Wednesday, July 28, 2021

হাংরি আন্দোলন-এর কবি সমীরণ ঘোষ সম্পর্কে রাজা সরকার লিখেছেন

 হাংরি আন্দোলন-এর কবি সমীরণ ঘোষ সম্পর্কে রাজা সরকার লিখেছেন :

  • রক্তবীজ
    ব্যক্তিগতভাবে আমার একটা হিসেব আছে যে, জীবনানন্দ দাশ মৃত্যুর বছর কুড়ি পর আবার ফিরে এসেছিলেন কলকাতায়। যেমন ফাল্গুনী রায় ফিরে এসেছিলেন মৃত্যুর পনের বছর পর শিলিগুড়ির কলেজ পাড়ায়। এমন আরও অনেকেই হয়তো ফিরে ফিরে এসেছিলেন। আমি, আমার জানা সকল প্রয়াত কবির তালিকা এখন দিচ্ছিনা। দিচ্ছি শুধু একজনের; তিনি সমীরণ ঘোষ। মৃত্যুর আট বছর দুইশ একুশ দিন পর তিনি ফিরে এসেছেন। ফিরে এসেছেন ডুয়ার্সের বানারহাট সংলগ্ন কলাবাড়ি নামক স্থানে। সেখানে দিবাকর ভট্টাচার্য্য নামে এক প্রবীণ সাহিত্যকর্মীর সংগে তার দেখা হয়েছে। তিনি ফোনে আমাকে জানিয়েছেন।
    দিবাকর ভট্টাচার্য্য তার জীবৎকালের এক পর্যায়ে হাঁটতে হাঁটতে এক প্রান্তিকতম বিন্দুতে এসে এই সময় দাঁড়িয়ে আছেন। তার হাতে একটি কাব্যগ্রন্থ, যার নাম রক্তবীজ, প্রণেতা সমীরণ ঘোষ। সেই কাব্যগ্রন্থ পাঠ করতে করতে হঠাৎ থেমে গিয়ে দিবাকর আমাকে ফোন করলেন। ফোন করে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। কান্না সংবরণ করতে করতে বলতে লাগলেন---রাজা, সমীরণের এই বইটার মুদ্রক ও প্রকাশক ছিলাম আমিরে--- কতকাল আগের কথা---ঠিকমত ওর পাণ্ডুলিপি পড়েছিলাম কি না আজ আর মনে নেই, পড়ে থাকলেও ভুলে গেছি---কিন্তু আজ সেই লেখা পড়ছি, পড়ে দেখছি---কী সব কবিতা লিখেছিলো সমীরণ---এত বছর পার হয়ে গেল---এই সব কবিতার,এইরকম একটি বইয়ের খোঁজ হয়নি কেন এতকাল---এ কি আমাদের ব্যর্থতা নয় ! এ তো বাংলা কবিতার পাঠক হিসেবে আমাদের ব্যর্থতা! বইটি আমি এখন বুকে জড়িয়ে ধরে আছি।
    এমন এক ফোনালাপ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমি শুনতে পারছি সমীরণ তার হাস্‌কি গলায় হাসছে আর দিবাকরকে বলছে---নে হয়েছে, এখন ছাড় ছাড়---।
    এই পর্যন্ত শুনে আমি মনে মনে এই সকল বিস্মরণের পথরেখা দেখতে দেখতে ভাবলাম একটা বয়সের পর কান্নাকে বোধ হয় আর আটকানো যায় না। দিবাকর আর একটু কাঁদুক।
    সমীরণের 'রক্তবীজ' কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছিলো ১৯৮৫ সনে। দিবাকর ভট্টচার্য্য'র যুক্তপ্রয়াস প্রিন্টার্স,আলিপুরদুয়ার থেকে। স্বভাবতই ধরা যায় কবিতাগুলো হয়তো লেখা হয়েছিলো সেই আশির দশকের প্রথম ভাগে। ঠিক সেই সময়ের পথরেখা ধরে এগুতে থাকলে চোখে পড়বে শিলিগুড়ির এক যুবককে। যে দুপুরের খর রোদ বা ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকল পরিতাপ ও স্নেহের ভাণ্ড উপুড় করে পরিক্রমা করে চলেছেন তার পেশাজীবনের পথ। তারজন্য সেদিন জীবনের এমন কোনো আয়োজন ছিলো না যা দিয়ে তাঁর সেদিনের ক্লান্তি ও শ্রম জড়ানো পদবিক্ষেপগুলো দুদণ্ড সুস্থিরতা পায়। তাঁর কবিতা-ভাষার জন্মের জন্য এমনই এক জীবন সে প্রাপ্ত হয়েছিলো।
    'রক্তবীজ' সমীরণের অন্যতম একটি কাব্যগ্রন্থ। গ্রন্থিত অগ্রস্থিত সকল কবিতা নিয়ে তাঁর একটি কবিতাসমগ্র এখন সময়ের আকাঙ্ক্ষা। সমীরণ তনয় সব্যসাচীর সংগে কথাপ্রসঙ্গে জানা গেল সমীরণের গদ্যরচনাগুলোকে একত্রিত করে একটি গদ্যগ্রন্থও প্রকাশ করা যায়। আমি আশা করব অকাল প্রয়াত সমীরণ আবার তাঁর কবিতার সঙ্গে বার বার ফিরে ফিরে আসুক।




Thursday, July 22, 2021

হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুমিতাভ ঘোষাল

 


হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুমিতাভ ঘোষাল 

( ‘গদ্য-পদ্য সংবাদ’ পত্রিকায় ১৯৮৬ অক্টোবরে প্রকাশিত )

সুমিতাভ : ষাটের দশকের হাংরি আন্দোলনের সঙ্গে আপনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগ কতোটা ?


সুনীল : হাংরি আন্দোলনে আমার কোনো ভূমিকা ছিল না । আমি তখন কৃত্তিবাস নামে একটা পত্রিকার সম্পাদনা করতুম । কৃত্তিবাসের থেকে কয়েকজন এই আন্দোলন শুরু করে । এদের মধ্যে প্রধান ভূমিকা প্রথমে নিয়েছিল মলয় রায়চৌধুরী, সে ছিল আমার বন্ধু সমীর রায়চৌধুরীর ছোটো ভাই । সমীর রায়চৌধুরী কৃত্তিবাসের একজন লেখক এবং ওই গোষ্ঠীরই একজন । মলয়েরও কিছু কিছু লেখা কৃত্তিবাসে বেরিয়েছিল ।


সুমিতাভ : আচ্ছা শক্তি চট্টোপাধ্যায় তো... ( কথায় বাধা দিয়ে )

সুনীল : হ্যাঁ, তারপরে মলয় প্রথমে শুরু করার পর শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাতে যোগ দেয় এবং পরে উৎপলকুমার বসু, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ও পরিচিতদের মধ্যে অনেকে আসেন  । এইভাবে হাংরি আন্দোলন শুরু হয় ।  কিন্তু এই আন্দোলনের কোনো ইস্তাহার বা কোনো ব্যাপারে আমার কোনো নাম ছিল না বা আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না । 


সুমিতাভ : হাংরি আন্দোলনকে কি আপনি একটা আদৌ সাহিত্য আন্দোলন বলে মনে করেন ?


সুনীল : হাংরি আন্দোলন তো সাহিত্যের আন্দোলন হিসেবেই শুরু হয়েছিল । কতোটা সাহিত্য তারা সৃষ্টি করতে পেরেছিল, সে বিষয়ে আমি কোনো মতামত দেব না । সেটা এখনকার যারা পাঠক তারাই বিচার করবে । তবে নতুন কোনো একটা সাহিত্য তারা সৃষ্টি করতে পেরেছিল এটা ঠিক । 


সুমিতাভ : তখনকার সাহিত্যে এই আন্দোলনের কোনো প্রতিচ্ছবি পড়েছিল কি?


সুনীল : দুটো ব্যাপার হয়েছিল । একটা হয়েছিল কী হাংরি আন্দোলনের যারা প্রধান তারা কিছু কিছু পত্র পত্রিকায় লিফলেট ইত্যাদি ছাপাতে শুরু করে । এই সাহিত্যকে বদলাতে হবে ; অন্যরকম সাহিত্য সৃষ্টি করে পুরোনো মূল্যবোধকে নষ্ট করে দিতে হবে  ইত্যাদি ।


সুমিতাভ : না, সাহিত্যে এর কোনো প্রতিচ্ছাপ পড়েছে কি ?

সুনীল : না । আমি বলব সাহিত্যে এর কোনো ছাপ পড়েছে বলে আমি মনে করি না । তবে এটা একটা গোষ্ঠী, অন্যরকম সাহিত্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিল । তবে অ্যাবরাপ্টলি এই আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায় । তবে এতোদিন বাদে আবার সেসব নিয়ে আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি । মাঝখানে দশ বছর হাংরিদের সম্পর্কে কথাবার্তা শুনিনি । ( এই দশ বছর মলয় রায়চৌধুরী কলকাতার সাহিত্য জগতের বাইরে ছিলেন, বুলেটিন প্রকাশ করার জন্য টাকা তিনিই দিতেন )।


সুমিতাভ : ট্রাডিশানাল বাংলা সাহিত্যকে কোনোভাবেই এরা একটুও বদলাতে পেরেছিল কি ?


সুনীল : সেটা তো আমি বলতে ওপারব না । হাংরিদের যারা প্রথান, যেমন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, এরা হাংরি আন্দোলনের মাঝামাঝি অবস্হায় এর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান ।  যখন এই নিয়ে কোর্টে কেস হয়, তখন এরা বিবৃতি দেয় যে, আমাদের সঙ্গে হাংরির কোনো সম্পর্ক নেই । ওদের লেখা আমার মনে হয় বাংলা সাহিত্যের মূল ধারার সঙ্গেই যুক্ত । আলাদাভাবে হাংরি আন্দোলনের কোনো প্রভাব আছে বলে আমি মনে করি না ।


সুমিতাভ : ক্ষমতাবান বেশ কছু লেখক থাকা সত্ত্বেও, হাংরি আন্দোলনের জীবৎকাল খুব অল্প । এর কারণ কি ?


সুনীল :  ক্ষমতাবান লেখকরা প্রথমে তাড়াতাড়ি সরে গেলেন । দ্বিতীয় কথা, এরা সিরিয়াসলি সাহিত্য রচনা করার বদলে এমন কিছু কাজ করতে লাগলেন, যেগুলো অনেকেরই বিরক্তি উদ্রেক করলো । যেমন ধরো এরা কাউকে জুতোর মালা পাঠিয়ে দিল । কাউকে একটা মুখোশ পাঠিয়ে দিল । বা কাউকে টেলিফোন করে বলল, আপনার ছেলে মারা গেছে, বাড়ি চলে যান । এইভাবে কিছু কিছু অল্প বয়সের চ্যাংড়ামি  --- এটা অনেকেই করে, অস্বাভাবিক কিছু নয়, কিন্তু এটাই যেন প্রধান হয়ে দাঁড়াল । লেখার মধ্যে তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করার করার জন্য অযথা এবং অকারণ অশ্লীলতা আনার চেষ্টা করল । আমি অবশ্য কোনো শব্দকেই অশ্লীল বলে মনে করি না । তথাকথিত অশ্লীলতা, তথাকথিত অশ্লীল শব্দ । বা আরেকটা ছিল, অন্যকে গালাগালি দেওয়া । এই সমস্ত দিকেই যেন তাদের মন বেশি গেল । অবশ্য অন্য লোকের অন্য মত থাকতে পারে ।


সুমিতাভ : হাংরি লেখাগুলোতে আত্মকামিতা জিনিসটার কোনো ভূমিকা আছে বলে মনে করেন?


সুনীল : তা, আত্মকামীতা মানে ধরো, আমরা কৃত্তিবাসে যেটা বলতাম, যে নতুন আধুনিক সাহিত্য বলতে আমরা কী বুঝতাম ?তখন আমরা বলতাম যে কৃত্তিবাসের মূল সুর হচ্ছে কনফেশন । স্বীকারোক্তিমূলক লেখা । আমরা যেভাবে জীবন যাপন করছি সাহিত্যে সেটাকে ঠিক সেভাবেই স্বীকার করে নেওয়া দরকার । হাংরিরা হয়তো তার থেকেও আরো এক্সট্রিম-এ চলে গিয়েছিল । তারা, যাকে বলে আত্মকণ্ডূয়ন, সেটার দিকে চলে গিয়েছিল । তবে আমার মনে হয় হাংরি আন্দোলনের মূল সুর কৃত্তিবাস ধারারই একটা অঙ্গ ।


সুমিতাভ : নকশাল আন্দোলনের প্রস্তুতিপর্ব, আর হাংরি আন্দোলন, মোটামুটি সমসাময়িক । এর কোনো বিশেষ তাৎপর্য আছে বলে আপনি মনে করেন ?


সুনীল : হাংরি আন্দোলনের মধ্যে রাজনীতি কিছু ছিল না । তবে ক্ষুধার ব্যাপারটা ছিল । তবে সেটা খাদ্য অভাবের যে ক্ষুধা, তা নয় বোধহয় । এটা বোধহয় অন্য কোনো ক্ষুধার কথা ওরা বলতে চেয়েছিল । নকশাল আন্দোলন অনেক ব্যাপক, অনেক মহৎ আত্মত্যাগ আছে । হাংরি আন্দোলন সেরকম কিছু একটা নয় ।


সুমিতাভ : হাংরি আন্দোলন শেষ হয়ে যাবার কম-বেশি পঁচিশ বছর পর, আবার একটা ক্ষুৎকাতর আবহাওয়া, বিশেষত ছোটো পত্র-পত্রিকাগুলোয় চোখে পড়ছে । এরকমটা কেন হচ্ছে বলতে পারেন ?


সুনীল : সেরকম কোনো আবহাওয়া আমার চোখে পড়ছে না । যা চোখে পড়ছে তা হলো হাংরিদের নিয়ে আবার লেখালিখি শুরু হয়েছে । কোনো কোনো পত্রিকায় এদের কেস টেস ছাপা হচ্ছে, হিস্ট্রিটাও ছাপা হয়েছে। মলয় রায়চৌধুরীকে বহুদিন নীরবতার পর আবার লেখালিখি করতে দেখছি ।


সুমিতাভ : সেটা এতদিন পরে হঠাৎ কি কারণে ?


সুনীল : আলাদা কোনো কারণ নেই । এটা নেহাতই কলকাতার ব্যাপার ।


সুমিতাভ : ধন্যবাদ । আমরা তাহলে উঠি…


সুনীল : তবে এটা বলছি, আমার সঙ্গে হাংরিদের সম্পর্ক এই যে আমি তাদের কোনো পত্র-পত্রিকায় লিখিনি । তাদের সঙ্গে আমার কোনো মানসিক মিলও ছিল না । আন্দোলনেও অংশ নিইনি । তবে যখন মামলা হয়, তখন আমার কাছে মলয় রায়চৌধুরী এসেছিল, যেন আমি তার হয়ে সাক্ষ্য দিই । আমি তার পক্ষেই সাক্ষ্য দিয়েছি । আদালতে দাঁড়িয়ে আমি বলেছিলুম, মলয় রায়চৌধুরীর কোনো কবিতায় আমি কোনো অশ্লীলতা খুঁজে পাইনি । আদালতে এটাই আমার সাক্ষ্য ছিল ।


সুমিতাভ : সেটা আপনি স্নেহের বশে করেছিলেন, না নিজের বিশ্বাসে ?


সুনীল : আমি পরে মলয়কে বাড়িতে বলেছিলাম, দেখ তোমার কোনো কবিতাকে যদিও আমি সার্থক কবিতা বলে মনে করি না, কিন্তু কেউ একটা কবিতার মধ্যে কিছু অশ্লীল শব্দ লিখেছে বলে তাকে আদালতে ডেকে নিয়ে গিয়ে শাস্তি দেওয়া হবে, সেটাও আমি সমর্থনযোগ্য মনে করি না । সাহিত্যের জন্য শাস্তিদানের কোনো ঘটনা যদি ঘটে, তবে আমি সবসময় অভিযুক্তের পক্ষেই থাকব ।

( সুমিতাভ ঘোষাল সম্পাদিত 'গদ্য-পদ্য সংবাদ' পত্রিকার অক্টোবর ১৯৮৬ সংখ্যায় প্রকাশিত )

Thursday, July 15, 2021

কবি মলয় রায়চৌধুরীর লেখা তিনটি কবিতার পাঠ ॥ পাঠে - সুস্মিতা বোস

কবি মলয় রায়চৌধুরীর লেখা কবিতাগুলির পাঠে সুস্মিতা বোস - ২য় পর্ব

কবি মলয় রায়চৌধুরীর লেখা কবিতাগুলির পাঠে সুস্মিতা বোস (তৃতীয় পর্ব)

কবি মলয় রায়চৌধু্রীর লেখা কবিতাগুলির পাঠে সুস্মিতা বোস(৪র্থ পর্ব)

মলয় রায়চৌধুরী, চৈতালী বিশ্বাস ও অভিজিৎবিজন দাস ----- ১৪২৮ সালের নববর্ষ অ...

Poetry, obscenity & Hungry Generation | Malay Roy Choudhury in Conversat...

মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা আবৃত্তি করছেন বাংলাদেশের শিল্পীরা


 

Monday, July 12, 2021

Sheela Chattopadhyay. She is poet Shakti Chattopadhyay's Muse

Poet Shakti Chattopadhyay wrote all his love poems for this lady with whom he was deeply in love when Shakti was at Chaibasa for three years at his friend and co-poet Samir Roychoudhury's house.


 

Hungryalist Manifesto on Obscenity

 

হাংরি আন্দোলন-এর অশ্লীলতা বিষয়ক ইশতাহার


[ ১৯৬৫ সালে ফালিকাগজের বুলেটিনে প্রকাশিত ]

আমি অশ্লীলতা সমর্থন করি ।

আমি ততদিন ওব্দি অশ্লীলতা সমর্থন করব, যতদিন ওইসব দুর্বৃত্ত অভিজাতরা তাদের পৈতৃক উৎকর্ষের নকল উৎসবের দাবি করতে থাকবে ।

আসলে অশ্লীলতা বলে কিছু নেই । 

অশ্লীলতা একটা নকল ধারণা, বানানো, উদ্ভাবিত,

তৈরি-করা,

নির্মিত

একদল অশিক্ষিত শ্রেণি-সচেতন ষড়যন্ত্রীর দ্বারা ; প্রতিষ্ঠানের অভিজাত শকুন দ্বারা, নিচুতলার থ্যাঁতলানো মানুষদের টাকাপুঁজ খেয়ে যারা গরম থাকে ; সেইসব মালকড়ি-মালিক জানোয়ারদের দ্বারা, যারা ঠাণ্ডা মাথায় এই নিচুতলার গরম হল্কার ওপরে একচোট মুরুব্বিগিরি করে ।

তাদের শ্রেণিগত সংস্কৃতি বাঁচাতে,

টাকাকড়ির সভ্যতাকে চালু রাখতে,

ঘৃণাভুতের পায়ে সৌরসংসারকে আছড়ে ফেলতে ।

সমাজের মালিকরা একটা নকল নুলো ভাষা তৈরি করে, নিচু শ্রেণির শব্দাবলীকে অস্বীকার করতে চায় যাতে বিভেদ রেখাটা পরিষ্কার থাকে ।


শব্দ আসলে শব্দ আসলে শব্দ আসলে শব্দ আর আমি অভিব্যক্তির কোনোরকম শ্রেণিবিভাগ হতে দেবো না । শুধুমাত্র এই অজুহাতে যে কোনো শব্দ, অভিব্যক্তি, গালাগালি, বাক্য বা উক্তি এক বিশেষ শ্রেণি/গোষ্ঠী/জাত/এলাকা/সম্প্রদায় কর্তৃক ব্যবহৃত, আমি কাউকে তা অস্বীকার, পরিত্যাগ, অগ্রাহ্য, প্রত্যাখ্যান করতে দেবো না ।

একটা শব্দ হলো ফাঁকা আধার যা ভরাট হবার জন্যে অপেক্ষমান ।

সেই সমাজ, যেখানে দুটো ভিন্ন আর্থিক শ্রেণির জন্যে দুরকম শব্দাবলী, তা অসুস্হ আর বিষাক্ত।

অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দেবো কেননা ভাষার মধ্যেকার শ্রেণিবিভাগ আমি নষ্ট ও ধ্বংস করে দেবো ।

তুমি যদি একজন অ্যাকাডেমিক মূর্খ হও এবং আমার কথায় তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না, তাহলে কলকাতার একজন রক্তপায়ী বাবুকে ধানবাদে নিয়ে গিয়ে সবচেয়ে পরিষ্কার খনিশ্রমিকের মাদুরে শুইয়ে দাও। সে তাকে মনে করবে অশ্লীল, ইতর, অসহ্য, এবং সমাজবিরোধী । সেই লোকটাকেই বম্বে বা প্যারিসে নিয়ে গিয়ে কোনো কেউকেটা রাজকুমার বা আলিখান বা বড়োসায়েবের পাশে শুইয়ে দাও ; সে তার শিরদাঁড়ার পায়ুবৃন্ত পর্যন্ত আহ্লাদে ডগমগ করে উঠবে :

ঘৃণা

অভিজাত মগজবাক্যে তরল ভ্যামপায়ার গড়ে তোলে কেননা ইশ্বরগোবর এই সফেদ কলারদের সর্বদা ভয়, এই বুঝি মানব সভ্যতাকে লোটবার তাদের অধিকার ও সুবিধা শেষ হয়ে গেল ।

অশ্লীলতা অভিজাতদের সংস্কার যারা নিচুতলার উন্নত সংস্কৃতির কৃষ্টি-আক্রমণকে ভয় পায় ।


আসলে অশ্লীলতা হচ্ছে বুর্জোয়াদের বাড়িতে বানানো আত্মাপেষাই মেশিন ।

ঠিক যেমন তারা বানিয়েছে যুদ্ধ

গণহত্যা

বাধ্যতামূলক সৈন্যভর্তি

পুলিশের অত্যাচার কুঠরি

এবং আণবিক বোমা

নিজেদের লোকেদের ক্ষমতায় রাখতে

পৃথিবীর সমস্ত স্বর্ণপায়খানাকে তাদের পেটে ভরে নিতে

তাদের বিরোধীদের নিশ্চিহ্ণ করতে

মধ্যবিত্তের থুতুতে একদল সফেদকলার সৈন্য ডুবিয়ে রাখতে ।

আমি এদের চাই না

এই পোকাদের

আমি চাই পিটুইটারি আত্মাসুদ্দু মানুষ ।

একজন বুর্জোয়া সবসময় একজন ফ্যাসিস্ট বা একজন

কম্যুনিস্ট বা একজন প্রতিক্রিয়াশীল

কিন্তু কখনও মানুষ নয় ।


অভিজাতের কাছে নিচুতলার ভাষা অশ্লীল । অভিজাতের কাছে তার নিজের ভাষা মানে শিল্প।

বুর্জোয়ারা মনে করে নিচুতলার ভাষা ব্যবহার করলে মানুষ এবং সমাজ ‘কলুষিত ও বিকৃত’ হয়, কেন না তারা ভালো করেই জানে যে, এই ধরণের বুজরুকি ছাড়া তাদের সমাজ-সংস্কৃতি বেশিদিন টিকবে না।

এই ষড়যন্ত্র এক্কেবারে কাণ্ডজ্ঞানহীন ।

সমগ্র সমাজের সাধারণ ভাষায় কথা বলা এবং লেখা যদি কলুষিত ও বিকৃত করা হয়,

তাহলে আমি মানুষকে কলুষিত ও বিকৃত করে প্রকৃতিস্হ করব ।

মানুষের তাবৎ শব্দাবলী যতক্ষণ না গ্রহণযোগ্য হয়, আমি অশ্লীলতা সমর্থন করব । আমি চাই কবিতাকে জীবনে ফিরিয়ে দেয়া হোক ।

আমি ইচ্ছে করে তেমন লেখা লিখবো, যাকে বুর্জোয়ারা অশ্লীল মনে করে, কেন না আমি তাদের হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে বাধ্য করব তাদের ওই নকল উৎকর্ষের বিভেদ ভেঙে ফেলতে । আর এর জন্যে কলকাতার কম্যুনিস্ট বুর্জোয়া, প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া এবং ফ্যাসিস্ট বুর্জোয়া আমার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে আমায় তাদের জেলখানায় ঢুকিয়ে দিলেও কিছু এসে যায় না ।

মানুষ ও মানুষের মধ্যে পার্থিব দখলিসত্তের ভিত্তিতে কোনো তফাত করতে দেবো না ।

পৈতৃক রুপোর চামচে করে সমাজের একটা অংশ কিছু শব্দকে খায় বলে, আমি তাদের উন্নত মনে করি না ।


যে সমাজে পার্থিব দখলিসত্তের ভিত্তিতে মানুষে-মানুষে তফাত, সেখানে যৌনতা পুঁজি হিসেবে ব্যবহৃত।

সেক্স পুঁজিরুপে ব্যবহৃত ।

বুর্জোয়া-অত্যাচারিত সমাজ একটা বেবুশ্যেঘর,

কিন্তু কেন যৌনতা পুঁজি হিসেবে ব্যবহৃত ?

কেননা পৃথিবীতে যৌনতাই একমাত্র ব্যাপার যাতে ক্ষুদ্রতা নেই

সংস্কৃতির

ঐতিহ্যের

ধর্মের, জাতির

ঐশ্বর্যের

দেশের, প্রথার, সংস্কারের এবং আইনের ।

অবচেতনার টুঁটি চেপে ধরার জন্যেই যৌনতাকে পুঁজি করা হয় ।

যৌনমাংসের তেল-তেল গন্ধ ছাড়া  এই সমাজে কোনো বিজ্ঞাপন সফল নয় এবং কোও কাজই টকটকে যোনির ফাঁদ না পেতে করিয়ে নেয়া সম্ভব নয় । প্রতিটি পদক্ষেপে অবশ্যম্ভাবী যৌনজাল কেননা এই সমাজ-ব্যবস্হা ক্রেতা-বিক্রেতার তৈরি ।

মানুষ এবং/অথবা মানুষী এই সংস্কৃতিতে হয়ে ওঠে প্রতীক বা বস্তু, অর্থাৎ জীবন বদলে যায় ‘জিনিস’-জড়পদার্থে ।

যৌনজীবন যদি হয়ে ওঠে সহজ সরল স্বাভাবিক, তাহলে এই সিঁড়ি-বিভাজিত সংস্কৃতি ধ্বসে পড়বে, আর ওই সুবিধা-লোটার-দল তাদের ফাঁপা অন্তর্জগতের মুখোমুখি হয়ে পড়বে ।

তাই জন্যে যৌনতার র‌্যাশনিং

তাইজন্যে ধীরেসুস্হে যৌনবিষের ফেনা

তাইজন্যে পরিপূর্ণ যৌন-উপলব্ধি বারণ

তাইজন্যে যৌনতাকে স্বাভাবিক করতে দেয়া হবে না,

তাই জন্যে পুঁজি ছাড়া অন্য কোনো রকমভাবে যৌনতাকে প্রয়োগ করতে দেয়া হয় না : কবিতায় তো কখনই নয় : কেননা কবিতার সঙ্গে কিছুই প্রতিযোগিতা করতে পারে না ।

শৈশব থেকেই সমাজের প্রতিটি ও তাবৎ মস্তিষ্ককে ভুল শিক্ষায় ভ্রষ্ট করা হয়, এবং এই নষ্টামিকে বলা হয় নৈতিকতা । শাসনকারী বুর্জোয়া সম্্রদায় জানে যে যতদিন এই অসুখকে নীতিজ্ঞান বলে চালানো যায়, আর যে কোনোভাবে মধ্যবিত্তের ভেতরে এটা ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাদের কর্তৃত্ব বহাল থাকবে ।


উচ্চবিত্ত টাকা-খুনিরা সাহিত্যে যৌনতার অন্য প্রয়োগ অশ্লীল ঘোষণা করবে, কেন না আইনগত ও সামাজিক উপায়ে তারা জঘন্য হিংস্রতায় নিজের শত্রুদের নিশ্চিহ্ণ করবে যাতে যৌনতাকে পুঁজি ছাড়া অন্য উপায়ে ব্যবহার করা না হয় ।

বুর্জোয়ারা যাকে অশ্লীল বলে, আমি ইচ্ছে করে তাইই লিখবো, যাতে যৌনতাকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহারের ব্যাপারটা ধ্বংস ও ছারখার করে দিতে পারি ।

যৌনতা মানবিক ;

মেধাশক্তিই অনাক্রম্য ; যা অনাক্রম্য তা নীতিজ্ঞান ।

আমি যৌনতাকে ‘জিনিস’ হিসেবে প্রয়োগ করতে দেবো না । সেনসর পদ্ধতি সেই ভয় থেকে জন্মায় যাকে নীৎশে বলেছেন ‘যূথের নীতিজ্ঞান’ ।

বুর্জোয়াদের দাবি যে, কোনো বই বা কবিতা পড়ে মানুষ ও সমাজ ‘কলুষিত এবং বিকৃত’ হয়ে উঠবে কারণ তাতে যৌনতাকে স্বাভাবিকতা দেয়া হয়েছে । 


আমি, মলয় রায়চৌধুরী, জন্ম ১১ কার্তিক

আমি অশ্লীলতা সমর্থন করি,

আমি জানি, কলকাতার বুর্জোয়া দুর্বৃত্তরা 

আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছকে ফেলেছে,

আমার তাতে কিছু যায় আসে না ।

এই সভ্যতার পতন কেউ থামাতে পারবে না

আমি ভবিষ্যৎবাণী করছি ।

আমার যেমন ইচ্ছে আমি সেরকমভাবে লিখবো, এবং সমগ্র বাঙালি মানবসমাজের শব্দভাঁড়ারে নিজেকে চুবিয়ে দেবো।

আমার সমস্ত শরীর যা ভাবে, আমি সেটাই ভাববো

আর যারা জানতে চায় তাদের জানাবো

কিংবা কাউকে

যে এই কথাগুলো জানার জন্যে জন্মাবে ।

আমি কবিতাকে জীবনে ফিরিয়ে দিতে চাই ।

জীবনে যা-কিছু আছে তার সমস্তই থাকবে কবিতার অস্ত্রাগারে ।

Sunday, July 11, 2021

Death of Pranabkumar Chattopadhyay's son Bubla.

Death of Pranabkumar Chattopadhyay's son Bubla who was bed ridden for 34 months and Pranab had to look after his son day and night. His son died at the age of 34 on 26th July 2021.

 

হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে

  হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে প্রখ্যাত কবি, হাংরির কবি দেবী রায় ৩ অক্টোবর ২০২৩ চলে গেছেন --- "কাব্য অমৃতলোক " ফ্ল্...