জয়িতা : কবিতা না গদ্য-- গদ্যের ক্ষেত্রে প্রবন্ধ না গল্প-উপন্যাস ---তুমি নিজে কোনটা লিখতে বেশি পছন্দ করো।
মলয় : আমার নিজের তেমন কোনো প্রেফারেন্স নেই । নির্ভর করে মগজের ভেতরে একটা বিশেষ সময়ে কি ঘটছে । প্রবন্ধ লিখি মূলত সম্পাদকদের অনুরোধে । এখন আর প্রবন্ধ লিখতে ভালো লাগে না, প্রাবন্ধিকের সংখ্যা কম বলে সম্পাদকরা প্রবন্ধ চান, এমনকি সম্পাদক নিজে কোনো বিষয় বেছে নিয়ে লিখতে বলেন। তা কি পারা যায় ? এখন তেমন পড়াশোনা করতে বা সমাজ নিয়ে ভাবতেও ভালো লাগে না । ফিকশান লিখি, কোনো একটা ব্যাপার স্ট্রাইক করলে লিখতে থাকি, অভিজ্ঞতায় তো মাল-মশলার অভাব নেই, নিজের জীবন থেকে কতো চরিত্র তুলে আনা যায় । কেউ চাইলে দিই । কবিতা তো অ্যাডিকশান, যখন নেশাটা পেয়ে বসে তখন না লিখে নিস্তার নেই । সেগুলোও ইমেলের বডিতে লিখে রাখি, কেউ চাইলে পাঠাই , আমার মনে না ধরলে ডিলিট করে দিই। ইন ফ্যাক্ট যে চায় তাকেই পাঠাই, কোনো বাদ বিচার করি না। অনেকে বিষয়বস্তু বলে দেন, তখন গোলমালে পড়ি, কেননা আমি তো বিষয়কেন্দ্রিক কবিতা লিখি না ; নিজের ইচ্ছেমতন লিখি, কারোর পছন্দ হোক বা নাহোক । কবিতার খাতা বলে আমার কোনো ব্যাপার নেই, ২০০৫ সালের পর থেকে, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পরে ভুল ওষুধের দরুন আরথ্রাইটিস হল । , তারপর হাঁপানিতে ধরল, হার্নিয়া, প্রোস্টেট, ভেরিকোজ ভেইনস । আরথ্রাইটিসের কারণে লেখালিখির বাইরে চলে যাচ্ছিলুম, সে কষ্ট তুই বুঝতে পারবি না । মগজের ভেতরে লেখার ঘুর্ণি হয়ে পাক খাচ্ছে অথচ কিছুই লিখতে পারছি না । তারপর মেয়ের উৎসাহে কমপিউটার শিখলুম, বাংলা টাইপ করতে শিখলুম, ডান হাতের মধ্যমাটা কম আক্রান্ত, সেটাই টাইপ করতে ব্যবহার করি । ছেলে এই কমপিউটারটা দিয়ে গেছে, ছুটিতে এলে পরিষ্কার করে দিয়ে যায় । মাঝে তো তিন-চার বছর লেখালিখি করতেই পারিনি আঙুলের সমস্যার জন্য ।
জয়িতা : তোমার বিভিন্ন উপন্যাস পড়লে দেখা যায় প্রতিটির ন্যারেটিভ টেকনিক ও আঙ্গিক এ ভিন্নতা । ‘ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস’ থেকে ‘জলাঞ্জলি’, ‘নামগন্ধ’, ‘ঔরস’, ‘প্রাকার পরিখা’, সবগুলো একই চরিত্রদের নিয়ে এগিয়েছে, একটাই উপন্যাস বলা যায় তাদের, কিন্তু তুমি প্রতিটির ফর্ম আর টেকনিকে বদল করতে থেকেছো । কেন ? তারপর, ‘অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা’ উপন্যাসে গিয়ে সম্পূর্ণ নতুন টেকনিক প্রয়োগ করলে, তিন রকমের বাংলা ভাষার খেলা দেখালে। ‘নখদন্ত’ উপন্যাসে বেশ কয়েকটা ছোটোগল্প আর নিজের রোজনামচার অংশ ঢুকিয়ে দিয়েছ । এই বিষয়ে কিছু বলো । এটা কি সচেতন প্রয়াস?
মলয় : হ্যাঁ । পাঁচটা মিলিয়ে একটা অতোবড়ো উপন্যাস তো কেউ ছাপতো না, তাই বিভিন্ন সময়ে আলাদা-আলাদা করে লিখেছিলুম । ‘ডুবজলে’ উপন্যাসটা সহকর্মীদের নিয়ে লেখা, ক্রমে জানতে পেরেছিলুম যে কয়েকজন গোপন মার্কিস্ট-লেনিনিস্ট । পাঁচটা আলাদা উপন্যাস লিখতে পেরে একদিক থেকে ভালোই হলো, সব কয়টায় নতুনত্ব আনতে চেষ্টা করেছি । ব্যাপারটা মগজে এলে বেশ কিছুকাল ভাবি আঙ্গিক নিয়ে, উপস্হাপন নিয়ে, তারপর লেখা আরম্ভ করি । অনেক সময়ে লিখতে লিখতে আপনা থেকেই একটা আঙ্গিক গড়ে ওঠে, যেমন ‘নখদন্ত’ বা ‘অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা’ । ‘নখদন্ত’ বইটার জন্য পশ্চিমবঙ্গে ট্যুর করার সময়ে চটকল আর পাটচাষ-চাষিদের নিয়ে প্রচুর তথ্য যোগাড় করেছিলুম । তেমনিই ‘নামগন্ধ’ লেখার সময়ে পশ্চিমবঙ্গের আলুচাষি আর কোল্ড স্টোরেজের তথ্য সংগ্রহ করেছিলুম । এই বইদুটোয় বেশ কিছু চরিত্র চোখে দেখা । অভিজ্ঞতার বাইরেও লিখেছি, যেমন ‘জঙ্গলরোমিও’, একদল ক্রিমিনালের বিস্টিয়ালিটি নিয়ে । টানা একটামাত্র বাক্যে ফিকশান লিখেছি ‘নরমাংসখোরদের হালনাগাদ’, এটাও জাস্ট ইম্যাজিনেটিভ, পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক বিভাজন নিয়ে । ‘হৃৎপিণ্ডের সমুদ্রযাত্রা’ রবীন্দ্রনাথের দাদুর দেহ ইংল্যাণ্ডের কবর থেকে তুলে হৃৎপিণ্ডে কেটে কলকাতায় নিয়ে আসার কাহিনি, রবীন্দ্রনাথ আর রবীন্দ্রনাথের বাবারও সমালোচনা করেছি ফিকশানটায় । রবীন্দ্রনাথের দাদু যদি আরও দশ বছর বাঁচতেন তাহলে পশ্চিমবাংলার ইনডাস্ট্রি উন্নত হতো । সেসময়ে ওনাকে ফালতু বাঙালিরা আক্রমণ করেছিল চরিত্রের দোষ দিয়ে অথচ এখনকার ভারতে প্রতিটি পুঁজিপতি ওনার তুলনায় হাজারগুণ চরিত্রদোষে দুষ্ট, এমনকি তাদের মধ্যে জোচ্চোর, কালোবাজারি, চোরাইমালের কারবারি, দেশ ছেড়ে পালানো বজ্জাতরাও আছে । ডিটেকটিভ উপন্যাসটা লিখেছিলুম চ্যালেঞ্জ হিসেবে, কিন্তু সেটাতেও আমি ভারতের সমাজকে টেনে এনেছি । রাজনীতি আর সমাজকে বাদ দিয়ে উপন্যাস লিখতে পারি না, দীর্ঘ গল্প ‘জিন্নতুলবিলাদের রূপকথা’ জীবজন্তু-পাখিদের নিয়ে, কিন্তু তাও পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক ঘটনাবলী আর চরিত্রদের নিয়ে । ‘রাহুকেতু’ উপন্যাসটা হাংরি আন্দোলনের সময়ের জীবনযাপন নিয়ে । ‘আঁস্তাকুড়ের এলেক্ট্রা’ বাবা আর মেয়ের যৌন সম্পর্ক নিয়ে । নেক্রোফিলিয়া নিয়ে লিখেছি ‘নেক্রোপুরুষ’, সময়ের স্হিতিস্হাপকতা নিয়ে লিখেছি ‘চশমরঙ্গ’ ।
জয়িতা : পোষ্টকলোনিয়াল বা কমনওয়েল্থ লিটেরেচারের ক্ষেত্রে সলমন রুশডিকে আদর্শ পোস্টমডার্ন নভেলিস্ট বলে কি তুমি মনে করো ?
মলয় : রুশডি একজন ম্যাজিক রিয়্যালিস্ট ঔপন্যাসিক, মার্কেজ প্রভাবিত । যতোই জটিল হোক, পাঠক ঠিকই বুঝতে পারে, যেমন ‘স্যাটানিক ভার্সেস’-এর ক্ষেত্রে । আমেরিকার আলোচকরা ম্যাজিক রিয়্যালিজমকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায় না, কেননা টেকনিকটা তাদের দেশে গড়ে ওঠেনি, তাই ম্যাজিক রিয়্যালিস্ট লেখকদেরও পোস্টমডার্ন বলে চালাবার চেষ্টা করে । পোস্টমডার্ন উপন্যাসের কিছু সূক্ষ্ম উপাদান থাকলেও রুশডির ফিকশানকে পোস্টমডার্ন তকমা দেয়া উচিত হবে না । গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজকে পোস্টমডার্ন বললে স্প্যানিশ আলোচকরা বুল ফাইটের ষাঁড় লেলিয়ে দেবে ।
জয়িতা : তোমার গদ্যে প্রথাগত প্রেম আসেনা । নেই স্টিরিওটাইপ প্রটাগনিস্ট । সেটা কি সচেতন ভাবে পরিহার করেছো স্বকীয়তা আনতে? ‘ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস’ উপন্যাসে মানসী বর্মণ, শেফালি, জুলি-জুডি ; ‘নামগন্ধ’ উপন্যাসে খুশিরানি মণ্ডল, ‘অরূপ তোমার এঁটোকাঁটায়’ কেকা বউদি, ‘ঔরস’-এ ইতু, এরা একজন আরেকজনের থেকে পৃথক এবং কেউই স্টিরিওটাইপ নয় । এমনকি উপন্যাসের শেষে চমক দিয়েছ যে খুশিরানি মণ্ডলকে পূর্ববঙ্গ থেকে তুলে আনা হয়েছিল, সে প্রকৃতপক্ষে জনৈক মিনহাজুদ্দিন খানের নাতনি । আত্মপরিচয় নিয়েও খেলেছো খুশিরানি মণ্ডলের ক্ষেত্রে, সে নিজের উৎস না জেনেই লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়ে, ব্রত রাখে, চালপড়ায় বিশ্বাস করে । মলয়রচনার আঙ্গিক সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জানতে চাইবো ।
মলয় : তার কারণ আমি প্রথাগত প্রেম করিনি আর দ্বিতীয়ত উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ব্যাপারটা ইউরোপ এনেছিল, মেট্রপলিটান সিংহাসনের প্রতীক হিসাবে । বয়সে আমার চেয়ে বড়ো নারীরা আমার জীবনে প্রথমে প্রবেশ করেছিলেন । তাই হয়তো যুবকের চেয়ে যুবতীর বয়স বেশি হয়ে যায়। নারী চরিত্রগুলোয় আবছাভাবে কুলসুম আপা আর নমিতা চক্রবর্তীর উপস্হিতি রয়ে যায় । হাংরি আন্দোলনের সময়ে যে যথেচ্ছ জীবন কাটিয়েছি, তার ছাপও নারী চরিত্রদের ওপর রয়ে গেছে । খুশিরানি মণ্ডলের মাধ্যমে দেখিয়েছি যে নিজের আইডেনটিটি ব্যাপারটা কতো গোলমেলে । এখনকার ভারতীয় সমাজের দিকে তাকিয়ে দ্যাখ, আইডেনটিটি পলিটিক্সের দরুন সমাজ ভেঙে পড়ছে, প্রতিনিয়ত লাঠালাঠি হচ্ছে, দলিতদের পেটানো হচ্ছে, মুসলমানদের ঘরছাড়া করা হচ্ছে । গোরুর মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে কতো লোকের জীবিকা নষ্ট করা হয়েছে । ইসলামে শুয়োর মাংস নিষিদ্ধ, কিন্তু দুবাইয়ের মলগুলোয় শুয়োরের মাংস বিক্রির আলাদা এলাকা আছে । আইডেনটিটি পলিটিক্স থেকে আমরা পৌঁছে গেছি জিঙ্গোইজমে । আমার বিয়ের কথা বলি ; আমি সলিলাকে বিয়ে করেছি তিন-চার দিনের আলাপের মধ্যেই, দুজনে দুজনকে হঠাৎই ভালো লেগে গিয়েছিল। এই নিয়ে একটা দীর্ঘ স্মৃতিকথা লিখছি, ‘আমার আজব বিয়ে’ নামে, অজিত বলেছে বই হিসেবে বের করবে । সলিলার মা-বাবা ছোটোবেলায় মারা গিয়েছিলেন ; তাই শাশুড়ির আদর খাবার সুযোগ হলো না আমার ।
জয়িতা : ‘ডুবজলে’ উপন্যাসে টেবিলের ওপরে রাখা মানসী বর্মণের পাম্প দিয়ে বের করা দুধ অতনু চক্রবর্তী টুক করে চুমুক দিয়ে খেয়ে নিয়েছিল । এটা কেন ?
মলয় : অতনুর মা সম্প্রতি মারা গিয়েছিলেন, সে কয়েকমাস মিজোরামে জুলি-জুডি নামে দুই সৎবোনের সঙ্গে যৌনজীবন কাটিয়ে পাটনায় ফিরে মানসিক গুমোটের মধ্যে আটক হয়ে গিয়েছিল। দুধটা দেখে আপনা থেকেই মায়ের অনুপস্হিতি তার মনে কাজ করে ওঠে । পরে ‘ঔরস’ আর ‘প্রাকার পরিখা’ উপন্যাস দুটোয় মানসী বর্মণ আর অতনু চক্রবর্তীর জটিল যৌন সম্পর্ক গড়ে ওঠে, ওরা তখন ঝাড়খণ্ডে মাওবাদী জমায়েতে যোগ দিয়েছে ।
জয়িতা : বাংলা সাহিত্যে বিশ্বায়নের প্রভাব কতটা প্রতিফলিত বলে তোমার মনে হয় ? বিশ্বায়নের রেশ ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয় তোমার ?
মলয় : এখনকার ব্যাপারটা বলতে পারব না । আমি আর বিশেষ পড়াশুনার সময় পাই না । বুড়ো-বুড়ি মিলে সংসার চালাতে হয় বলে সময়ের বড্ডো অভাব, বাজার করা, ঝাড়-পোঁছ, কুটনো কোটা, রান্নায় হেল্প ইত্যাদি । বিশ্বায়নের পর যে সব বাংলা উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে তার কিছুই প্রায় পড়িনি, বিশ্বায়ন তো বলতে গেলে ব্রেক্সিট আর ট্রাম্পের গুটিয়ে ফেলার রাজনীতির দরুন উবে যেতে বসেছে, কেবল চীনই আগ্রহী ওদের মালপত্তর বিক্রির জন্য, আমাদের দেশের বাজার প্রায় কবজা করে ফেলেছে চীন । তবে ঔপনিবেশিক বাংলা সাহিত্য তো ইউরোপের অবদান । বঙ্কিমচন্দ্র উপন্যাস লেখা আরম্ভ করেছিলেন ইউরোপীয় ফর্মে । মাইকেল অমিত্রাক্ষর আরম্ভ করেছিলেন ইউরোপের ফর্মে । তিরিশের কবিরা কবিতা লেখা আরম্ভ করেছিলেন ইউরোপের ফর্মে, এমনকি জীবনানন্দের কবিতায় ইয়েটস, বিষ্ণু দের কবিতায় এলিয়টের উপস্হিতি খুঁজে পান বিদ্যায়তনিক আলোচকরা । ব্রিটিশরা আসার আগে আমাদের সাহিত্যধারা একেবারে আলাদা ছিল । প্রতীক, রূপক, চিত্রকল্প, মেটাফর ইত্যাদি ভাবকল্পগুলো তো ইউরোপের অবদান । আধুনিক সঙ্গীত সম্পর্কে আমার জ্ঞান নেই, কিন্তু অনেকে রবীন্দ্রনাথের গানে ইউরোপের প্রভাব পান, এমনকি হুবহু গানের সুরের নকল । কবির সুমন আসার পর গানে রদবদল হলো।
জয়িতা : শূন্যদশকের কবি সাহিত্যিকদের কাছেও পুনরাধুনিক ,উত্তরাধুনিক বা আধুনান্তিক সাহিত্য সম্পর্কে ধোঁয়াশা। এর কারণ কি বলে মনে হয় ? বাংলা সাহিত্য সামগ্রিকভাবে আজকের বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে কতটা সমান্তরাল ?
মলয় : ধোঁয়াশা হলেও তাদের লেখায় ছাপ পাওয়া যাবে । আর সকলেরই মগজে ধোঁয়া ঢুকে আছে বলা যাবে না । অনেকে যথেষ্ট শিক্ষিত । আবার অনেকের আগ্রহ নেই, তারা নিজের মতো করে লিখতে চায় । পুনরাধুনিক, উত্তরাধুনিক, অধুনান্তিক, স্ট্রাকচারালিজম, পোস্টস্টাকচারালিম, ফেমিনিজম সম্পর্কে না জেনেও দিব্বি লেখালিখি করা যায় । কবিতা সিংহ তো ফেমিনিজমের তত্ব না পড়েও ফেমিনিস্ট কবিতা লিখে গেছেন । বাংলা কমার্শিয়াল পত্রিকায় এখন যে ধরনের মিল দেয়া কবিতা লেখা হয়, ইউরোপে আর তেমন কবিতা লেখা হয় না, ওদের কবিতায় ছবির ভাঙন অনেক বেশি আর দ্রুত । প্যারিস রিভিউ আর পোয়েট্রি পড়লে দেখা যায় যে অনেকে সহজ ভাষায় কবিতা লিখছেন, জটিলতা বর্জন করে, যখন কিনা বাংলায় বহু তরুণ কবিতাকে জটিল করে তুলছেন । আসলে কবিরা লেবেল পছন্দ করেন না । সকলেই চায় তাকে তার নামে লোকে জানুক, লেবেলের ঘেরাটোপে নয় । আমি নিজেই হাংরি লেবেলের দরুন বিরক্ত বোধ করি । বহু পাঠক তো ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ ছাড়া কিছুই জানে না।
জয়িতা : একটু ব্যক্তিগত প্রশ্নে আসি । ‘ছোটোলোকের ছোটোবেলা’ ও ‘ছোটোলোকের যুববেলায়’ নিজের বড়ো হয়ে ওঠার কথা লিখেছো । হাংরি আন্দোলনের সময়কার ঘটনাগুলো ‘হাংরি কিংবদন্তি’ ও ‘রাহুকেতুতে’ লিখেছ । কিন্তু পরবর্তী পর্বের মলয় রায়চৌধুরী বেশ কিছুকাল অপ্রকাশিত । এই সময়টার কথা বলো । সত্যি কি লেখোনি না লিখেছ তা অপ্রকাশে । এই ট্রান্সিশনাল সময়টার কথা বলো।
মলয় : লিখেছি তো, সবই লিখেছি । ‘আখর’ পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যায় লিখেছি “ছোটোলোকের জীবন” শিরোনামে । ওটা প্রতিভাস থেকে “ছোটোলোকের সারাবেলা” নামে প্রকাশিত হবার কথা । ‘ছোটোলোকের জীবন’ তোকে পাঠিয়েছি, পড়ে দেখিস । অমিতাভ প্রহরাজ লিখেছে ‘আখর’ ওই সংখ্যাটা লোকে গান্ধী জয়ন্তীর আগের দিনে রামের বোতল কেনার মতন কিনেছিল ।
জয়িতা : ব্যক্তি মলয় ও লেখক মলয়ের মধ্যে ফারাক কতটা? তুমি নিজেকে কিভাবে দ্যাখো ।
মলয় : কোনো তফাত আছে বলে মনে হয় না, তবে আমি ব্যক্তি মলয়ের ইমেজ ভাঙার চেষ্টা করি, কেবল ভাষা ভেঙে হাত গুটিয়ে বসে থাকি না । আমিও যেকোনো লোকের মতন বাজার যাই, দরাদরি করি, যৌবনে মেছুনির সঙ্গে ফ্লার্ট করতুম, এখন সন্ধ্যাবেলা সিঙ্গল মল্ট খাই । হাংরি আন্দোলনের সময়ে গাঁজা চরস আফিম এলএসডি বাংলা খেতুম, এখন আর খাই না । বাড়িতে যে পোশাক পরে থাকি সেটাই অতিথিদের সামনেও পরে থাকি, মহিলারা এলেও । কথা বলার ধাঁচেও কোনো তফাত নেই, যদিও বেশ কিছু সাহিত্যিককে দেখেছি কেমন ক্যালাটাইপের গলায় কথা বলতে । তারা সব বুদ্ধদেব বসুর ছাত্র বা ছাত্রদের ছাত্র । আমি হুগলির বুলিতে ইমলিতলা মিশিয়ে চালিয়ে যাই । ব্যক্তি আর লেখক দুইই ইমলিতলার, তাই সহজেই নিজের ইমেজ ভাঙতে পারি ।
জয়িতা : তোমার সমসাময়িক কোনো সাহিত্যিকের কথা বলো যাঁর সঠিক মূল্যায়ন কলকাতা কেন্দ্রিক সাহিত্য গোষ্ঠি করতে পারেনি যথাযথ ।
মলয় : মূল্যায়নই হয় না, তো আবার সঠিক মূল্যায়ন । এতো বেশি সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক গোষ্ঠীবাজি হয় যে বেশির ভাগ প্রতিভাবান লেখক-কবির মূল্যায়ন হয় না, বিশেষ করে যারা গদ্য নিয়ে কাজ করছে তারা অবহেলিত থেকে যান । পুরস্কারগুলো নিয়ে টানাটানি হয় । সিপিএমের লোকেদের বাংলা অকাদেমি থেকে বিদেয় করে দেয়া হলো ওই একই সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক কারণে, তাঁরাও জ্ঞানী-গুণী ছিলেন । এখন একদল নতুন মুখ এসেছেন যাঁরা তাঁদের প্রিয় সাহিত্যিক আর সংস্কৃতিকর্মীদের কাঁধে উত্তরীয় দিচ্ছেন । যারা দুটো দিককেই এড়িয়ে গেছে তাদের প্রতিষ্ঠান গুরুত্ব দেয় না । যেমন কেদার ভাদুড়ি, সজল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখকে ।
জয়িতা : জীবনের ইমনকল্যাণে এসে তোমার চেতনায় কোনো পরিবর্তন এসেছে ? জীবনদর্শনের ক্ষেত্রে বলছি।
মলয়: এখন আমার একাকীত্ব ভালো লাগে, বেশি কথা বলতে ভালো লাগে না, আমার স্ত্রীও বেশি কথা বলা পছন্দ করে না । আমরা কোনো অনুষ্ঠানে যাই না । খাবার নেমন্তন্ন এড়িয়ে যাই, শরীরের কারণে । এখানে মুম্বাইতে আত্মীয় বলতে আমার এক মামাতো ভায়রাভাই, যার বয়স আমার চেয়ে ছয় বছর বেশি । কিন্তু এও মনে হয় যে মরার পর শ্মশানে নিয়ে যাবার লোক জোটানো বেশ কঠিন হবে । মাকে যেখানে দাহ করা হয়েছিল সেখানেই পুড়তে চাই । নয়তো বেস্ট হবে দেহ দান করে দেয়া । সেটা মরার পর বডির অবস্হা কেমন থাকে তার ওপর নির্ভর করে । আমার স্ত্রীর আপত্তি নেই । স্ত্রী আগে মারা গেলে আমারও আপত্তি নেই । ভীতিকর হলো যে আরথ্রাইটিসের জন্য সই করতে পারি না, স্ত্রীকে সই করতে হয়, সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হয় ব্যাঙ্কে ।
জয়িতা: তোমার জীবন ও সাহিত্যচর্চার ওপর দেশে বিদেশে গবেষণা হয়। সে সম্পর্কে কলকাতার পাঠক মহল জানতে চায় ।
মলয়: বছর দশেক আগে থেকে আরম্ভ হয়েছে । প্রথম পিএইচডি করেছিলেন বিষ্ণুচন্দ্র দে আর এমফিল করেছিলেন স্বাতী ব্যানার্জি । আমেরিকা থেকে মারিনা রেজা এসে হাংরি আন্দোলন নিয়ে গবেষণা করে গেছেন, এখন গুটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করছেন ড্যানিয়েলা লিমোনেলা, রূপসা নামে একটি মেয়ে এমফিল করছে, প্রবোধচন্দ্র দে এম ফিল করছেন, নয়নিমা বসু, নিকি সোবেইরি, বিবিসির জো হুইলার, ফরজানা ওয়ারসি, জুলিয়েট রেনোল্ডস, শ্রীমন্তী সেনগুপ্ত । এনারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বলে জানি । অনেকে যোগাযোগ না করেই, সন্দীপ দত্তর লাইব্রেরি বা অন্য কোথাও থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কাজ করেছেন, যেমন রিমা ভট্টাচার্য, উৎপলকুমার মণ্ডল, মধুবন্তী চন্দ, সঞ্চয়িতা ভট্টাচার্য, মহম্মদ ইমতিয়াজ, নন্দিনী ধর, তিতাস দে সরকার, এস মুদগাল, অঙ্কন কাজি, কপিল আব্রাহাম প্রমুখ । উদয়শঙ্কর বর্মা পিএইচডি করেছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, পুরো আন্দোলন কভার করেননি উনি, উত্তম দাশের সঙ্গে দেখা করলে নথিপত্র পেতেন । ডেবোরা বেকার আমাদের কারোর সঙ্গে বা সন্দীপ দত্তের লাইব্রেরিতে না গিয়ে তারাপদ রায়ের কাছ থেকে তথ্য যোগাড় করেছিলেন আর আবোল-তাবোল লিখেছেন । সুতরাং কে কোথায় গবেষণা করছেন বলা কঠিন। পেঙ্গুইন থেকে মৈত্রেয়ী চৌধুরীর বই ‘দি হাংরিয়ালিসটস’ বেরোবে এই বছর । আগামী বছর রাহুল দাশগুপ্ত আর বৈদ্যনাথ মিশ্রর সম্পাদনায় বেরোবে ‘লিটারেচার অফ দি হাংরিয়ালিস্টস’ । সমীরণ মোদক আমার সম্পাদিত ‘জেব্রা’ পত্রিকা সংকলিত করছেন, ‘হাংরি আন্দোলকারীদের চিঠি’ নামে একটা সংকলন বের করার তোড়জোড় করছেন।
জয়িতা: সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা প্রশাখা নিয়ে নানা কাজ করেছো । কোনো বিশেষ বিষয় নিয়ে কাজ করবার ইচ্ছে আছে ?
মলয়: আপাতত একটা উপন্যাস লেখার কথা ভাবছি । বাউল যুবক যুবতী জুটিকে নিয়ে, যারা তারুণ্যে একজন নকশাল আর একজন কংশাল ছিল । কিন্তু তাদের ঘিরে যে চরিত্ররা থাকবে সেই লোকগুলোকে গড়ে তুলতে পারছি না, সুরজিৎ সেনের ‘ফকিরনামা’ বইটা পড়ে আইডিয়াটা এসেছে মাথায়, কিন্তু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নেই বলে এগোইনি । এতেও যুবতীর বয়স যুবকের চেয়ে বেশি। পরস্পরকে মা-বাবা বলে ডাকে । সরসিজ বসু অনুরোধ করেছেন একটা গদ্য তৈরি করতে বর্তমান ভারতের জাতীয়তা, দেশপ্রেম, দাঙ্গা, গরুর মাংস খাওয়া, নিম্নবর্গের মানুষকে কোনঠাসা করার চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে । ‘বসুধৈব জিঙ্গোবাদম’ নিয়ে লিখেছি । ওকে আরেকটা লেখা দিয়েছি, ‘কফিহাউস - অন্তর্ঘাতের পলিমাটি’ নামে, অন্য একটা পত্রিকায় । আশি পেরোতে চললুম, আর বিশেষ কিছু লিখতে ভাল্লাগে না । একঠায় কমপিউটারে বসে থাকতেও তো পারি না ।
জয়িতা :তোমাকে প্রাচীন স্পার্টান বীরের মতো মনে হয় ।এই যে নানা ঘাত প্রতিঘাত নিন্দে মন্দ সব কিছুকে অবজ্ঞাভরে কেবল কাজ করে যাওয়া ,এই জীবনিশক্তির মূলমন্ত্র কি। অনুপ্রেরণাদাতা বা দাত্রী কে ?
মলয় : হলিউড-বলিউডের ফিল্ম দেখে বলছিস বোধহয়, সিলভিস্টার স্ট্যালোনের র্যামবো, থর-এর নায়ক, গ্ল্যাডিয়েটরের নায়ক, নাকি ? কোমরে দড়ি আর হাতে হাতকড়া পরে সাতজন ক্রিমিনালের সঙ্গে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার পর, ‘ক্ষুধার্ত গোষ্ঠী’ আমার বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়াবার পর, নিন্দে-মন্দ গায়ে লাগে না, লিখেও তো কতো লোকে গালমন্দ করে, বিশেষ করে রাজসাক্ষীদের ছেড়ে যাওয়া ‘ক্ষুধার্ত গোষ্ঠীর’ চেলারা । যখন লেখা আরম্ভ করেছিলুম তখন কুলসুম আপা, নমিতা চক্রবর্তী, বাড়ির চাকর শিউনন্নি, বাবার দোকানের কাজের লোক রামখেলাওন সিং ডাবর ছিল, শেষের দুজন রামচরিতমানস আর রহিম কবির দাদু থেকে কোটেশান ঝেড়ে আমাদের বকুনি দিতো , ব্যাপারগুলো ‘ছোটোলোকের ছোটোবেলায়’ লিখেছি । আমার লেখালিখি নিয়ে আমার স্ত্রী আর ছেলের কোনো আগ্রহ নেই ; মেয়ের আছে, কিন্তু তার হাতে সময় একেবারে নেই, সম্প্রতি সেরিব্রাল স্ট্রোক হয়েছিল । বস্তুত অনু্প্রেরণা বলে সত্যিই কি কিছু হয় ? আমার তো মনে হয় আমি নিজেই নিজের অনুপ্রেরণা, রাস্তায় হাঁটার সময়ে অনুপ্রেরণা মগজে জমতে থাকে।
জয়িতা : তোমার বর্তমান যাপন সম্পর্কে তোমার অনুরাগী পাঠকসমাজকে কিছু জানাও।
মলয়: আমার অনুরাগী পাঠক সত্যিই আছে ? মনে তো হয় না । আমি প্রথমে উঠি, স্ত্রী দেরিতে কেননা ওর রাতে ঘুম হয় না, রাতে উঠে হোমিওপ্যাধি ওষুধ খায় । দাঁত ব্রাশ করে ফ্রি হ্যাণ্ড এক্সারসাইজ করি, ফিজিওথেরাপিস্টের শেখানো । এক গেলাস গরমজল খাই যাতে পেট পরিষ্কার হয় । ব্রেকফাস্ট বানাই, ওটস । তারপর ইজিচেয়ারে কিছুক্ষণ বসে টাইমস অফ ইনডিয়া পড়ি । আমার পাড়ায় বাংলা সংবাদপত্র পাওয়া যায় না, এটা গুজরাটি ফাটকাবাজদের এলাকা, একটা ফাইনানশিয়াল টাইমস কিনে দশজন মিলে শেয়ারের ওঠানামা পড়ে । আমি কখনও শেয়ার-ফেয়ার কিনিনি, তাই কোনো উৎসাহ পাই না ওনাদের সঙ্গে গ্যাঁজাতে । হকারকে বললে চারদিনের বাংলা কাগজ তাড়া করে একদিন দিয়ে যায়। নতুন যে লিটল ম্যাগাজিন আগের দিন পেয়েছি সেটা পড়ি । ফিজিওথেরাপির পর চা বানাই, গ্রিন টি । ততক্ষণে স্ত্রী উঠে ওটস ভাগাভাগি করে আর আপেল বা কিউই বা যে ফল হোক কাটে । আমি খেয়ে নিই । স্ত্রী এগারোটায় ব্রেকফাস্ট করে । তারপর বাজার যাই । মাছ-মাংস আর মাসকাবারি চাল-ডাল-তেল-মশলা কেনার থাকলে ফোন করে দিলে দিয়ে যায় । ফিরে এসে এগারোটা নাগাদ কমপিউটারে বসি আর ভাবি । ফেসবুক খুলে, জিমেল খুলে, চোখ বুলিয়ে নিই । তারপর বই আর পত্রিকা পড়ি । একটায় স্নান, খাওয়া, ঘুম । তিনটের সময়ে উঠে টিভিতে ফুটবল খেলা দেখি, ইউরোপের, ভারতের থাকলে ভারতের । সাড়ে চারটের সময়ে বিবিসি । ছয়টা থেকে আটটা কমপিউটারে লেখালিখি আর সিঙ্গল মল্ট খাওয়া, এখন যদিও আর খাই না । তারপর রুটি তরকারি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোবার চেষ্টা আর সেই ফাঁকে লেখার সম্পর্কে চিন্তাভাবনা, কেননা ঘুম আসতে দেরি হয় । অনেক সময়ে আমার ছেলের বউ রিয়াধে বসে সুইগি কিংবা ফুড পাণ্ডাকে অর্ডার দিয়ে দেয় আমাদের জন্য, বিরিয়ানি, মিষ্টি দই, নলেন গুড়ের সন্দেশ ইত্যাদির । ফোন বন্ধ করে দিই, যাতে কেউ ঘুমের দফারফা না করে ।
জয়িতা :আজকাল কবিতাকে দশক হিসেবে ক্যাটিগোরাইজ করা হচ্ছে ; জেলা ও বিষয় ভিত্তিক ক্যাটিগোরাইজ করা হচ্ছে । কতটা প্রাসঙ্গিক বলে তোমার মনে হয় ?
মলয়: এটা এই সময়ের ব্যাপার । সময় আপনা থেকে ঝরিয়ে দেবে যারা প্রাসঙ্গিক নয়, তাদের । প্রতিটি জেলায় কবিদের সংখ্যা তো কম নয় । হয়তো অমন সংকলন বেরোলে জানা যাবে তাদের ওপর জেলা-বিশেষের কথ্যভাষা আর ভূপ্রকৃতির প্রভাব পড়েছে কিনা । আমি নিজে তো জানি না আমি কোন জেলার । পূর্বপুরুষ লক্ষ্মীকান্ত এসেছিলেন যশোর থেকে কলকাতায়, তাঁর বংশধররা বেহালা-বড়িশায় ঘাটি গাড়েন । একজন শরিক ১৭০৩ সালে নদীর এপারে উত্তরপাড়ায় চলে আসেন, আমি তাঁর বংশধর । উত্তরপাড়ার জমিদার বাড়ি ভেঙে আবাসন হয়েছে, আমি আমার শেয়ার বেচে দিয়েছি । তারপর ছিলুম নাকতলায় । নাকতলার ফ্ল্যাট বেচে চলে এসেছি মুম্বাই ; বইপত্র আর আসবাব বিলিয়ে দিয়েছিলুম নাকতলায় । যে বাসা আমি একবার ছেড়েছি, সেখানে আর দ্বিতীয়বার ফিরে যাইনি । আমি একই ঘরে, একই বাড়িতে, একই পাড়ায়, একই শহরে, সারাজীবন কাটাইনি।
জয়িতা :অনুকবিতা সাহিত্যপত্র গুলির নতুন আবিষ্কার । তোমার কি মতামত ? কবিতাকে কি সম্পাদক শব্দসীমায় বেঁধে দিতে পারে? কবি অসহায় বোধ করে অনেক সময়ই ।
মলয় : এটাও কবির সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে ঘটছে, অনেককে জায়গা দেয়া যায় অনুকবিতা পত্রিকায় । যে কবি অসহায় বোধ করে তার তো লেখাই উচিত নয় অমন সংকলনে । তবে চীনা আর জাপানি কবিতার প্রভাবে এজরা পাউন্ড ‘ইমেজিজম’ নামে অনুকবিতার আন্দোলন করেছিলেন । In a Station of the Metro নামে ওনার একটা দুই লাইনের কবিতা আছে, যাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুকবিতার মান্যতা দেয়া হয়েছে, কবিতাটা শোন
The apparition of these faces in the crowd ;
Petals on a wet, black bough.
জয়িতা : তোমার আন্তর্জাতিক যোগসুত্র বিশ্ব পরিচিতি সম্পর্কে বলো ।এখানকার পাঠকদের জানা দরকার। কোন বিদেশী সাহিত্যিকের সঙ্গে আলাপিত হয়ে মুগ্ধ হয়েছো ? কার বন্ধুত্ব নিবিড় হয়েছে । এখন বিদেশে তোমার রচনা নিয়ে বাংলা প্রেমী বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা কতটা সচেতন ?
মলয় : হাংরি আন্দোলনের সময়ে হাওয়ার্ড ম্যাককর্ড, ডিক বাকেন, অ্যালেন গিন্সবার্গ, লরেন্স ফেরলিংঘেট্টি, মার্গারেট র্যানডাল, ডেইজি অ্যালান, ক্যারল বার্জ, ডায়না ডি প্রিমা, কার্ল ওয়েসনার, অ্যালান ডি লোচ প্রমুখের সঙ্গে পরিচিত ছিলুম । অ্যারেস্ট করার সময়ে পুলিস ওনাদের চিঠিপত্রের ফাইল নিয়ে চলে গিয়েছিল, আর ফেরত পাইনি । এখন মাঝে-মাঝে প্রিন্ট বা মিডিয়ার সাংবাদিকরা যোগাযোগ করেন, সাক্ষাৎকার নিয়ে যান । স্কটল্যাণ্ডের একটা সংবাদপত্রের পক্ষে নিকি সোবরাইটি নামে এক তরুণী সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন । বিবিসির পক্ষ থেকে দুবার, একবার জো হুইলার আর আরেকবার ডোমিনিক বার্ন সাক্ষাৎকার নিয়ে গেছেন । ড্যানিয়েলা লিমোনেলার কথা আগেই বলেছি, যাঁকে আমার স্ত্রীও ভালোবেসে ফেলেছে, ড্যানিয়েলা বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, জার্মান, ইতালিয়ান বলতে পারে, হাত দিয়ে ভাত খায় আমাদের বাড়ি এলে । আমি আর নিজে থেকে কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করি না । জার্মানি থেকে স্হানীয় আর্টিস্ট শিল্পা গুপ্তাকে নিয়ে এসেছিলেন মাইলিওন ; ওনারা একশো কবির প্রদর্শনী করছেন পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে, আমার কবিতাটাও অন্তর্ভুক্ত করেছেন । শিল্পা গুপ্তাই আমাকে ছবি আঁকার নানা রকম রঙ, ব্রাশ, পেনিল ইত্যাদি পাঠিয়েছেন, তাই দিয়ে ছবি আঁকছি, দেখেছিস তো? ব্লগে পাঠকের সংখ্যা থেকে মনে হয় নানা দেশ থেকে অনেকেই টোকা মেরেছে কিন্তু তাদের মধ্যে কতোজন পড়েছে বলতে পারব না ।
জয়িতা : কবিতা প্রথম কবে লিখেছ? কেন? সমীরদা লিখতেন বলে?
মলয় : ১৯৫৮ সালে বাবা একটা সুন্দর ডায়েরি দিয়েছিলেন, তাতে লেখা আরম্ভ করি, ইংরেজিতেও লিখতুম । দাদা আমার পরে লেখা আরম্ভ করেছিল । তবে ওই ডায়রি থেকে কবিতা নিয়ে দাদা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে দিতে, উনি কৃত্তিবাস পত্রিকায় ১৯৫৯ সালে প্রকাশ করেছিলেন । সুনীল তখন পাটনার বাড়িতে আসতেন । পরে হাংরি আন্দোলনের জন্য চটে গিয়েছিলেন । ‘যুগশঙ্খ’ পত্রিকার জন্য বাসব রায়কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ‘মলয় ইচ্ছে করে আমার আমেরিকাবাসের সুযোগটা নিয়েছিল।”
জয়িতা: হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে বিস্তারে না গিয়েও সেই সময়কার কবিতার ডিক্সান কি কোনোভাবে নিকোনার পারার বা বিট আন্দোলনের প্রভাবিত?
মলয় : তখনও আমি ওনাদের কবিতা পড়িনি, নামই শুনিনি । বিদেশি কবি বলতে রোমান্টিক ব্রিটিশ কবিদের পড়েছিলুম । আমার কবিতায় ইমলিতলার মগহি আর ভোজপুরি ডিকশানের প্রভাব থাকতে পারে ; ফণীশ্বরনাথ রেণু, যিনি বাংলা জানতেন, এই কথাটা বলেছিলেন । বিটদের বইপত্র লরেন্স ফেরলিংঘেট্টি পাঠিয়েছিলেন অ্যালেন আমেরিকা ফিরে যাবার পর । আর বিটদের সকলের কবিতা আর গদ্য একই রকম নয়, সকলের রচনাতেই যৌনতা থাকে না । তাছাড়া নিকানর পাররার মতন কবিতা বিটরা লেখেনি । হাংরি আন্দোলনেও আমরা একজন আরেকজনের মতন কবিতা ও গদ্য লিখিনি । ‘ক্ষুধার্ত গোষ্ঠীর’ কবি-লেখকরা সিপিএম করা আরম্ভ করে লেখার ধারা পালটে ফেলেছিলেন । শ্রুতি আন্দোলনে কংক্রিট পোয়েট্রির প্রভাব কিছুটা ছিল বিশেষত পরেশ মণ্ডলের কবিতায় কিন্তু তাঁরাও একই রকমের কবিতা লেখেননি ।
জয়িতা : প্রথম পর্বের কবিতার সঙ্গে এখন যে কবিতাগুলো লিখছ তার শৈলীতে যে পরিবর্তন এসেছে সে সম্পর্কে বলো। প্রথম পর্বের কবিতায় একটা নাড়িয়ে দেওয়া ঝাঁকুনি দেওয়া ব্যাপার ছিলো । তার সিনট্যাক্স ,ডিক্সন স্ট্রাক্চার ছিলো অভূতপূর্ব। দ্বিতীয়পর্বে এসেছ মাঝে অনেকটা সময়,অভিজ্ঞতা ,সংসার ....কবিতা মাঝসমুদ্রের মতো গভীর ও সমাহিত।মিল নেই তবু চেনা যায় এ কবিতা র কবি কে। এই বিষয়ে কিছু বলো ।
মলয় : সে সময়ে কবিতায় টেসটোসটেরন, অ্যাড্রেনালিন থাকত, নিজেদের পত্রিকা আর বুলেটিনে বেরোতো, উদ্দাম নেশা আর যৌনতার ঘনঘটা ছিল । এখন অভিজ্ঞতার আর পড়াশুনার দরুন কবিতায় বদল এসেছে, আপনা থেকেই । যে দেড় দশক লিখিনি, সেই সময়ে প্রচুর পড়াশুনা করেছি । সব বিষয়ে বই পড়তুম।
জয়িতা :বাংলায় উত্তরাধুনিক কবিতা কি লেখা হয় ?
মলয় : হয় তো । উত্তরাধুনিক বলতে যে বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয় তা হাল আমলের বেশির ভাগ কবির রচনায় পাওয়া যাবে । অনেক তরুণ-তরুণীর কবিতায় বিস্ময়কর পংক্তি-কারিগরি দেখতে পাই ; বস্তুত ঈর্ষা হয় তাদের কবিতা পড়ে । বারীন ঘোষাল, অলোক বিশ্বাস, প্রণব পাল, ধীমান ভট্টাচার্য প্রমুখের কবিতা পড়লে টের পাবি ।
কিন্তু পোস্টমডার্ন নামের দার্শনিক তত্বের সঙ্গে পোস্টমডার্ন সাহিত্যের সম্পর্কে নেই । পোস্টমডার্ন সাহিত্য মূলত আঙ্গিকের প্রাধান্যের ব্যাপার । ঠিক যেমন আধুনিক কবিতার সঙ্গে মডার্নিটির দর্শনের সম্পর্ক নেই ।
জয়িতা :তোমার পছন্দের কবি কারা (আন্তর্জাতিক ও বাংলা সাহিত্যে)
মলয় : বাংলায় বিনয়, ফালগুনী, কেদার ভাদুড়ি, জহর সেনমজুমদার, প্রদীপ চৌধুরীর চর্মরোগ, মণীভূষণ, যশোধরা, মিতুল, হেলাল হাফিজ, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ প্রমুখ । সব নাম এক্ষুনি মনে পড়ছে না । বিদেশি পল সেলান, সিলভিয়া প্লাথ, মায়া অ্যাঞ্জেলু, জন অ্যাশবেরি, আমিরি বারাকা, ইভস বনেফয়, জ্যাক দুপাঁ প্রমুখ । আর বলছিনা, তুই প্রভাব খুঁজবি ।
জয়িতা : হাংরি আন্দোলন আর তোমাকে নিয়ে বাংলা আর ইংরেজিতে গবেষণা হচ্ছে । এতে তোমার গর্ববোধ হয় ? নাকি যা চাইছিলে তা পেয়ে গেছো বলে মনে হয় ?
মলয় : আমার কিছুই হয় না । যারা আক্রমণ করতেন তাঁদের বিরক্তি হয় বলে মনে হয় । কিছুদিন আগে প্রতিদিন পত্রিকায় অরুণেশ আর আমার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল কমল চক্রবর্তী, হাংরি আন্দোলনকারীদের প্রশ্রয় দিলেও তারা ওর বেদনার কারণ হয়েছে । সত্যি কথা বলতে কি আমার আর অরুণেশের কাব্যগ্রন্হ অত্যন্ত বাজে নিউজপ্রিন্টে ছেপেছিল, কভারও ফালতু করেছিল, তাই আমাদের মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল, যখন কিনা ওদের নিজেদের বইগুলোর প্রোডাকশান দারুণ হয়েছিল । যাকগে, আর তো নিজের বইপত্তর রাখি না, সব বিলিয়ে দিই ।
জয়িতা : উচ্চারণ না অক্ষর কোনটা মানা উচিত ছন্দের ক্ষেত্রে।
মলয় : আমি তো মাত্রা গুণে লিখি না । উচ্চরণ অনুযায়ী লিখি ।
জয়িতা: তুমি বিদেশী কবিতা পড়ে আপডেটেড হতে বলো কিন্তু কবিতায় ষোলোয়ানা বাঙালি সেন্টিমেন্ট তার নিজস্ব ডিক্সনেরও কি প্রয়োজন নেই।সেই রূপান্তর কে অনুসরণ বা নকল বলা যায়কি? যেটা জীবনানন্দ বা অনেককেই শুনতে হয়েছে ।
মলয় : বিভিন্ন ভাষার সাহিত্য পড়লে জানা যায় যে পৃথিবীর ভাষা সামগ্রিকভাবে কোনদিকে যাচ্ছে । নকল করার দরকার হয় না ।
জয়িতা: কবিতা ও গল্পে প্রান্তিক ভাষার সংলাপ ব্যবহার তোমার সময় বেশি লোক করেনি।কী ভাবনা কাজ করেছে এর পেছনে।
মলয় : সেসময়ে কলকাতাকেন্দ্রিক লেখকরা লিখতেন । পরে মফসসলের লেখকরা লেখা আরম্ভ করলে প্রান্তিক ভাষার প্রবেশ ঘটে । সুবিমল বসাক ১৯৬৫ থেকেই প্রান্তিক ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন । রবীন্দ্র গুহ আর অরুণেশ ঘোষও প্রান্তিক ভাষাকে ওনাদের গল্পে এনেছেন ।
জয়িতা : সাহিত্যে যৌনতা এসেছে শিল্প হয়ে কিন্তু একদম নগ্ন ও আপোষহীন। পাঠক চমকে উঠেছে। যা বিছানায় যা জৈবিক তাকে সৃজনেও ঠিক সেইভাবেই আনা প্রয়োজন এটা তোমরাই করেছ। আমি তোমার কথাই বলবো। সাহিত্যে যৌনতা উন্মুক্ত ও আলোকিত হয়েছে নানাভাবে কখনো চরিত্রের মধ্যে কখনো কবিতা বা আত্মকথায়, বিশেষ করে 'অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা' উপন্যাসে । সে ব্যাপারে কিছু বলো।
মলয় : যৌনতা অনেককাল থেকেই ছিল সংস্কৃত আর বাংলা সাহিত্যে । ইভানজেলিকাল পাদরিরা স্কুল-কলেজের সিলেবাসে মাথা গলানোর পর আর তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজ গড়ে ওঠার পর যৌনতা নিয়ে দোনামোনা আরম্ভ হয়েছিল । তারপর ব্রাহ্মদের প্রভাব, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের । সাহিত্য যখন মধ্যবিত্তের আওতা থেকে বেরোলো তখন যৌনতা নিজের স্বাভাবিক চরিত্র পেলো ।
জয়িতা : তুমি সলিলাদির সঙ্গে পরিচয়ের পরের দিনই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলে আর উনি তক্ষুনি রাজি হয়ে গিয়েছিলেন, সলিলাদের অভিভাবকরা ইতস্তত করছিলেন বলে তোমরা নাকি পালিয়ে যাবার টিকিট কেটে ফেলেছিলে । তার পর এক সপ্তাহেই বিয়ে সেরে বউকে নিয়ে পাটনায় ফিরলে । তোমার অবাক লাগেনি ওনার তখনই রাজি হয়ে যাওয়ায় ? তোমার বাবা-মা কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাননি ?
মলয় : না, সলিলা ছিল হকি খেলোয়াড়, ডিসিশন নিয়েছিল স্পোর্টসগার্লের মতনই । তাছাড়া ওর বাবা-মা ছিলেন না । মামার বাড়ির বাঁধন ছিঁড়ে চলে যেতে চাইছিল । মামারা দোনামোনা করেছিলেন সলিলার মাইনে ওনাদের সংসারে কাজে দিতো। আমরা তো দুজনে নাগপুর ছেড়ে চুপচাপ পাটনায় চলে যাবার টিকিট কেটে ফেলেছিলুম, কিন্তু তা করলে ওর অফিস থেকে ছুটি নিতে হতো, বিয়ের প্রমাণ না দিলে পরে ট্রান্সফারের সমস্যা হতো, ও চাকরি ছাড়তে চায়নি ; তুই তো স্কুলে পড়াস, মেয়েদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়াটা কতো জরুরি তা জানিস । সলিলার মামাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছিল দুদিন পরেই । ওরা বিয়ে করে উঠল আর আমরা সেই পিঁড়িতে বসে পড়লুম । আমি আমার বিয়ে নিয়ে একটা লেখা তৈরি করছি, অজিত বই করে বের করবে । বাবা-মা তো বউ পেয়ে যাকে বলে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন । মা বলেছিলেন সিঁদুর পরিয়ে বাড়ি আনলেই হবে, আচার-টাচারের দরকার নেই । সত্যই বিয়ের আচার বলতে যা বোঝায় তা সম্ভব হয়নি । পাটনায় ফিরে তো কিছুই হয়নি ।
জয়িতা: বিয়ে করে তুমি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে চলে গেলে এআরডিসি লখনউ, সেখান থেকে মুম্বাই নাবার্ডে, তারপর কলকাতার নাবার্ডে। এতো পরে কলকাতায় এসে তোমার কি মনে হলো যে হাংরি আন্দোলনের দিনগুলো আর নেই ।
মলয় : লখনউ যাবার পরেই আমি ভারতের গ্রামসমাজের সঙ্গে পরিচিত হলুম । তার আগে চাষবাস, কলকারখানা, তাঁত, ছুতোরের, কামারের, হাতের কাজের মজুরের ব্যাপারে কিছুই জানতুম না । কতোরকমের গোরু, ছাগল, শুয়োর, উট হয় জানতুম না ; তাদের ব্রিডিং সম্পর্কেও জানতুম না । সারা ভারত ঘুরেছি অফিসের টাকায়, পশুগুলোও এক এক জায়গার এক এক রকম । শেষদিকে আমি সলিলাকেও সঙ্গে নিয়ে যেতুম, যখন ও চাকরি ছেড়ে দিলো, যাতে পরিবারগুলোর বাড়ির ভেতরের অবস্হা জানতে পারে । সব অভিজ্ঞতা উপন্যাস আর প্রবন্ধ লেখায় কাজে লাগিয়েছি । হ্যাঁ, যখন ফিরলুম তখন পশ্চিমবাংলার সমাজ নানা দিক থেকে পালটে গিয়েছিল । আমি ‘আরেকবার ক্ষুধিত পাষাণ’ নামে একটা প্যাশটিশ লিখেছি, সাঁইবাড়ির হত্যাকাণ্ড নিয়ে । ঝুমা চট্টোপাধ্যায় ভাঙা আর বন্ধ সাঁইবাড়ির প্রচুর ফোটো তুলে পাঠিয়েছিলেন, সেগুলো দেখে আইডিয়াটা হলো। অনেকে লেখে আমি সরকারি চাকরি করতুম ; ধারণাটা ভুল । সরকারি চাকরি করলে ফাইনান্স কমিশন যখন সরকারি কর্মীদের মাইনে আর পেনশন বাড়িয়ে দেয়, তখন আমার বাড়ে না, সরকার কর্মী নই বলে । পেনশন সেই ১৯৯৭ সালে যা ছিল সেখানেই আটকে আছে ।
জয়িতা : তুমি বাংলা সিরিয়াল দ্যাখো ? ফিল্ম দ্যাখো ?
মলয় : সলিলা কোনো-কোনো বাংলা সিরিয়াল দেখে, পছন্দ না হলে অন্য সিরিয়ালে চলে যায় । আমিও খেতে বসে দেখি যেগুলো সেসময়ে সলিলা দেখে । আমার মনে হয় যারা বাংলায় কথা বলে তাদের সঙ্গে আমাদের দুজনের যোগাযোগ বাংলা সিরিয়ালের মাধ্যমে । এখানে সারাদিনে বাংলায় কথা বলা আর শোনার সুযোগ নেই। ইউ টিউবেও বাংলা কবিতাপাঠ বা শর্টফিল্ম দেখি । কিন্তু আমার কমপিউটারটা এতো পুরোনো যে প্রায় কিছুই শোনা যায় না । ইনবক্সে গাদাগাদা ভিডিও পাঠায় অনেকে, কিছুই শোনা হয়ে ওঠে না । কমপিউটারের সামনে ঝুঁজে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারি না । সিনেমা হলে প্রায় চল্লিশ বছর যাইনি ।
No comments:
Post a Comment