Sunday, July 29, 2018

হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

                                                       Sunil Gangopadhyay Quote

বহতা অংশুমালী আলোচনা করেছেন মলয় রায়চৌধুরীর ডিটেকটিভ উপন্যাস


বহতা অংশুমালী (মুখোপাধ্যায়)

মলয় রায়চৌধুরীর উপন্যাস : ডিটেকটিভ নোংরা পরির কংকাল প্রেমিক
বহতা অংশুমালী (মুখোপাধ্যায়)




উপন্যাসের এর নামটা আমাকে বুঝতেই দেয় নি ভিতরের খনিজের উপস্থিতি। প্রচ্ছদে শিংওলা যুবক আর প্রগল্‌ভা যুবতীর পলায়নপর ছবি দেখে মনে হয় কোনো রগরগে রবিবাসরীয়ের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছি। বুঝিনি এই অতি সংক্ষিপ্ত উপন্যাসের প্রতিটি লাইন এক বিরল জীবনদর্শনের মুখোমুখি করে দেবে আমাকে। এক অন্য ধরণের সত্যানুসন্ধান , সাধারণ খুনের মামলার প্রেক্ষাপটে যা এক যুবক যুবতীর উৎকেন্দ্রিক আরণ্যক ভালোবাসা থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে। তেলেগুতে এনক্রিপ্টেড, বাংলায় লেখা, সিডিতে সংরক্ষিত ডায়রিলেখনে বন্দী হয়ে থাকে সেই জীবনকাহিনী। আর কংকাল প্রেমিক এর জীবন ও মৃত্যু রহস্য উন্মোচিত হয় নোংরা পরির হাতে।

নোংরা পরি, ববিটাইজিং ভীতির কার্যকারিতা আর সারল্যের সংজ্ঞা

নোংরা পরি বেরিয়ে এসেছে Edith Wharton এর বর্ণিত The Age of Innocence এর পর্দা কেটে। ইন্সপেক্টর রিমা খান অপরাধীর চোখের গতির ভিত্তিতে ক্রিমিনাল ঠ্যাঙায়। যে ক্রিমিনালরা জেরা করার সময়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে তাদের দু-ডিগ্রি , যারা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে তাদের থার্ড ডিগ্রি। বুকের দিকে তাকিয়ে থাকারা নাকি তুলনামূলক ভাবে স্বাভাবিক, রিমা খানের ভাষায় তারা প্রকৃতির মাদার-সন-ইন্সটিংক্ট মেনে চলে। তাদের ঠেঙিয়ে কথা আদায় করে না, সাব-ইন্সপেক্টারের ওপর ছেড়ে দেয়।

রিমা খানকে উপন্যাসের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নাম দিয়েছে ‘নোংরা পরি’। নোংরা- কারণ সে সিমঁ-দু-বভার ‘সেকেণ্ড সেক্স’ হতে রাজী নয়। সে আদ্যোপান্ত পুলিশ, সমস্ত প্রফেশনাল অর্থে, এমনকি ছুটকো ঘুষ নেবার ক্ষেত্রেও। সে দুর্দান্ত , দুঁদে। তার ভয়ে তার অঞ্চলের ক্রিমিনালরা লোক্যালিটি বদলে ফেলে।

বেটি ফ্রিড্যান যে ‘ফেমিনিন মিস্টিক’ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তা এখনো আজকের সমাজেও পৃথিবী জুড়ে বর্তমান। এই নারীত্বের রহস্য শতকের পর শতক কখনো চীনে মেয়েদের পা জুতোয় ঢুকিয়ে ছোটো করতে বাধ্য করে, কখনো আফ্রিকার উপজাতির মেয়েদের মরাল গ্রীবাকে দীর্ঘায়িত করতে ধাতব বালায় বালায় বরবাদ করে দেয় ঘাড়ের মাথাকে ধরে রাখার কার্যকারিতাটুকু। এই নারীত্বের সন্ধানে ইউরোপের শিক্ষিতা মহিলা প্রেমপত্রে বানান ভুল করে, পদার্থবিদ্যার ডিগ্রি না নিয়ে পড়তে চায় সুললিত আর্টস।

রিমা খানের মধ্যে সেই সারল্যটুকু নেই , সভ্যতা যে সারল্য শেখায় মেয়েদের, কাঁচের-পাথরবাটির মতো। যে শিক্ষিত সারল্যে মেয়েরা দুই বাচ্চার মা হয়ে গিয়েও সেক্সটকের অধিকার পায় না, বলে ‘ইস ছি ছি ছি’, আজকের জমানাতেও। রিমা খান বিন্দাস গালিগালাজ করে। রিমা আবিষ্কার করে ফেলেছে যে ববিটাইজ করার ভয় দেখালে আবালবৃদ্ধ-ক্রিমিনাল খুব আকুল হয়ে পড়ে। তাতে অরগ্যাজম হয় রিমা খানের। এখন যে যুগ তাতে জিন্স এর সঙ্গে এক-হাত লাঠি-চুড়ি পরে মডার্ন ফেমিনিন ঘুরে বেড়ায় , স্ট্রিপটিজ দেখে আবার সন্তোষী মা-ও করে, সে খানে এই ডিডলোপ্রেমী পুলিস অফিসারটি নোংরাও বটে, পরিও বটে। তাকে কোথাও প্লেস করা যায় না, কোনো গ্রাফ এ ফেলা যায় না! তার উলঙ্গ সত্তায় কোনো কালো-দস্তানা-মোজা পরা লজ্জার ভেজাল ভঙ্গিমাও নেই। তাই সে মানুষী নয়। মানুষের ভোগ্যাও নয় হয়তো। বাঘিনী বাঘের জন্যে ভার্জিনিটি-টুকু বাঁচিয়ে রেখে ছিল। তা চারদিকে তো শুধুই ছাগল গবাদি পশু তার। তাই কুমারীত্ব ঘোচেনি কোনোদিন। এক ব্যতিক্রম কংকাল প্রেমিক ।

যে কংকাল সে শুধু প্রেমিক

প্রেম কয়প্রকারের হয়ে থাকে? বহু প্রকারের হয়ে থাকে প্রেম। মেয়ে মাকড়শার সামনে পুরুষ মাকড়শার সুইসাইডাল প্রেম, মক্ষীরানীর সামনে খুদে মৌমাছি শ্রমিকের প্রেম, রেপিস্ট হাঁসের প্রতি হংসীর [হাঁসির] প্রেম, ডলফিনের হরণ বা অপহরণমূলক প্রেম , সতী নারীর পতিপ্রেম , বড়োলোকের বেশ্যা প্রেম এবং সমান্তরাল ভাবে সন্তানের মায়ের প্রতি প্রেম, এমন অনেক রকমের।

আমাদের কংকাল, যিনি কিনা ইন্সপেক্টর রিমা খানের আবার চাকরি ফিরে পাবার পাসপোর্ট, তিনি ছিলেন গণিতবিদ। এখানে মলয় রাচৌ বোধ হয় গণিতের অবতারণা করেছেন কুয়াশাহীন শুদ্ধচিন্তার প্রতীক হিসেবে। নিরঞ্জন, ওরফে কঙ্কাল, বুঝে গিয়েছিলেন তিনি বহুগামী। তাই কোন মহিলা কে এবং নিজেকে সমস্যা না দিতে চেয়ে, বিয়ে টিয়ে না করে, শুদ্ধ গণিত ও বিশুদ্ধ যৌনতার চর্চা করেছেন প্রেমে পড়ার আগে অব্দি। মলয় রাচৌ দেখিয়েছেন তাঁর দুরকম প্রেম।

নিম্নগামী প্রেমটি (মস্তিষ্ক থেকে শিশ্ন হয়ে এসে হৃদয়ে যা ইকুইলিব্রিয়াম পেলো, মাসিকের আবর্তনে মাপলো সময় )


একজন জীবন খুঁজতে পালিয়েছিল, অন্যজন গিয়েছিল শুধু পলায়নপরাকে দেখে। মায়া পাল পুরোদস্তুর আধুনিক যুবতী, যিনি কুড়মুড়ে ইংরেজী বলতে বলতে অনায়াসে উচ্চপদের চাকরি পেতে পারেন, তিনি সুপুরুষ গণিতবিদের হাত ধরে বললেন ‘চলুন পালাই’। আর কামুক বিশ্বামিত্র ও তাঁর সঙ্গিনী চললেন অরূপের সন্ধানে, অন্ধ্রপ্রদেশের ব্যারাইটস খনি অঞ্চলে। তাঁদের অতিপ্রাকৃত ও অতিপ্রাকৃতিক প্রেম সেই অরণ্যে যাপিত হয়। অতিপ্রাকৃতিক, কারণ মলয় রাচৌ এখানে খুঁজতে চেয়েছেন প্রকৃতির সঙ্গে মিথোজীবী ভাবে যাপিত জীবনের দিকটি। বাছুর কে দুধ থেকে বঞ্চিত না করে’, মুরগীর ছাল ছাড়িয়ে না নিয়ে, ভেড়ার লোম কেটে না নিয়ে বাঁচার পদ্ধতি। মায়ার এনভায়রনমেণ্টালিজম, জীবপ্রেম।

মলয় রাচৌ এখানে মনে করিয়ে আমাদের ভুলে যাওয়া নারী পুরুষের প্রেমের রূপটিও।এখানে এক মানুষীর গায়ের গন্ধটি প্রেমিক চেনেন। প্রেমিক প্রেমিকাকে আলিঙ্গন করতে থাকেন মনের তাপে, আর রোজ আলিঙ্গন করতে করতে বুঝতে পারেন তাপের তারতম্য, ডিম্বাণুর আবির্ভাব। তাঁরা প্রেমটুকু চেয়েছিলেন , বীজটুকু নয়। তাই নিরোধ প্রক্রিয়া , অদ্ভুত আত্মনিয়ন্ত্রণ। মায়া নিরঞ্জনকে সেই প্রেম শেখান যাতে শরীর বড় হয়েও ওঠে না অযথা, ছোটও হয় না। যতটুকু আসে সহজে আসে। এই প্রথম নিরঞ্জন কোনো নারীর আলিঙ্গনে উত্তেজিত না হয়ে শান্ত হন।

এখানে খুব সুন্দর ভাবে দেখানো হয়েছে দুজন মানুষের একে অন্যকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকার আনন্দ। এখানে নিরঞ্জন ঘড়ির অভাবে মায়ার মাসিক বা ঋতুস্রাবের দিনগুলিকে গাছের গুঁড়িতে খোদাই করে রাখেন। আর হিসেব রাখেন দিন মাস বছরের। "Metaformic theorists also discuss how cultures, like the Romans and Gaelic, used the same words for menstruation and the keeping of time, while the Mayan calendar was directly influenced by women's menstrual cycles"(উইকিপিডিয়া থেকে উদ্ধৃত)। উইকিপিডিয়া আর গুগল ঘাঁটলেই দেখা যাবে , মহাজাগতিক ক্যালেণ্ডারটি অনেক ক্ষেত্রেই কিভাবে প্রাচীন কালে নারীর শরীরের ঋতুচক্রের দিকে তাকিয়ে বানানো হয়েছিল। কখনো ঊনত্রিশ কখনো ত্রিশ দিনের বিরতিতে।

এই প্রেমে এক মানুষী বলেন আমি সবটুকু দেব, আর পুরুষটি বলেন আমি সবটুকু নেব। আর ঋতুস্রাবের পরে প্রেমিক ধুইয়ে দেন পরম আদরে প্রেমিকার রসস্থল, আরণ্যক দিনে।

ঊর্ধ্বগামী ভালোবাসা (সখীর জন্যে বীজ শুয়ে আছে বরফে)

শরীরের ভালোবাসাকে আমরা মাঝে মাঝেই একটু নিম্নমানের বলি, পর্দা তুলে দিই। ‘রজকিনী প্রেম নিকষিত হেম, কামগন্ধ নাহি তায়’। যেন কামগন্ধ খারাপ বস্তু। যেন আমাদের সব্বার উৎস লজ্জার। এই ক্রিশ্চান ‘ওরিজিন্যাল সিন’ এর পাপবোধ যা আমাদের উপরে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, যে পাপবোধ থেকে আজ বহু মেয়ের অঙ্গ কেটে দেওয়া হয় যাতে তারা ‘শয়তানি আনন্দ’ উপভোগ না করে শুধু সন্তান প্রসবের যন্ত্র হিসেবে নিজেদের বহন করতে পারে, সেখানে মিলি একদমকা খোলা হাওয়া। মিলি কিশোর আনাড়ি নিরঞ্জন কে ‘ভালোবাসতে’ শেখায়। তারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে নিজেদের শরীর নিয়ে খেলে, জানতে পারে যান্ত্রিক ভঙ্গীতেই বিভিন্ন আনন্দের উৎসমুখ। সে তো সেতার বাজাবার আগে টুংটাংটুকু না করলেই নয়।

মিলি ভালোবেসেছিল কংকালকে। নিরঞ্জন ভালোবাসেননি সেই অর্থে। তিনি তখন-ও পুরুষ নন। বৃন্দাবনবিলাসী কিশোর, যে পালিয়ে যাবে, পালিয়ে গেছে। কিন্তু মিলি বিয়ে করেন নি। আর নিরঞ্জনের সন্তান পাওয়ার জন্যে জোরাজুরিও করেছেন বহু বছর পরে দেখা হলে।

নিরঞ্জন ভালোবেসেছেন মায়াকে। কিন্তু মিলির জন্যে মৃত্যুর আগে রেখে গেছিলেন শুক্র, ডাক্তারের কাছে।

মিলি সন্তান চেয়েছিল, মায়া চায়নি। এখানে শিশ্ন থেকে উঠে গেছে ভালোবাসা হার্ট-এ। কী মন্ত্রে কে জানে।

এক্ষেত্রে মলয় রাচৌ এর একটি ইণ্টারভিউ মনে পড়ে গেল Alexander Jorgensen কে দেওয়া। " Alex: If you could walk a mile in whatever circumstance, where would you choose to do it ? Malay: I would go to the bank of river Ganges, at the place where I had kissed my Nepali classmate Bhuvanmohini Rana. My first and memorable kiss. I do not know where she is now. Must have become old or might have died; she was two years older than me. I would sit at the same spot at the same time of autumn evening to revisit her tenderness." । আমার যেন মনে হয় ভুবনমোহিনী কোথাও মিলি , তার সমস্ত কোমলতা নিয়ে, যেখানে নিরঞ্জনের কৈশোর আটকে আছে।

মায়ার সত্যি নিরঞ্জনের সত্যি , মায়ার জীবনদর্শন

কাহিনীটি তো ডিটেকটিভ কে নিয়ে। সত্যানুসন্ধান ! Akira Kurosawa র Rashomon যেমন দেখিয়ে দেয়, বিষয়গত তথ্য আর বিষয়ীগত সত্য এক নয়, প্রেমিক নিরঞ্জন ও প্রেমিকা মায়ার সত্যিও আলাদা।

মায়া আধুনিক, কিন্তু পুনরাধুনিক। তিনি জানতে চেয়েছেন জীবনের যাপনগত সত্যটা। মানুষ ঠিক কোন আঙ্গিকে সভ্য, জীবহত্যার ঊর্ধ্বে উঠে প্রকৃতির সঙ্গে মিথোজীবিতার মাধ্যমে বাঁচা যায় কিনা, তাই দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই দুধের শিশুকে ছেড়ে, স্বামীর ও সমাজের দেওয়া অসহিষ্ণুতা ও অপমান থেকে পালিয়ে যেতে, তিনি ‘খপ করে’ নিরঞ্জনএর হাত ধরে বলেছিলেন "চলুন পালাই " ।

“No, it is impossible; it is impossible to convey the life-sensation of any given epoch of one’s existence — that which makes its truth, its meaning — its subtle and penetrating essence. It is impossible. We live, as we dream — alone.” — Joseph Conrad এই জাতীয় উক্তি কে মেনে নিতে পারেন নি ইংরাজির ছাত্রী মায়া পাল। নিরঞ্জন লিখেছেন , ‘সে আমাকে টমাস হব্‌স, জোসেফ কনরাড, অ্যান্টনি বারজেস, উইলিয়াম গোলডিং আরো কারা কারা যেন, প্রতিটি নাম মনেও নেই এতদিন পর, এনাদের লেখালিখির কথা শোনাতো। তার জীবনের অতীতসূত্র কেবল এই সাহিত্যদর্শনকে ঘৃণা। তার অতীত সম্পর্কে আর বিশেষ কিছু জানি না, সে বলতে চায়নি। বলত ওনারা জীবনের ভুল ব্যাখ্যা করে গেছেন। ওনারা নাকি বলে গেছেন একজন মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত, সে একাকী, কেউ নেই তার, যত বৈভব থাক না কেন সে প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র, পঙ্কিল, কদর্য, অশ্লীল, জঘন্য, স্থূল, পাশবিক, অশিষ্ট ও বর্বর । সে বলত, জীবনের এই আশাহীন দৃষ্টিকোণ অসত্য। '

কিন্তু নিরঞ্জনের এর সত্য আলাদা। তিনি মূলতঃ প্রেমিক। তিনি নিজেকে দেখেন এইভাবে — ‘মায়ার পাশে বসে একই ভাবনা ঘুরছিল আমার মগজে, যা বহুকাল থেকে বাসা বেঁধে আছে। তা এই যে, আমি একজন কুকুর। যে মালকিনের হাতে পড়েছি, সে যেরকম চেয়েছে, যেরকম গড়েছে, তা-ই হয়েছি : প্রেমের কুকুর, কাজের কুকুর, সেবার কুকুর, গুপ্তচর কুকুর, ধাঙড় কুকুর, কুরিয়ার কুকুর, প্রেডাটার কুকুর , পাহারাদার কুকুর, মানসিক থেরাপির কুকুর, অনধের কুকুর, শোনার কুকুর, শোঁকার কুকুর, চাটার কুকুর, রক্ষক কুকুর, গাড়িটানার কুকুর, আদরের কুকুর, এই কুকুর, ওই কুকুর ইত্যাদি। কিন্তু আমার লেজটা জন্মের সময়ে যেমন আকাশমুখো ছিল, আজও তেমনই আছে। থাকবে। এখন টাইপ করতে বসেও জানি, লেজটা অমনই রয়েছে’। এই আকাশমুখী লেজ এই গণিতবিদের জীবনচেতনা। নিরঞ্জনের জীবন চেতনার অন্য একটি দিক দেখা যায় , তাঁর চেতনায় ‘পবিত্র’ শব্দটির অভিঘাতে। নিরঞ্জন লিখছেন - 'আমার দিকে না তাকিয়েই মায়া বলেছিল, আমরা সারা জীবন নিজেদের সম্পর্ক আপনি-আজ্ঞের পবিত্র গভীরতায় রাখব। তুমি-তুমি ওগো-হ্যাঁগোর ছেঁদো নোংরা রুটিনে বাঁধা পড়ব না। বলেছিলুম, পবিত্র? এই ধরণের অস্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করবেন না প্লিজ।'

নিরঞ্জন এক জমির মতন পড়ে থাকেন সমস্ত জীবন। নানান মেয়ে, মহিলা তাঁর উপর দিয়ে বয়ে যান, তাঁকে উর্বর করেন, তাঁকে ভেঙে দেন ।তাঁর ল্যাণ্ডস্কেপ পালটে দেন। এভাবেই মানবজমিনের চাষ করে গেছেন নিরঞ্জন। শেষ দিন অবধি। তিনি কোনো মহিলা কে ‘ডিমিন’ করেন নি কখনো। দেহ ব্যবসায়িনীর "গিগলিং" টুকুকেও নয়। "পৃথিবী নামের ছোট্টো দ্বীপটায়, নারী ছাড়া আমি একা, নিঃসঙ্গ, অন্তরীণ। জীবনে নারী নেই ভাবলেই মনে হয় মরে যাবো, মরে যাচ্ছি, মরে গেছি; ফাঁকা, ফোঁপরা, খালি। জানতেই পারতুম না আহ্লাদ কি, আঘাত কি, বেদনা কি, হাহাকার কি।" — নিরঞ্জন এমনই ভাবেন, বলেন, বাঁচেন। এই নারীসঙ্গ ইচ্ছা সামগ্রিক শারীরিক কাম নয় একেবারে। তিনি শেষ বয়সেও শেষনীর সঙ্গ চান উত্থানরহিত অবস্থায়। যেমন "অ্যালিস ইন দ্য ওয়াণ্ডার ল্যাণ্ড" এর লেখক লুই ক্যারল এর স্নেহের ডাকে খোকারা সুবিধে করে উঠতে পারতো না। তিনি খুকিদের বলতেন গল্প শুনতে আসতে। আর বলতেন ভাইদের ঘরে রেখে এসো। যে তার যে সুরে বাজে, সে তার সেই সুরেই বাজে। অন্যথা পচে যায় , যেমন আমরা পচে যাই অহরহ।

সত্যানুসন্ধান কী? ভিলেন কারা কারা ? কাঠগড়ার এপারে ওপারে ।

ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কাকাবাবু, সন্তু এই সব্বার থেকে আলাদা নোংরা পরি, ডিটেকটিভ রিমা খান। ১) তিনি পুলিশ, সখের গোয়েন্দা নন ২) তিনি মহিলা, প্রথম, একমাত্র মহিলা সত্যানুসন্ধানী বাংলা উপন্যাসের। তিনি ক্ষমতাশালী, ইনফর্মার কনস্টেবল ইত্যাদি প্রয়োগে সমর্থ। যদিও তিনি সাসপেণ্ডেড। ববিটাইজ করার ভয় দেখাবার প্রক্রিয়ায় নোংরা ।

রাষ্ট্রই ভিলেন নম্বর ওয়ান

এই উপন্যাসে, প্রথম বাংলা উপন্যাসে আমরা দেখতে পেলাম অপরাধ জগতের ব্যক্তিনির্ভরতার ঊর্ধ্বে সিস্টেমটাকে। আমরা দেখতে পেলাম রাষ্ট্র কোথায় অপরাধী। কিভাবে তুরুপ উপজাতির মানুষদের উৎখাত করে ফেলে খনি-মাফিয়া খনির লোভে। কিভাবে ক্যাপিটালিজমের, ব্যবসায়িক উদারনীতির, শিকার হয় অরণ্যের মানুষ। যাদের রাষ্ট্র কিচ্ছু দেয় না, যাদের "সমাজ" ব্যবস্থা , নীতিব্যবস্থা কে রাষ্ট্র স্বীকারই করে না , যাদের ভোটাধিকার নেই, পৌরসুবিধা নেই , তাদের কিভাবে অনায়াসে একটি মাত্র পুলিশ চৌকির অন্তর্গত করে ফেলে রাষ্ট্র। মায়া ও নিরঞ্জন যখন তুরুপ গোষ্ঠীর বাচ্চাদের শিক্ষিত করতে থাকেন , কিভাবে সেই মানবিক প্রচেষ্টা কে পুলিশ অবলীলায় বলে 'উপজাতিদের পড়াশুনা শিখিয়ে তোমরা যে এই অঞ্চলের ভারসাম্য নষ্ট করছিলে সে সংবাদ আছে আমাদের কাছে ।' এই ভারসাম্য ফেরত আসে , যখন সমস্ত আদিবাসী অরণ্য ছাড়া হয়ে খনিশ্রমিকে পরিণত হয়। কনজিউমার সোসাইটির প্রয়োজন তো সত্যই , কিন্তু আরণ্যক উপজাতির সত্যটুকুর কোনো দাম থাকে না রাষ্ট্রের চোখে । সবুজ নষ্ট হয়ে যায় । মাটিতে বড় বড় হাঁ করা গর্ত তৈরি হয়। কারণ খুঁড়েছে মাফিয়া, কোন বিবেকবান রাষ্ট্র নয় ।

মায়ার "আচ্ছা চলি"র পিছনে রাষ্ট্র নামক ভিলেনের কী অবদান তা বোঝার জন্যে পড়ে দেখুন উপন্যাসটা

ভিলেন নম্বর দুই

বলব না। তাহলে আর কী পড়ে দেখবেন। কিন্তু রিমা বুঝতে পেরেছিলেন ভিলেন কে, কংকাল প্রেমিকের ঘাতক কে। আর সেই ভিলেনকে বানিয়েছিল মধ্যবিত্ত সমাজের হাশহাশ নীতি, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা। যারা ভালবাসা দেখতে পায় না। ভালবাসার অভাব দেখতে পায় না। পবিত্র বিবাহগ্রন্থির নীচে চেপে রাখতে চায় সব রকম অতৃপ্তির চিৎকার। আর গ্রন্থিমুক্ত হতে চাইলে আঘাত করে সেই মানুষটিকে সুপরিকল্পিত ভাবে।

ভিলেনের স্মৃতিসৌধ

মায়ার "আচ্ছা চলির" পরে, মায়ালিঙ্গার পুলিশের হাতে অত্যাচারিত হবার পরে, তুরুপ প্রজাতির জঙ্গুলে মানুষই পুলিশের হাত থেকে বাঁচিয়ে আনে নিরঞ্জনকে। মায়া ছিলেন তাদের জন্য শিক্ষিকা , মাতৃরূপিণী , জীবন্ত দেবী , আম্মা। আর মায়াগারু সেই দেবীর জীবনের অঙ্গ। তুরুপ গোষ্ঠীর এই মানুষদের সমাজচেতনা আলাদা। তারা মায়া-নিরঞ্জনকে গ্রহণ করেছিল খুব সহজ ভাবে, বর্তমানে নির্ভর করে’, তাদের অতীত না খুঁড়ে। তাঁদের চলে যাওয়ার পরে তারা কুঁড়ে ঘরটাকে মন্দিরের সম্মান দেয়। কোন বিগ্রহহীন মন্দির। কিন্তু মায়ার আকস্মিক প্রস্থান এর জন্য দায়ী ক্ষমতা গোষ্ঠী, কুঁড়েটাকে ধর্মের দোকান বানিয়ে ফেলে অচিরেই। বহু পরে রিমা খান অকুস্থলে গিয়ে দেখতে পান, এক অদ্ভুত মূর্তি সহকারে মন্দিরটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে মায়া পাল-এর ভাবমূর্তি বেচে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে খনি-মাফিয়ার দ্ল বেশ দু পয়সা আয় ও করে নিচ্ছে।

এভাবেই আমাদের দেশে সতী প্রথা থেকে শুরু করে অনার কিলিং অব্দি বিভিন্ন ভাবে একটি মেয়ের সত্ত্বা ও অস্তিত্ব গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর তাকে "ধার্মিক" প্রমাণ ক'রে , দেবী প্রমাণ ক'রে, তার ব্যক্তিসত্তা ছিনিয়ে নিয়ে সমাজ তাকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয় নিজের মধ্যে ।

যৌনতার অর্ধেক আকাশ ,যান্ত্রিক ও মানবিক অরগ্যাজম , অশ্লীল মলয় রায়চৌধুরী

মায়া

মলয় রায়চৌধুরী সেই অর্থে অশ্লীল যে অর্থে ডি এইচ লরেন্স বা গ্যাব্রিয়েল গারসিয়া মারকেজ অশ্লীল ছিলেন। যখন 'লেডি চ্যাটার্লিস লাভার্স' এ কনির মনে হয় নারীকে তার নারীত্ব থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে আজকের পুরুষ আর সমাজ, বহু বায়বীয় কথার মধ্যে দিয়ে তার শরীরী রহস্য আর দেহোত্তীর্ণতা দুটোকেই নষ্ট করছে, তখন কংকাল প্রেমিক পরম যত্নে ধুইয়ে দেন প্রেমিকার অঙ্গ প্রেমিকার অনুজ্ঞায়, ঋতুস্রাবের পর। এই স্পর্শ আমাদের পরিচিত যৌনতার থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। এখানে ভালোবাসা যে কোনো ‘ইজম’ কে অতিক্রম করেছে। লজ্জা ঘৃণা ভয় ত্যাগ করেছেন কৃষ্ণ এখানে, শুধু রাধা বা গোপিনীর দল নয়। এই ভালোবাসায় নিরঞ্জন নিষিক্ত হতে থাকেন মায়ার সঙ্গে , সভ্যতা-ছেঁকে পাওয়া সভ্যতায় ।

মিলি

মেয়েদের যৌনতাকে সমাজ সাধারণতঃ অশ্লীল মনে করে। এই উপন্যাসে লেখক সেই ঢেকে যাওয়া অর্ধেক আকাশকে টেনে নিয়ে এসেছেন অনেকখানি। নিরঞ্জনের কৈশোরে মিলি, তাদের খেলাধুলোয় কেবল কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছা দেখায় না। সে আগে নিজে তৃপ্ত হয়ে নেয় নিরঞ্জনের মাধ্যমে। তারপর নিরঞ্জনকে নিয়ে যায় শিখরে। এই দেয়া নেয়ার সহজ হিসেবটুকু এই টেণ্ডারনেসের সঙ্গে আমি সচরাচর পাই নি কোন বাংলা উপন্যাসে। এই প্রসঙ্গের অবতারণা যখনই হয়েছে, কিছু বিকৃতির সঙ্গে করা হয়েছে। আবার লরেন্সের থেকে ভাবটি উদ্ধৃত করতে ইচ্ছে করে— স্পর্শ ছাড়া কিই বা টিকে থাকে, শেষ পর্যন্ত দেহে মনে অস্তিত্বের শিকড়ে ? যদি স্পর্শ তেমন স্পর্শ হয় ।

রিমা খান

আমার মনে পড়ে যাচ্ছে Johns Hopkins University Press থেকে প্রকাশিত Rachel P. Maines এর ‘The Technology of Orgasm "Hysteria," the Vibrator, and Women's Sexual Satisfaction’ রচনা, যেটির প্রথম পরিচ্ছেদের নাম হলো ' The Job Nobody Wanted ' ( যে-কাজটি-কেউ-চায়নি) । শতকের পর শতক মেয়েরা তাদের যৌন চেতনাকে ঢেকে রেখেছে , সেবামূলক ও প্রদান-ভিত্তিক মিলনের আড়ালে। তাই তার চেপে রাখা "হিস্টিরিয়া" টুকু কে কখনোই অনুরণনে পরিণত হতে দেয় নি পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। সেটা শুধু চিকিৎসা-সাপেক্ষ গোঙানি হয়ে থেকে গেছে। তাই রিমা খান যখন ডিডলো ব্যবহার করে খুশী হয়, তৃপ্ত হয় , ফুরফুরে হয় , আমি তখন আবার উদ্ধৃত করি " When the vibrator reemerged during the 1960s, it was no longer a medical instrument; it had been democratized to consumers to such an extent that by the seventies it was openly marketed as a sex aid. Its efficacy in producing orgasm in women became an explicit selling point in the consumer market. The women's movement completed what had begun with the introduction of the electromechanical vibrator into the home: it put into the hands of women themselves the job nobody else wanted." Rachel P. Maines উপরি-উক্ত রচনাটি থেকে ।

আমি এই "অশ্লীল" , নারীবাদী , মানবতাবাদী লেখককে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।


উপন্যাসের ফর্ম , Anachronism, সাহিত্যের ডিটেকটিভদের টাইম ট্রাভেল, রাজনৈতিক গণহত্যা ও ডিটেকটিভ বিলাসিতা

টাইম ট্রাভেল ও ডিটেকটিভ দের চোখে সামাজিক অবক্ষয়

এই উপন্যাসে বেশ কটি মজার পয়েণ্ট রয়েছে। Anachronism বা সময়ের হেরফের ব্যবহার করে দিল্লিতে আন্তর্জাতিক ডিটেকটিভ কনফারেন্সে মলয় রচৌ আবির্ভূত করেছেন দেশ বিদেশের বহু সত্যান্বেষীকে , সাহিত্যের পাতা থেকে উঠিয়ে তাদের জীবন্ত করে তুলে, তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখাতে চেয়েছেন আজকের সমাজে ডিটেকটিভদের অপ্রাসঙ্গিকতাটুকু।

দিল্লিতে আন্তর্জাতিক ডিটেকটিভ কনফারেন্সে ‘প্রাইভেট ডিটেকটিভ এসেছিলেন চেন কাও , ডেভিড স্মল, নিও উল্ফ, ভি আই ওয়ারশসস্কি, শন স্পেনসার, স্যাম স্পেড, শার্লক হোমস, কিনসে মিলোনে, এরকিউল পয়েরো, লিউ আর্চার, পল আর্টিজান, লিন্ডসে গর্ডন, জো ক্যানোলি, রেক্স কার্ভার, এলভিস কোল, হ্যারি ড্রেসডেন, ড্যান ফরচুন, ডার্ক জেন্টলি, এলেনি কুইন, এমারসন কড, কেট ব্যানিংগান, ক্লিফ হার্ডি, মাইক হ্যামার, টমাস ম্যাগনাম, ভেরেনিকা মার্স, ফিলিপ মারলো, জিম রকফোর্ড, জন শাফ্ট আর ম্যাথিউ শাডার।‘ দেবেন্দ্রবিজয়, অরিন্দম, বাংলাদেশের কিশোর পাশা, মাসুদ রাণা আর মুসা আমন; আমাদের হুকাকাশি, কল্কেকাশি, নিশীথ রায়, ইন্দ্রনাথ রুদ্র, জয়ন্ত-মাণিক-সিন্দরবাবু জুটি , গুপি-পানু-ছোটোমামা জুটি, গোন্ডালু, কিকিরা, পাণ্ডব গোয়েন্দা, ট্যাঁপা-মদনা জুটি, গোগোল — এরাও সবাই দেখা দিয়েছেন কনফারেন্সে।

এঁরা সব্বাই একবাক্যে বলেছেন, যেখানে দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পচছে, রাজনৈতিক ফুসলানিতে তৈরী দাঙ্গায় মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ , সেখানে খুচরো দু একটা খুনের কিনারা করতে গোয়েন্দা পোষা, বিলাসিতা মাত্র, সরকারের ধুলো দেয়া জনতার চোখে। এইভাবে সাহিত্যের গোয়েন্দাদের মাধ্যমে সাহিত্যের সমালোচনা অভিনব ও বেনজির।

সংক্ষিপ্ত উপন্যাস এর সুবিশাল গণ্ডি

এই উপন্যাসটি অত্যন্ত চটি, টানটান। এটি সম্ভব হয়েছে একটি বিশেষ ফর্মের কারণে। সেটা হলো, ফ্ল্যাশব্যাক বা ডায়রি-লিখনের মাধ্যমে উপন্যাসের বেশিরভাগ অংশ বর্ণিত হয়েছে। কংকাল প্রেমিকের অতীত , রিমা খানের বর্তমান, এই দুই এর মধ্যে ঘুরেছে সমস্ত ঘটনা। অতি স্বল্প পরিসরে ভালোবাসা, সামাজিক সমস্যা, রাজনৈতিক কূটকচালি আর একটা রোমহর্ষক গোয়েন্দাকাহিনী এক সাথে বর্ণিত হয়েছে। লেখকের "অরূপ তোমার এঁটোকাটা " উপন্যাসেও ডায়রি লিখনের মাধ্যমে খুব স্বল্প পরিসরে অনেকটা ক্ষেত্র দেখানো গিয়েছিল। এই পদ্ধতিটি বেশ অভিনব বাংলা সাহিত্যে, যদিও কিছু কিছু এমন নজির আছে (যেমন 'স্ত্রীর পত্র' শুধু পত্র লিখনের মাধ্যমে জীবনের সত্যিটুকু তুলে ধরতে পেরেছিল)।

পুলিশের গোয়েন্দাগিরির পদ্ধতিটাও খুব ভালো ভাবে ধরা পড়েছে এখানে, যে পদ্ধতি শখের বা প্রাইভেট গোয়েন্দার পদ্ধতির চেয়ে অনেক আলাদা। ইনফরম্যার-এর ব্যবহার, ছিঁচকে অপরাধীকে ভয় দেখিয়ে ছোটখাটো কাজ করিয়ে নেওয়া , ফরেনসিক অ্যানথ্রপলজিস্ট এর মতামত নিয়ে আইনতঃ প্রমাণ সাজানো, দরকার পড়লে অনিচ্ছুক লোকের বাড়ির ফোনের তার কেটে টেলিফোন কোম্পানির লোক সেজে ঢুকে পড়ার ফিকির ইত্যাদি অনেক রকম উপায় সম্পর্কে আমরা অবহিত হই।

আবার কোন একটি কেস হঠাৎ করে পুলিশের কাছে দরকারি হয়ে পড়ে কেন, জমির বা রিয়াল এস্টেটের মাফিয়া কেন চায় যে একটা কোন সম্পত্তি দুর্নাম মুক্ত হোক, তা সে সত্যি বার করেই হোক বা বিশ্বাসযোগ্য সত্যি ক'রে , এই নানান জটিলতা ধরা থাকে এই উপন্যাসে।

মলয় রায়চৌধুরী নিজেই এই উপন্যাসের একটি চরিত্র হয়ে শেষ দৃশ্যে উদয় হন; কাহিনির সত্যতাকে পাঠকচেতনায় সংশয়ে রাখার প্রয়াসে, যুক্তি-তক্কো-গপ্প-র মতন, আর উপন্যাসের শেষে, অন্ততঃ একজন অপরাধীর উত্তরণ দেখা যায় মানুষ হিসেবে।

শেষকথা

সবটুকু মিলিয়ে বলা যায় যে এরকম প্রেমের উপন্যাস, যা কিনা অনেকগুলি বহুমুখী সত্যের ভিত্তিতে তৈরি করা বহুভূজের মধ্যে আমাদের এক অন্যরকম জীবনচেতনার মুখোমুখি করে দেয়, খুব বেশী লেখা হয় নি বাংলা ভাষায়। বিষয়বৈচিত্র্য ও সাহসী মনোজ্ঞ বর্ণনায় এই উপন্যাসটি বড্ড আলাদা, উৎকেন্দ্রিক, ঠিক এর লেখকের মতোই। পড়ে দেখতে পারেন সময় করে। মনের জটগুলো খুলে যাবে (অন্ততঃ আমার তো গেছে), আলো আসবে মনে।

শঙ্খ ঘোষ সম্পর্কে শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়

শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় ( কৃত্তিবাস, এপ্রিল-জুন, ২০১৭ ) : "শঙ্খ ঘোষ মহাশয় কিছুদিন আগে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার গ্রহণ করলেন । কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর হাত থেকে তিনি অন্য একটি পুরস্কার নিতে অসন্মত হন, কারণ তিনি ছিলেন হিন্দুবাদী, বিজেপি পার্টির নেতা । শঙ্খ ঘোষ যে সিপিএম-সিপিআই দলের সমর্থক এ কথা আমরা আগেই জানতাম, কিন্তু একথা জানতাম না প্রধানমন্ত্রী পদ পেলেও পার্টির নামের দুর্গন্ধ মোছে না। কবি হিসেবে শঙ্খ ঘোষকে আমি পঞ্চাশ দশকের প্রধানতম কবি বলতে চাই না । আমার মতে, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রধানতম কবি । তারপর প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত এবং আলোক সরকার ।"
                                      

Saturday, July 28, 2018

শৈলেস্বর ঘোষ সম্পর্কে সব্যসাচী সেনের বক্তৃতা

                                                                 
                                   প্রতিষ্ঠানে সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়েছেন শৈলেশ্বর ঘোষ
                                                        Saileswar Ghosh
হাংরি আন্দোলনের অন্যতম স্রষ্টা, হাংরি সাহিত্যের প্রাণপুরুষ তিনি। কবি শব্দ তাঁর কাছে 'বিদ্রোহ বাচক'। কবিতা তাঁর কাছে কোনো আদর্শের উপস্থাপনা নয়, কবিতা তাঁর কাছে চেতনার সম্প্রসারণ, আত্মার জাগরণ, নৈঃশব্দ্যের উন্মাদনা, অভিজ্ঞতার সমষ্টি, আধুনিকতার শবদেহের ওপর উল্লাসময় নৃত্য, স্বপ্নের মাতৃভাষা, ক্ষমতার মূল্যবোধ থেকে কবিতার ভাষাকে মুক্ত করা, প্রতিনিয়ত জীবন বাজি রেখে এক অনুসন্ধানমূলক যাত্রা, পবিত্র নৈরাজ্যের অন্ধকারের উৎসমুখ খুলে দিয়ে মানুষের অভ্যন্তর কেন্দ্রটিকে স্পর্শ করা ও কবিতাই মানুষের শেষ ধর্ম। যৌনতাকে তিনি ব্যবহার করেন চেতনার অনুসঙ্গ হিশেবে। কোনো শব্দই তাঁর কাছে অশ্লীল নয়। শব্দকে তিনি ব্যবহার করেন অন্তর্ঘাত ঘটানোর ও আক্রমণের অস্ত্র হিশেবে। তাঁর ভাষা মৃত আত্মার পরিস্থিতিকে জীবন্ত করে। ক্ষমতার মূল্যবোধে দীক্ষিত ও শিক্ষিত মানুষের মৃত ভাষায় তিনি আর কথা বলতে পারেন না। এই পৃথিবীতে জন্মেও তিনি নিজেকে অন্য গ্রহের জীব ভাবেন, এই কারণে এই পৃথিবী তাঁকে সম্পূর্ণ নিজের বলেও গ্রহণ করতে পারে না। হাংরি সাহিত্য আন্দোলনকে তিনি অনেকটা পথ পার করে দিয়েছেন। তিনি হাংরিকে নিয়ে কখনও মজা করেননি। তাঁর নেতৃত্বে হাংরি সাহিত্য আন্দোলনের মুখপত্র 'ক্ষুধার্ত', বাংলা সাহিত্যে প্রথম আভাঁগার্দ পত্রিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই হাংরি সাহিত্যের জাগরণ ঘটে। তাঁর নিরন্তর সৃষ্টিশীলতা হাংরি সাহিত্য আন্দোলনকে জীবন্ত করে রেখেছিল। তিনি অলআউট ক্ষমতার বিরোধিতা করেছেন। কবি শৈলেশ্বর লিখেছিলেন 'অন্তর্ঘাত চালিয়ে যাব।' শেষদিন পর্যন্ত তিনি তাঁর প্রত্যয়ভূমি থেকে নিজেকে উৎখাত করেননি। তিনি আমৃত্যু আত্মমগ্ন হয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার আনন্দ নিয়ে লিখেছেন উপদ্রুত ভাষায়, প্রচলিত ছকের বাইরে রূপ ও রীতিনাশক অন্তর্ঘাতী কবিতা। তিনি ভাষাপৃথিবীর পবিত্র নৈরাজ্যের স্বপ্ন বুকে নিয়ে পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক স্বর্গের পারিজাত বন। তাঁর কবিতা আমাদের আত্মার শুশ্রুষা করে- ওই আমরা যারা স্বেচ্ছায় কবিতা শহিদ হওয়ার জন্য নিজের ক্রুশ নিজেই বহন করে চলেছি...
                                                                 
                                বাংলোবাড়ি বানিয়ে ক্রুস বহন করছেন শ্রীশৈলেশ্বর ঘোষ
                                                                Saileswar Ghosh
                                                                           

ক্ষমতাসেবীদের দলে ঢুকে পড়ার আগে শ্রীশৈলেশ্বর ঘোষের বক্তৃতা

" একজন যিনি কবি হযে় উঠতে চান, তার আত্মবিমোচন পদ্ধতি শুরু হতেই যদি বুঝে যান যে তিনি ক্ষমতার বিপক্ষের লোক নন, তিনি ক্ষমতার পক্ষের লোক; তিনি যে ভাষা পেতে চান সেটি ক্ষমতাকে বিরূপ করে তুলবে -- তখন শুরু হয় তার ত্রাসের কাল | ভাষা বিমোচন তো দূরের কথা, এই সংঘর্ষের ক্ষেত্রটি থেকে পলায়নই তার বাঁচার পথ হয় | এমন রচনাকার আমরা দেখেছি যিনি ক্ষমতার ভাষাকে আঘাত করার আপাত একটা মানসিকতা দেখাচ্ছেন কিন্তু অনতিকালেই তিনি ওই পথ ত্যাগ করতে বাধ্য হন | তিনি ঢুকে পডে়ন ক্ষমতাসেবীর দলে |" 
---শৈলেশ্বর ঘোষ (ভাষা বিমোচন)
ক্ষমতাসেবীদের দলে ঢুকে পড়ার পর শ্রীশৈলেশ্বর ঘোষের বাংলো বাড়ি ।
                                             
ক্ষমতাসেবীদের দলে ঢুকে পড়ার পর মন্ত্রী আয়োজিত সভায় শ্রীশৈলেশ্বর ঘোষ
                                Saileswar Ghosh

বাংলোবাড়ির মালিক ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি যিনি নিজেকে সর্বহারা ঘোষণা করেছেন !
"এই সভ্যতার কাছে কবিই সবচেযে় বড় অপরাধী। কারণ সভ্যতার বেঁধে দেওযা় গন্ডীর সীমা কবিই প্রথম লঙ্ঘন করে। কবি শব্দই আমাদের কাছে বিদ্রোহবাচক। কবি, প্রচারিত মহত্বের আডালে কামার্ত মুখগুলি চিনে ফ্যালে - কবির চোখ সমস্ত গোপন হত্যাকাণ্ড দেখে ফ্যালে। যারা শ্রেষ্ঠ তাদের ধ্বংস করেই এই সভ্যতা আনন্দ পায়। কবি যথার্থ সর্বহারা সে সক্রিয় এবং আক্রমণকারী, তার হারাবার কিছুই নাই । সর্বহারা বলেই সে প্রতিটি শব্দের প্রকৃত ইতিহাস আবিষ্কার করতে পারে । আইনসম্মত বেশ্যাবৃত্তিই এই সভ্যতার চমকপ্রদ ইতিহাস। কবির সৃষ্টিকে ভয়ংকর ব'লে মনে করে । তার কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়। স্বপ্নহীন পৃথিবীতে কবিই কেবল স্বপ্ন দেখে । স্বপ্নহীন মানুষ কবির সৃষ্টিকে অশ্লীল মনে করে । বিদ্রোহকে বিকার মনে করে। ভালোবাসাকে অপরাধ বলে ঘোষণা করে। 'সাফল্য'ই কবির কাছে সবচেযে় অশ্লীল শব্দ। মেলাবে মিলিযে় দেবে সে কবি নয়, সে এক ঘুষখোর যে সস্তায় বাজিমাত করতে চায়।" 
---শৈলেশ্বর ঘোষ

অর্ণব সাহা : সর্বহারাদের কবি শৈলেশ্বর ঘোষ

                                 সর্বহারা বাবু শৈলেশ্বর ঘোষের বাংলো বাড়ি                           

ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকারবাহী আমাদের বাবু মধ্যবিত্তের যে নিক্তি মাপা ভাষার ঘেরাটোপ, তার ভিতরে সতর্ক পদচারণার সুফল হিসেবে যে বাবু- লেখকরা বছরের পর বছর সংবর্ধিত হন, পুরস্কৃত হন, তাদের অধিকাংশ লেখায় 'ডিকোম্পোসড' আত্মার দুর্গন্ধ টের পেয়েছিলেন শৈলেশ্বর। 

তার লড়াইটা সেই কারণেই শুরু হয়েছিল 'ভাষা বিমোচন' - এর তাড়নায়। লেখকের নিজস্ব রিয়ালিটি, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত থাকে অথবা যার অস্তিত্ব টের টেরই পাওয়া যায় না, তাকে প্রকাশ করতে গেলে ভাষার ওপর পাল্টা চাপ সৃষ্টি করতে হয়। সেই চাপের ফলে ডিকসান, সিনট্যাক্স বেঁকেচুরে যায়, তির্যক হয়ে যায়। তাঁর কবিতায় আর্তনাদ নেই, বরং যা রয়েছে, তাকে বলা যেতে পারে এক ধরনের 'ধাবমান অবস্থার অভিজ্ঞতা'। 

একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- ''যে সব কবি ক্ষমতাকে সেবা করেন, তারা তো পুরস্কৃত হবেন-ই। আমি ক্ষমতার এজেন্ডা বহন করি না, নিজের ভিতর থেকে ক্ষমতাকে বিলুপ্ত করতে চাই- ফলে ক্ষমতার দান গ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না।''
                                
মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দ্বারা পুরস্কৃত হবার একখানি দৃশ্য
                                      
                                  
                                     
                                        
         সর্বহারাদের কবি শৈলেশ্বর ঘোষের বাংলো 

Poet of the Proletariat Saileswar Ghose's Bungalow House 
                                                  


সৌরদীপ চ্যাটার্জি : হাংরি আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে তর্কবিতর্ক

হাংরি জেনারেশন” নিয়ে অনেক কথা শুনেছি, তবে সেটা কি ছিল, খেত না মাথায় দিত, সেসব নিয়ে একদমই কোনও আইডিয়া নেই। আমার শেষ সম্বল বই; সেদিন লাইব্রেরি ঘাঁটতে গিয়ে একটা বই পেলাম, “হাংরি জেনারেশন আন্দোলন” (প্রতিভাস, ১৯৯৫, কলকাতা)। লেখক, শৈলেশ্বর ঘোষ! এই ঘোষবাবু কে আমি জানি না, কস্মিনকালেও নাম শুনিনি। কৌতূহল থেকেই বইটা খুলে নিয়ে বসলাম। ঘোষবাবু দাবি করলেন, ইতিহাস লিখতে চান, কিন্তু তৃতীয় পুরুষে ‘হাংরি আন্দোলন ও তার সঙ্গে যুক্তরা’ থেকে শুরু করে লেখায় যেভাবে ‘আমরা’-তে চলে এলেন, তাতে মনে হয় ইনিও ওই আন্দোলনের কুশীলবদের কেউ হবেন।
যাই হোক, গোড়া থেকেই ঘোষবাবু প্রায় খ্যাপা ষাঁড়ের মত শিং বাগিয়ে তেড়ে এলেন। কারণ হাংরি সাহিত্যই নাকি তাই, ‘...এ সাহিত্যের কোনও বিনোদনমূল্য নেই—এ সাহিত্য আক্রমণাত্মক!’ তাঁর বা তাঁদের, মানে হাংরি জেনারেশনের সামনে লাল কাপড় দুলিয়েছিল ‘প্রতিষ্ঠান’, ফলে ‘প্রতিষ্ঠান’ নামক ধারণাকেই তূর্যধ্বনি করে তেজস্কর শৃঙ্গাঘাতে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য। লম্বাচওড়া নানা কথা অবশ্য আছে, “হাংরি কবি লেখকদের ঘোষিত উদ্দেশ্য, পাঠককে হস্টাইল করে তোলা” ইত্যাদি। প্রতিষ্ঠানই যত নষ্টের গোড়া, পাঠক প্রাতিষ্ঠানিক ভাবনার বাইরে কিছু ভাবতে পারছেন না, অতএব দাও সব ভেঙে। বিশেষ করে দেশ-আনন্দবাজারের ওপর রাগ তো বইটা যতখানি পড়লাম, তার প্রায় ছত্রে ছত্রে! শক্তি-সুনীল-সন্দীপন-উৎপল বসুদের নামেও কম লাভা বেরোয়নি (যদিও এদের কারোর লেখাই আমি পড়িনি, ফলে ন্যায্যতার বিচার আমি করব না)। শিবের গীতও যথারীতি গাওয়া হয়েছে, “হাংরি সাহিত্য সার্বিক মুক্তির কথা বলে!”
অতি উত্তম। তবে বইজুড়ে অজস্র বানান ভুল বাদ দিলে (সেটাও প্রতিষ্ঠানের দোষ, মানে প্রতিভাস প্রকাশনার ছাপার ভুল হতে পারে) সারা বই জুড়ে যা যা মণিমাণিক্য ছড়িয়ে আছে, তার কিছু স্যাম্পেল ছাড়ছি। বলে দিলাম, কোনও বক্তব্যই বিকৃত নয়, বইতে যা লেখা, সেইটুকুই অনুসরণ করেছি। বইয়ের ডিটেলস দেওয়া আছে, চাইলেই কেউ দেখে নিতে পারেন।
প্রথমেই নারীগনের পতিনিন্দা। “ষাট দশক থেকে ওই শতাব্দির (বানান অপরিবর্তিত) শেষ পর্যন্ত এই বাংলায় এমন কোনও কবি বা লেখকে পাওয়া গেল না, মেইনস্ট্রীম সাহিত্যে, যার রচনাকে যে কোনও দৃষ্টিতেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা যেতে পারে।... আমরা মনে করেছি, এই সাহিত্যের আর কোনও প্রয়োজন নেই।” পরের অংশ জুড়ে প্রতিষ্ঠানের নিন্দে। প্রতিষ্ঠানের ছাতায় সাহিত্য তৈরি হয় না, ইত্যাদি। আত্মত্যাগই আসল, যেভাবে বহু স্বনামখ্যাত সাহিত্যিক দিনের পর দিন অর্থাভাবে কষ্ট পেয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে মারা গেছেন, তা এনাদের কাছে মহৎ ত্যাগ! হাংরি কবিরা গেরুয়া পরে গঙ্গার ঘাটে বসে তপস্যা করতেন কিনা, সেটা অবশ্য লেখা নেই। যাই হোক। পরের ধাপে আসছে পুরষ্কার। প্রাতিষ্ঠানিক পুরষ্কারের জন্য বিবেচিত হওয়াটাও দোষের। কারণ? “নিজের জীবনের সত্যকে মানুষ দেখতে ভালোবাসে না।... যে রচনায় সত্যের এই উদ্ঘাটন হয়, এবং নবতর চেতনায় তা উদ্ভাসিত হয়, সেই রচনা পড়ার জন্য পাঠকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে না। শব্দের ক্ষমতা অসীম, সাহিত্য শব্দে সৃষ্ট বলে তা পাঠকে মর্মমূলে ঢুকে পড়বে, পাঠক আক্রান্ত বোধ করবে। এই শব্দস্রোতকে পাঠক এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এই বিপজ্জনক রচনাকে প্রতিষ্ঠান ভয় পায়! পুরষ্কার পাবে সেইসব রচনা, প্রতিষ্ঠান যাকে বাহবা দিয়ে বলবে, ‘বাহ এই তো!’” অর্থাৎ, পুরষ্কার পেলেই সেই রচনার জাত যাবে। আধুনিক লিটল ম্যাগের মত ব্যাপার আর কি, গছান ও গোছান, বিক্রি না হলে “বৈপ্লবিক সাহিত্য তো বাজারে বিক্রির জন্য নয়!”
এইবার আসল খেল। ঘোষবাবু প্রায় আধুনিক কবিতার ঢঙে ইতিহাস শুরু করেছেন... হুবহু তার কিছু অংশ, হীরে-জহরত খচিত অংশ, তুলে দিচ্ছি, কোনও মতামত ও এডিট ছাড়া।
১) “আধুনিকতা নাম্নী হিজড়েটিকে আমরা চুম্বন করতে পারিনি। ঐ সালঙ্কারা হিজড়েকে নিয়ে কবি লেখকদের লোফালুফি আমাদের স্তম্ভিত করেছে! আমাদের সৃষ্টি-লিঙ্গ চেয়েছে নারী, যার সৃষ্টি-যোনি আছে। আমরা এই হিজড়েকে আরও দেখেছি নপুংসক, দাঁতাল প্রতিষ্ঠানের কোলে বসে থাকতে...”
২) “আধুনিকতা রক্ষিতা হবার সমস্ত সর্তই (বানান অপরিবর্তিত) পূরণ করেছে। সে আর বিপ্লবী কবিলেখকদের প্রেয়সী নয়। তৃতীয় স্তরের পপ কবিলেখকদের আরাধ্যা সে।”
৩) “আধুনিকতার শবদেহের ওপর উল্লাসময় নৃত্যের নামই হাংরি জেনারেশন! হাংরি সাহিত্য! হাংরি আন্দোলন!!! উত্তরাধিকারকে বলি আমরা, ‘বাবা, আমার বর্বরতা তোমার বর্বরতাকে ধর্ষণ করেছে।”
৪) “...অন্যদিকে প্রতিষ্ঠান লালিত, মেইনস্ট্রীম সাহিত্যের অবস্থা ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া বয়স্কা নারীর মত!”
এসব মণিমুক্তো দেখে স্যাকরার দায়িত্ব আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম। ‘ইহা ছহিহ হাংরি নয়, ঘোষ অন্য ফ্যাকশন’ বাদে সবই সাদরে গৃহীত হবে। পদস্খলন তত্ত্বও।
                               
                      শৈলেশ্বরবাবুর বাংলোবাড়ি
                                       
                                    
    প্রতিষ্ঠান আয়োজিত সরকারি সাহিত্যসভায় শৈলেশ্বরবাবু
                                                 
                                                  
                                   
এই সরকারি সভায় হাংরি জেনারেশন নিয়ে মুখ খোলেননি শৈলেশ্বরবাবু

Comments
Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee হাংরি জেনারেশন নিয়ে উৎসাহী এমন কয়েকজনকে ট্যাগিয়ে রাখি। শারদ্বত মান্না Priyak Mitra Rudradeb Debsharma Bokom Buno Parichay Patra Bodhisatwa Bhattacharya
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Priyak Mitra
Priyak Mitra 😀 এ নিয়ে পরে কখনো কথা বলা যাবে সামনাসামনি। তবে এরম আলটপকা শৈলেশ্বর ঘোষের লেখা ইতিহাস পড়ার আগে শৈলেশ্বর ঘোষের কবিতা পড়তে পারিস। তোর হয়তো পোষাবে না। আর সন্দীপনের গদ্য আর উৎপল বসুর কবিতা আমার কাছে রাতের খাবারের মতন এসেনশিয়াল হয়ে গেছে একটা বয়সের পর থেকে। এদের ব্যক্তি আক্রমণ করেছেন শৈলেশ্বর, যিনি আমার আরেকজন প্রিয় কবি। কাজেই আমি এজাতীয় বিচারে যেতে ইচ্ছুক নই। তবে একটা কথা বলি, ভাস্কর চক্রবর্তী একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "আমাদের দশকে আন্দোলন প্রচুর হয়েছে, কবিতা কতটা হয়েছে জানি না"।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Amit Bikram Jana
Amit Bikram Jana মলয় রায়চৌধুরী....হাংরি আন্দোলনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিত্ব। ওনাকে ট্যাগ করলাম এ বিষয়ে বিশদে জানার জন্য।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Priyak Mitra
Priyak Mitra উনি এখানে কিছুই বলবেন না সম্ভবত।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee পাসওয়ার্ডটা রুদ্রাঞ্জনকে দিয়ে দ্যাখ। আচ্ছা, ও কি আমায় ব্লক করেছে? :(
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Priyak Mitra
Priyak Mitra না রে ভাই। ডিঅ্যাক্টিভেট করেছে। তোর আর ডোডোর কেমিস্ট্রিতে ব্লক ফকের গল্প নেই ;)


                                                           

Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee মানে একটা লোক 'ভাল' কবিতা লিখেছে মানেই তারপর সে যা খুশি বলতে পারে? গ্রেট। Priyak Mitra আলটপকা নয় ভাই, কবিতা আমি পড়ি না, ইতিহাস পড়ি।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Bokom Buno
Bokom Buno কোনো জিনিসের নিন্দে করতে গেলেও সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান দরকার হয়। তুমি শৈলেশ্বরবাবুর কথা প্রথমবার শুনেই মতামত জাহির করছো দেখে তোমার দুঃসাহসিকতায় যারপরনাই বিস্মিত হলাম। সমীর দেবী শক্তি সন্দীপন উৎপল বিনয় বাসুদেব অনিল করঞ্জাই ফাল্গুনী ত্রিদিব পড়ো। ফার্লিংঘেটির বিশ্লেষণ পড়ো। মামলার ধারাবিবরণী পড়ো। তারপর না হয় এ নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশিরভাগ হাংরি সাহিত্যকে বাল মনে করি।

Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Bokom Buno
Bokom Buno এ ব্যাপারে Surojit Sen কিছু বলতে পারেন।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Surojit Sen
Surojit Sen Bokom Buno হাংরি নিয়ে বিশেষ বলার কিছু নেই। একটা অন্য ধরণের আন্দোলন যখন সমাজে সাড়া ফেলে। তখন যারা শুরু করেছিল তারা যা সাফার করার করেছে। পরবর্তী কালে এর সঙ্গে যুক্ত অনেকেই একে অপরকে টেক্কা দিয়ে নিজে নাম কিনতে চায়।সর্বোপরি শৈলেশ্বরের মাথার উপর শঙ্খবাবুর আশীর্বাদ আছে, যাঁকে আমি বাংলা সাহিত্যের বাবা বড় কাছারি বলে শ্রদ্ধা করি। তুলনীয় আশির দশকের নকশাল আজিজুল হক।😌
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y · Edited
Swati Moitra
Swati Moitra আমার এ বিষয়ে পড়াশোনা কম, যদিও কিছু হাংরি কবিতা ভালো লাগে। তবে আরেকটু চর্চা না করে সমালোচনা করা মুশকিল, আমার পক্ষেও, তোরও। রেফারেন্স সাইটেশন কই, স্যার?
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y · Edited
Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee সন্দীপন উৎপল ছেড়ে দিলাম, আমি সুনীল, শক্তি, জীবনানন্দ, সুধীন্দ্রনাথ, সমর সেন, জয় ইত্যাদি কিছুই পড়িনি। পড়ার প্রয়োজন মনে করিনি। করব বলেও মনে হয় না।এইটাকে দুঃসাহস মনে হলে তাই, কারণ আমি মানুষটা এমনিতে খুব একটা সাহসী নই। =D

নিন্দে করা আমার উদ্দেশ্য নয়। এই স্টেটাসে কোথাও সেটা করাও হয়নি। উনি যা লিখেছেন, আমি সেই লেখার ভাষা, বক্তব্য ও ধরণকেই নির্লিপ্তভাবে তুলে ধরেছি। লিখেও দিয়েছি, কোনও মতামত ছাড়া।

শেষ লাইনটাকে মোক্ষ বলে ধরলাম। Bokom Buno

Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Bokom Buno
Bokom Buno এই স্ট্যাটাসটি শৈলেশ্বরবিশ্লেষণী নয়, হাংরিবিদ্বেষী। সুতরাং এটি লিখতে গেলে পড়তেই হবে
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee বিদ্বেষী কই? শৈলেশ্বর যা লিখেছেন, আমি শুধু তুলে দিয়েছি। ব্যাস। কিছু কুযুক্তি কেটেছি, সেগুলো উপেক্ষা করা চলে। :P
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee একটা প্রতিষ্ঠানবিরোধী সাহিত্য আন্দোলন, যা কিনা প্রতিষ্ঠানের বাপান্ত ছাড়া আর কিছুই করে উঠতে পারেনি (বলে লেখক প্রায় স্বীকারই করে নিয়েছেন), তার ইতিহাস লিখতে গিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত লেখক হিজড়ে-রক্ষিতা-মেনোপজ হয়ে যাওয়া নারী থেকে নারীত্বের ধারণাকে যেভাবে তSee more
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Swati Moitra
Swati Moitra না, এই নিয়ে অনেক কিছু বলা যায়। আমি নেহাত পড়িনি বলে ঠিক কেন এই ভাষা উনি ব্যবহার করছেন, সেটা না বুঝে শুধু খিস্তি করা বানাল হয়ে যাবে, ওই সিনেমার ট্রেলার দেখে যেরকম আজকাল কাগজে সমালোচনা বেরিয়ে থাকে, সেরকম। আমার আশেপাশে সর্বত্র এই ভাষাতেই তো কথা হয়।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee অতএব, বিশেষ প্রেক্ষিতে এই ভাষা ব্যবহার করা চলে?? :P :P
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Swati Moitra
Swati Moitra শাক্যকে ট্যাগ কর।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee করে দাও। আমার লিস্টে নেই।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Swati Moitra
Swati Moitra চলে না। কিন্তু আমার কথা তো নারীবাদী হয়ে যাবে। সমালোচনা করতে হলে জেনে করলে অন্তত নারীবাদটা ডিফেন্ড করতে পারবো।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee হোক না। নারীবাদ হলে খারাপ কি? আমার তো মনে হয় কোনও অবস্থাতেই এই ভাষা ব্যবহার করা চলে না। যেমন কোনও অবস্থাতেই রেপ করা চলে না। সে পোষাক থাকুক আর না থাকুক।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Swati Moitra
Swati Moitra Sakyajit Bhattacharya, পারলে একবার এদিকে এসো। আমার সিলেবাসের বাইরে কিছু প্রশ্ন করছে সৌরদীপ, তোমার বোধহয় এই নিয়ে পড়াশোনা আছে।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Sakyajit Bhattacharya

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Swati Moitra
Swati Moitra Hungry generation niye Sourodeep motamot chae.
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Swati Moitra
Swati Moitra মানে আধুনিকতা এজ হিজরে - এই লাইনটাই যথেষ্ট আপত্তিজনক। কি বলবো? কি বলার থাকতে পারে? এটার কোনো সাবঅল্টারন ডিফেন্স তত্ত্ব নিশ্চয় আছে যেটা আমি জানিনা, তবে ওই আরকি।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Priyak Mitra
Priyak Mitra এখানে একটা বড় ক্রাইসিস আছে। হাংরি, ফাল্গুনী রায় তুষার রায়, নবারুণ সকলের সম্পর্কেই কমবেশি পুরুষতান্ত্রিকতার অভিযোগ উঠবেই। উঠতে বাধ্য। কিন্তু সাহিত্যের কিছু ক্ষেত্র এতটাই ধূসর যে গুণমান আর বক্তব্যের বিষয়ীগত অবস্থানকে আলাদাও করা যায়না, আবার সহজ কোনো সারমরSee more
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee আমি হইনা। অনেকেই হন। অনেকেই বঙ্কিমকে পুরুষতান্ত্রিক বলেন, কারণ তিনি ফিফথ ওয়েভ ফেমিনিজম জানতেন না। সেইসব সুপক্ক শুভ্রকেশ গাণ্ডুদের বাদ দিলাম। কিন্তু হাংরির মত আন্দোলন, যারা সত্যিই এইসব নিয়ে চর্চা করত, তারাও নব্বইয়ের দশকে লেখা বইতে এইসব লিখবে?? =D
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Priyak Mitra
Priyak Mitra নব্বই না। ষাট। যখনই বইটা লেখা হোক। হাংরির কেউই ষাটের দশক থেকে বেরোন নি। এখন তাহলে বিট প্রজন্ম মানে কেরুয়াক, উইলিয়াম বারোজ এদের নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হয়। ইনফ্যাক্ট প্রশ্ন তোলাই উচিত, তবে তাই নিয়ে আন্দোলন টান্দোলন না করলেই হল।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Priyak Mitra
Priyak Mitra বিট প্রজন্মের কথা বললাম কারণ ষাটের দশকে বিট প্রজন্মের একটা প্রভাব ছিল সাংস্কৃতিক মহলে।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Swati Moitra
Swati Moitra বঙ্কিমের মতন নারী চরিত্র আজকেও মেলা দুষ্কর। এটা সব কিছু মাথায় রেখেই বলছি। কপালকুন্ডলা জিজ্ঞেস করছে, কই, স্বামী সংসার করে খুশি তো হলাম না, এটা ওই সময়ে বসে ভাবা যায়?
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee Swati Moitra তাহলে এর পর যোগী আদিত্যনাথ যদি বলেন মেয়েদের কাপড় ঠিক না থাকলে রেপ হওয়াই উচিত, আমরা আগে আদিত্যনাথের বলার পিছনে কি সাবঅল্টার্ন ডিফেন্স তত্ত্ব আছে সেটা দেখবো তো?? =D
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Abhinandan Banerjee
Abhinandan Banerjee তোর ষাঁড়টা হেব্বি পপুলার হয়ে গেসে। Arkadeb Bhattacharya
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Priyak Mitra
Priyak Mitra এর মাঝে একদিন সম্ভবত অনিন্দ্যদার পোস্টেই ' চাঁদের পাহাড় ' নিয়ে কথা হল। এখন 'চাঁদের পাহাড়' আফ্রিকাকে তার নির্ধারিত অবস্থান থেকেই দেখে থাকতে পারে, কিন্তু 'চাঁদের পাহাড়' কিন্তু আফ্রিকার ভেতরের প্রাচ্যবাদকে পশ্চিমী সভ্যতার বিপরীতে দাঁড় করিয়েছে। সেই প্রাচ্যSee more
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y · Edited
Swati Moitra
Swati Moitra আমি দেখিনা। কেন বেশি কথা বলছিনা বললাম তো। বাংলা সাহিত্যের হোলি কাউদের নিয়ে প্রশ্ন তুললে খিস্তি খেয়েই থাকি, এখানেও খাবো না হয়।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Achintya Biswas
Achintya Biswas আমি বহু অনুরুদ্ধ হয়ে হাংরি নিয়ে লিখেছিলাম 'হাওয়া বন্দুক ও কাঠের ঘোড়া' ; ১৯৯২ হবে ৷ এই ষণ্ড-মহারাজ খুব ক্ষুব্ধ হন ৷ আমি ওটা সাহিত্য আন্দোলন মনে করি না ৷
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y · Edited
Ritwick Bhattacharyya
Ritwick Bhattacharyya বললেই হয় যে ফ্রাস্ট্রু খাওয়া , ফুটেজবঞ্চিত 'কবি/লেখক'দের নিজের মতামত(সাহিত্য) জোর করে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এবং সেটাকে সাহিত্য 'সৃষ্টি'র আন্দোলন বলে চালানোই হল হাংরি আন্দোলন।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee সে তো অবশ্যই। লিটল ম্যাগের বেশিরভাগ লেখকরা কেন প্রতিষ্ঠানকে খিস্তি করে? কারণ তাদের লেখা এতটাই খাজা যে প্রতিষ্ঠান রিজেক্ট করে দেয়।

ব্যতিক্রম আছে। তবে আশিভাগের গল্প এটাই। :P :P

Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Swati Moitra
Swati Moitra প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতা খুব ভালো জিনিস। কোন প্রতিষ্ঠান অবশ্য প্রশ্ন থেকে যায়। পুরুষতন্ত্রও তো একটা প্রতিষ্ঠান, তাই না?
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Ritwick Bhattacharyya
Ritwick Bhattacharyya ভাই আমি স্বীকার করে নিচ্ছি যে আমি সাহিত্য বুঝি না। ভাল গল্প,উপন্যাস, কবিতা যা পাই বুঝতে পারলেই গিলে নিই। কিন্তু এটুকু বুঝি যে যারা ভালো আর্টিস্ট তাদের কাজের প্রশংসা করতে হয়। ওরা সম্মান পাচ্ছে অতএব ওরা খারাপ এরকম মেন্টালিটি নিয়ে চলা যায় না।অনেকেই প্রাপ্য সম্মান পান না, অনেকেই বেশিই পান এটা মাথায় রেখেই বলছি।
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Mousam Nandi
Mousam Nandi হাংরি নিয়ে মলয় বাবুর কিছু বই আছে...পারলে পড়ো...আর হাংরি রা বানান ভুল করত ইচ্ছে করে...তবে এটুকু বলি...তোমার লেখা সাধারণত তথ্যবহুল হয় বলে বিশ্বাসযোগ্য হয়...তবে এ নিয়ে তোমার খুব একটি ধারণা নেই বুঝলাম...কনসেপ্ট ক্লিয়ারাও
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee ইচ্ছে করে বানান ভুল করাটা চোদনামো। তাহলে হাংরিরা চোদনা ছিল মেনে নিতে হয়।

আমি তো ভাই তথ্য দিয়ে লিখিনি। বইতে যা যা আছে, তুলে দিয়েছি। হাংরি এতটাই অপ্রাসঙ্গিক যে সেসব নিয়ে কনসেপ্ট ক্লিয়ার করার খুব একটা ইচ্ছে নেই। ফ্রি-তে লোকে খিস্তি করার সুযোগ পাবে ভেবে এই থ্রেড খুলেছি। :P

Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Bhaskar Khanra
Bhaskar Khanra হাংরিদের বিরুদ্ধ সমালোচনাই বেশি হয়েছে। বেশিরভাগ সময়েই অল্প পড়ে বা না পড়েই। সমালোচনা যা হয়েছে তা মূলত ভাষা প্রয়োগ ও তা দ্বারা সৃষ্ট অশালীনতা নিয়ে। নীতিবাদী ধারণা সেখানে কাজ করেছে। তাই এ বিতন্ডা আহামরি নতুন নয়। তবে হাংরিদের লেখা পড়ে দেখা যেতেই পারে। সSee more
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
অভিষেক ঘোষাল
অভিষেক ঘোষাল বাসুদেব দাশগুপ্তের গল্প...
Manage

LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Souradeep Chatterjee
Souradeep Chatterjee ^এই কমেন্টটির সাথে একমত। এইজন্যই তো চেতন ভগতের গল্পও আগে পড়ে দেখা উচিত। কারণ, "পড়ে দেখা যেতেই পারে!" পাঠযোগ্য সবকিছুই।
Manage

                                                                                  

হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে

  হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে প্রখ্যাত কবি, হাংরির কবি দেবী রায় ৩ অক্টোবর ২০২৩ চলে গেছেন --- "কাব্য অমৃতলোক " ফ্ল্...