প্রতিষ্ঠানে সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়েছেন শৈলেশ্বর ঘোষ
Saileswar Ghosh
হাংরি আন্দোলনের অন্যতম স্রষ্টা, হাংরি সাহিত্যের প্রাণপুরুষ তিনি। কবি শব্দ তাঁর কাছে 'বিদ্রোহ বাচক'। কবিতা তাঁর কাছে কোনো আদর্শের উপস্থাপনা নয়, কবিতা তাঁর কাছে চেতনার সম্প্রসারণ, আত্মার জাগরণ, নৈঃশব্দ্যের উন্মাদনা, অভিজ্ঞতার সমষ্টি, আধুনিকতার শবদেহের ওপর উল্লাসময় নৃত্য, স্বপ্নের মাতৃভাষা, ক্ষমতার মূল্যবোধ থেকে কবিতার ভাষাকে মুক্ত করা, প্রতিনিয়ত জীবন বাজি রেখে এক অনুসন্ধানমূলক যাত্রা, পবিত্র নৈরাজ্যের অন্ধকারের উৎসমুখ খুলে দিয়ে মানুষের অভ্যন্তর কেন্দ্রটিকে স্পর্শ করা ও কবিতাই মানুষের শেষ ধর্ম। যৌনতাকে তিনি ব্যবহার করেন চেতনার অনুসঙ্গ হিশেবে। কোনো শব্দই তাঁর কাছে অশ্লীল নয়। শব্দকে তিনি ব্যবহার করেন অন্তর্ঘাত ঘটানোর ও আক্রমণের অস্ত্র হিশেবে। তাঁর ভাষা মৃত আত্মার পরিস্থিতিকে জীবন্ত করে। ক্ষমতার মূল্যবোধে দীক্ষিত ও শিক্ষিত মানুষের মৃত ভাষায় তিনি আর কথা বলতে পারেন না। এই পৃথিবীতে জন্মেও তিনি নিজেকে অন্য গ্রহের জীব ভাবেন, এই কারণে এই পৃথিবী তাঁকে সম্পূর্ণ নিজের বলেও গ্রহণ করতে পারে না। হাংরি সাহিত্য আন্দোলনকে তিনি অনেকটা পথ পার করে দিয়েছেন। তিনি হাংরিকে নিয়ে কখনও মজা করেননি। তাঁর নেতৃত্বে হাংরি সাহিত্য আন্দোলনের মুখপত্র 'ক্ষুধার্ত', বাংলা সাহিত্যে প্রথম আভাঁগার্দ পত্রিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই হাংরি সাহিত্যের জাগরণ ঘটে। তাঁর নিরন্তর সৃষ্টিশীলতা হাংরি সাহিত্য আন্দোলনকে জীবন্ত করে রেখেছিল। তিনি অলআউট ক্ষমতার বিরোধিতা করেছেন। কবি শৈলেশ্বর লিখেছিলেন 'অন্তর্ঘাত চালিয়ে যাব।' শেষদিন পর্যন্ত তিনি তাঁর প্রত্যয়ভূমি থেকে নিজেকে উৎখাত করেননি। তিনি আমৃত্যু আত্মমগ্ন হয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার আনন্দ নিয়ে লিখেছেন উপদ্রুত ভাষায়, প্রচলিত ছকের বাইরে রূপ ও রীতিনাশক অন্তর্ঘাতী কবিতা। তিনি ভাষাপৃথিবীর পবিত্র নৈরাজ্যের স্বপ্ন বুকে নিয়ে পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক স্বর্গের পারিজাত বন। তাঁর কবিতা আমাদের আত্মার শুশ্রুষা করে- ওই আমরা যারা স্বেচ্ছায় কবিতা শহিদ হওয়ার জন্য নিজের ক্রুশ নিজেই বহন করে চলেছি...
বাংলোবাড়ি বানিয়ে ক্রুস বহন করছেন শ্রীশৈলেশ্বর ঘোষ
No comments:
Post a Comment