরায় অর্থনমিত লিঙ্গে যুবাবিপ্লবীর শীৎকার

পেঁয়াজবাটায় ভেজা আমিষ হৃদয়

চোখে-কালি হাসনুহানা

জলে ভিজে পদ্মফুলের নিউমোনিয়া

হুঁকোটানা বুড়ো রেলগাড়িতে মেঘের চেষ্টাকৃত গর্জন

আর সোনার মাকড়সার জালে ঢাকা বিদ্যুৎ

হোঁতকা মরদকে সবুজ পিঠ থেকে নামিয়ে দিয়েছে ব্যাঙযুবতী

.

ব্যাবিলনের শাদা নরকহুরি

উত্তরমুখো নকশিমেঘের ওষুধবড়ি গিলিয়েছে

রেড়িপ্রদীপে ঝুঁকে ঘুরঘুরে শুঁটিপোকা

এলোচুলে ঢাকা উল্কামুখ রাজকন্যার মুকুট থেকে গানের টুকরো

পায়ে রক্তমাখা রাজহাঁস

যখন-তখন চেয়েছে বাড়ি-ফেরত সৈন্যের বসন্তকাল

সাজিয়েছে খেলাচ্ছলে-মারা চরমযুবার মা-বাপের সবুজকাঁথা ধানক্ষেত

তুঁতেরঙা কুয়াশা এগিয়েছে সিংহচামড়া শিকারির গোপন ঘাসপথে

বিবাহযোগ্য ঘুড়সোয়ার হাততালি

হেই হো

.

কিছুটা অপরিচিত থাকার কষ্টে

যে-বাগান সুপুরিগাছকে কড়ে আঙুলে দাঁড় করিয়ে আজীবন

দুরপাল্লার ঝড়ে

ল্যাম্পপোস্টের নিচে

বৃষ্টি মুড়ি দিয়ে

সেই ভাঙচুর চেহারাই তাঁর আঙ্গিক

যে-আদল খুঁজেছে শরীর এলিয়ে-দেয়া ঢেউ

কথকনাচে বাঁধা ব্রহ্মান্ড

মন্দিরের চোরাকুঠুরিতে মুখবাঁধা

হাততালি

.

আগুন যখন ধোঁয়া থেকে আলাদা হচ্ছে

যেটুকু সময়ে

আলজিভ

দুই হৃৎস্পন্দনের মাঝে তেতো হয়ে ওঠে

জলপথে এসে আক্রমণ করেছে জ্বরবিদ্রোহী

গাছে-গাছে ঝড়কালীন পলাশের লাল-সখ্যতা

ঠিক যেন চিড়িয়াখানার ভবিষ্যৎহীন

শেষ হাওয়ায়

পটকা ফাটিয়েছে রাংতাপাড় মেঘ

যেন এক্ষুনি এসে পড়ল বলে হাততালি

.

রাতভর ছড়নো হাততালি সকালে এককোণে ঝেঁটিয়েছে ঝাড়ুদার

আঘাতহীন ভালোবাসায়

থলেতে পুরেছে অসুস্হ গঙ্গানদীকে

এক বা তিনরঙা পতপতে রামধনু

কবরে পাওয়া গেছে ভাত খাবার কাঁসি

অত্যাচারিতের কাতরানিতে পড়েছে হাড়ের খিলান

কেউ সুখী নয়

কেমন আছো জানতে চাইলে বলেছে

ভালো

পাকের পর পাক কাঁটাতার কোমর থেকে খুলে দিয়েছে

.

নষ্টের শপথ আওড়ানো শেষে

শহরগ্রামে রোঁদে বেরিয়েছে মড়াসংগ্রহকারী

কষ্ট হলে কাঁদতে পারার আশীর্বাদ চেয়েছে নগরবাসী

ওদিকে হাততালিবাদক

ভগ্নস্বাস্হ্য আকাশে

পাখিদের গান শুধরে দিতে চেয়েছে

তারা-দপদপে অন্ধকারে

বালিশ-জড়ানো বর্ষায়

পালামৌ জেহানাবাদ রোহতাসে কাদাপেছল মাগুরের আঁশটে হাঁপানি

শামুক-থুতনি বুড়ির চোখের পাতায় ধূসর সোরাগন্ধক

.

আধপচা হুগলি নদীর ডাগরচোখ পারশের গান শুনতে

কেউটে যুবতীর শরীর থেকে খসে পড়েছিল শীতের মিহিন আদল

আচমকা সজারু

বিয়ের লাল বেনারসিতে শিমুল

এদিকপানে মুখ করে দা!ড়িয়েছে ছোকরা সূর্যমুখী

গরম তেলে লাল দুহাত উড়িয়ে স্বস্হ্যবতী কাঁকড়া

ভাতের হাঁড়িতে নেচেছে সফেদ-মসলিন নরম অপ্সরা

তখন অন্ধকারে কেঁদে নিয়ে আলোয় হেসেছে হাততালি

হাসপাতালের বিছানায় লোহার শেকলে বাঁধা শুনেছে

টেবিল ঘড়িতে সারারাত গ্রেপ্তারের ঠকঠক ঠকঠক ঠকঠক

(মুম্বাই ১২ মাঘ ১৩৯৫)
                                                                             
পোস্টমডার্ন কবিতার জনক ফেদেরিকো দ্য ওনিস

No comments:

Post a Comment

হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে

  হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে প্রখ্যাত কবি, হাংরির কবি দেবী রায় ৩ অক্টোবর ২০২৩ চলে গেছেন --- "কাব্য অমৃতলোক " ফ্ল্...