Tuesday, August 24, 2021

অজিত রায় লিখেছেন

 অজিত রায় লিখেছেন

মলয় রায়চোধুরীকে বাঙালি পাঠক এখন অনেক ভাবে চেনে। ষাট দশকের হাংরি আন্দোলনের পুরোধা পুরুষ, নতুন কবিতাধারার প্রবর্তক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সমালোচক ও অনুবাদক; মায়, দু-একটি কাঁপা হাতের স্কেচও আমরা দেখেছি। এই ভার্সাটাইল কাজকর্ম নিয়ে, তিনি একজন পোস্টমডার্ন ভাবুক। জীবনের যা কিছু ---- বাঁচা, বেঁচে থাকা, ভাষা সংস্কৃতি শিক্ষা, বিজ্ঞান অর্থনীতি রাজনীতি, ভূগোল ইতিহাস সাহিত্য ইত্যাদি প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁর ভাবনাগত আনাগোনা। অথচ তিনি নিজেকে কোন বিশেষ অভিধায় চিহ্নিত করতে নারাজ। কেননা তিনি মনে করেন নিজেকে বা অপরকে অভিধায়িত করার যেসব শব্দাবলি চারপাশে সাজানো আছে, এখনো, সবই ব্রিটিশ মাস্টারদের ফেলে-যাওয়া বইপত্র, অভিধান আর আধুনিকতাবাদীদের বুকনি থেকে নেওয়া। অথচ মলয় বিশ্বাস করেন শেষ বিশ্বযুদ্ধোত্তর দুনিয়ার যে হালচাল, রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি তাতে সেরকম মডারনিস্ট স্পেশালাইজড ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠার সার-বীজ সব পচে-হেজে নষ্ট হয়ে গেছে। 'আধুনিকতা' ব্যাপারটাই এখন 'একখানি ধ্রুপদী জোচ্চোর'। বলেছেন তিনি, এতদিন, 'আধুনিকতা ভালো, নৈতিক, নান্দনিক, প্রগতিশীল, উন্নত, কাম্য, কল্যাণময় এমনতর ভাঁওতায় ভুলিয়ে রাখা হচ্ছিল বাংলা ভাষাকে।' এহেন সময়ে একজন সমাজ ও সময় সচেতন লেখক যা করতে পারেন, তা হলো, বিগ্রহ ভাঙার কাজ। মলয় রায়চোধুরীর বেশির ভাগ রচনায় হাতুড়ির সেই চিহ্ন আমরা দেখেছি। কোন ধর্মভীরুতা বা প্রলোভন তাঁকে এই ভাঙার কাজ থেকে নিরস্ত করতে পারেনি, না বিদ্যায়তনিক মাস্তানদের ঘাতক-ছুরি। বাংলা ভাষায় প্রতিষ্ঠিত আধুনিক ও এঁদো চিন্তাভাবনা ও তার ভেক্টর প্রতিষ্ঠানের মুখে জোর থাপ্পড় মেরে তার গিল্টি-করা দাঁত উখড়ে দিতে চেয়ে মলয়ের লেখার জগতে প্রবেশ। আজীবন অর্জিত নিজের ভোগান্তি, অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা আর প্রজ্ঞাকে অস্ত্র করে তিনি যা-কিছু প্রাতিষ্ঠানিক চিন্তা-উদ্ভূত, মেরে লটলট ধ্বসিয়ে ফেলতে চেয়েছেন। একজন কালচেতন, সদাজাগ্রত লেখক প্রতিষ্ঠানের সামনে কী ভীষণ প্রব্লেম্যাটিক হয়ে উঠতে পারেন, তার জলজ্যান্ত মিশাল মলয় রায়চোধুরী।
 
নিজেকে কালচারাল বাস্টার্ড বলেছেন মলয়। নিজেকে বলেছেন, বাঙলার মূল সংস্কৃতিতে আউটসাইডার। তাঁর বিভিন্ন রচনা,গল্প ও উপন্যাসে আমরা তাঁর সেই জারজ উপাদানের সুসম্বদ্ধ রূপটি গড়েও নিতে পারি। মজার ব্যাপার হচ্ছে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের অভিজ্ঞতাহীন, হতাশাখোর, তথাকথিত শিক্ষিত হায়ারক্লাস বুদ্ধিজীবীরা মলয়ের পশ্চিমবঙ্গ-হামলার মনসুবাটা ধরতে পারেননি। আমি নিজে তথা-অর্থে 'বহিরাগত' হওয়ার দরুন স্থূল ও সূক্ষ্ম দু-নিরীখেই অনুধাবন করেছি পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সাংস্কৃতিক ও রাজনীতিক কাঠামোর মূল স্বরূপ বিশ্লেষণে মলয় কিন্তু আগাগোড়াই খুব পুঙ্খানুপুঙ্খ, যার তন্নতন্ন প্রতিফলন তাঁর লেখাজোখায় দুরনিরীক্ষ্য নয়। বাঙালির ভিড় থেকে, হরির লুঠ থেকে, বাঁধাধরা বঙ্গ-কালচার থেকে স্বেচ্ছাবিচ্ছিন্ন এবং সর্বোপরি ভারতবর্ষীয় হিন্দু-বাঙালি সংস্কারের সর্বোচ্চ পীঠ বলে কথিত কলকাতা থেকে ২৬০ কিমি দূরে পড়ে আছি বলেই আমার কাছে ইঁদুরের প্রতিটি লাফ আর চাল জলবৎ ধরা পড়ে। তথাকথিত 'প্রবাস'-যাপনের সুবিধে এটাই যে, নিজের সঙ্গে অন্যের সাদৃশ্য ও পার্থক্য হবহু ধরে ফেলা যায়। দেখতে পাই দ্বৈরাজ্যের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই বিশ্বচরাচর, তার প্রতিটি নড়ন ও চড়ন। মলয় রায়চোধুরী আজন্ম মূল বঙ্গ-সংস্কারের বাইরে বাস করে এই একই মাইক্রো-দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলা ও বাদ-বাংলার সংস্কৃতিকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি দেখেছেন যে-বঙ্গসংস্কৃতিকে নিয়ে বাঙালির এত আত্মম্ভরিতা, গুমর আর বারফট্টাই ----- সেই বিশুদ্ধ বঙ্গসংস্কৃতির হদিশ পৃথিবীতে আজ কোথাও নেই। ইতিহাসের বিভিন্ন ধাপে নানা জাতি ও সংস্কারের,বিশেষত মুসলিম ও ইংরেজ বেনিয়ার শাসনে, সর্বোপরি ভৌগোলিক কাটছাঁট, দেশভাগ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ঔপনিবেশিক স্পৃহার খপ্পরে পড়ে বাঙালি নিজের সর্বস্ব আজ খুইয়ে ফেলেছে। এমনকী, বিশুদ্ধ পশ্চিমবঙ্গীয় সংস্কৃতিও আজ মিথ মাত্র। ভারতবর্ষীয় বাঙালির কোন সংস্কৃতিই আজ অবশিষ্ট নেই; সময়ের চাপে সব উচ্ছন্নে গেছে। জন্ম নিয়েছে এক জগাখিচুড়ি কালচার। ছত্রখান সংস্কৃতি। বাঙালির পোশাক পাল্টেছে বহুদিন হল,বহু খোঁপা আর সিঁথি এখন বিদেশিনী হয়ে গেছে, এমনসব হেয়ারডু যা বাঙালি কস্মিনকালে ভাবেনি। পুরুষেরা তামুক দোক্তা বিড়ি গড়গড়া ছেড়ে সিগারেট বিয়ার ব্রাউনসুগারে মজেছে। যে-ফুটবলে বাঙালির নিজস্ব দাপ ছিল তা এখন আকখা ওয়ার্ল্ড খেলছে, বাঙালি লোকাল ট্রেনে আর রকে বসে খেলছে তিন-পাত্তি, টোয়েন্টি নাইন। বাঙালি টুসু ভাদু রবীন্দ্রসঙ্গীত ভুলে পাঞ্জাবি পপে মাজা দোলাচ্ছে। পড়াশোনা চাকরি ব্যবসা থেকে ক্ৰমে উৎখাত হতে হতে বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি বলে যা রয়ে গেছে, তা হলো, রকে বসে বুকনি ঝাড়া, পরস্পর পেছনে লাগা, লেংগি মারা, মিথ্যে বলা, হীনমন্যতা, চা চপ ঝালমুড়ি, লোকনিন্দা, ভাইয়ে-ভাইয়ে হিংসে, কথায় কথায় মাথাগরম আর খিস্তিবাজি। পাশাপাশি শনি-শেতলার পুজো, তৃণমূল-সিপিএম, আর দুগ্গাপুজোয় চাঁদা আর হুল্লোড়বাজি।
 
তো, এইখান থেকে আমাদের পাঠ শুরু হয় মলয়-ট্রিলজির শেষ পর্দা-ফাঁস উপন্যাস "নামগন্ধে"র। মলয় জনান্তিকে বলেছেন, এ-উপন্যাস পশ্চিমবঙ্গের কোনো সম্পাদক ছাপতে সাহস পাননি, যে কারণে ঢাকার লালমাটিয়া থেকে বেরিয়েছিল আগে, পরে হওয়া ৪৯ থেকে বেরোয়। গোড়াতেই ফাঁস হয়ে গেল নামগন্ধে কী মাল তিনি দিয়েছেন এবং যা অবধার্য হয়ে উঠেছে এসময়ে, মলয়ের পাঠকৃতি সেই আধুনিক ঝোঁকে স্বতঃউৎসারিত। স্বীয় আয় করা দৃঠি ও অভিজ্ঞতাকে ছিঁড়ে পাঠবস্তুর টুকরো পাত্রে স্বত্বহীনভাবে বিলিয়ে দিচ্ছেন বহুরৈখিক আয়ামে। তাঁর অন্যান্য রচনার মতো এ উপন্যাসও দামাল ঝাপটা মারে ঝাদানভ-প্লেখানভদের বাঙালি ভাবশিষ্যদের এতদিনকার নির্বিঘ্নে মেলে রাখা অরজ্ঞানডির ভুলভুলইয়াপনায়। নামগন্ধেও কাহিনী পরিণাহটি ন্যূন, বক্তব্যেই মূলত মাটাম ধার্য করেছেন মলয়। তিনি সঠিক কষে ফেলেছেন যে বর্তমান কালখণ্ডে ভারতবর্ষীয় হিন্দু-বাঙালির তথাকথিত সংস্কৃতি মূলত ক্ষমতাকেন্দ্রের ও তার চারপাশের সংস্কৃতি। মানে, ঐ কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী হাওড়া-হুগলি-চব্বিশ পরগণার সংস্কৃতি। সুতরাং গুনসুঁচ নিয়ে ধেয়েছেন ওই ক্ষমতাকেন্দ্রটিকে বেঁধবার জন্য।
 
উপন্যাস শুরু হচ্ছে একটা সন্ত্রাস দিয়ে, মলয়ের এটা অমোঘ টেকনিক, ----- পাঠকের সামনে সন্ত্রাস ঘটিয়ে, তাকে তার মধ্যে হিঁচড়ে ঢুকিয়ে সন্ত্রস্ত করে, সন্ত্রাসের বিভীষিকা মেলে ধরা। বঙ্গ-কালচারের বর্তমান হাল বোঝাতে মলয় হাওড়া জেলার ভোটবাগানের লোহার কাবাড়িখানা, নদিয়া জেলার কালীগঞ্জের কাঁসা-পেতলের ভাংরি, বিভিন্ন জেলার আলুর কোল্ড-স্টোরেজ মন্তাজ করে ফুটিয়ে বঙ্গভূবন একাকার করে ফেলেছেন। 'মুসলমান রাজার আমলে যেমন ছিল তালুকদার দফাদার পত্তনিদার তশিলদার মজুমদার হাওলাদার, এই আমাদের কালে হয়েচে পার্টিদার, আজগালকার জমিদার'। নমঃশূদ্রদের খুন ধর্ষণ বাড়িঘর জ্বালিয়ে যখন তাড়ানো হয়েছিল খুলনার মাইড়া গ্রাম থেকে, পঞ্চাশ সনে, যুবক ভবেশকাকা রাতারাতি পালিয়ে এসেছিল কচি ফুটফুটে সৎ বোনকে কোলে নিয়ে। পুরনো বাড়ির পাড়ায় ইউনাইটেড রিহ্যাবিলিটেশন কাউনসিলের 'আগুন-খেকো নেতা' ছিল ভবেশকাকা, যিনি বিধান রায় ট্রামের ভাড়া এক পয়সা বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ট্রামে আগুন ধরিয়ে দেন। তিরিশ বছর আগে আরামবাগি প্যাঁচে কংগ্রেসি আলুর দাম হঠাৎ বাড়লে, খাদ্য আন্দোলনের দিনগুলোয়, তুলকালাম করেছিলেন। দেশভাগের খেলাপে নারাবাজি করেছিলেন, 'হাতে পেলে জহোরলাল জিনহাকে চিবিয়ে পোস্তবাটা করে'।। সেই ভবেশ মণ্ডল আজ মোকররি আর চাকরান মিলিয়ে বাহান্ন বিঘে জমি আর একলাখ কুইন্টাল ক্ষমতাসম্পন্ন মোহতাজ হিমঘরের অংশীদার। যিশুর / লেখকের মন্তব্য : 'আজকাল গ্রামগুলোর সত্যের স্বামীত্ব ভবেশকাকাদের হাতে।' আর 'চাষির মুখের দিকে তাকালে সর্বস্বান্তের সংজ্ঞা টের পাওয়া যায়।'
 
মলয় নিজেকে গদ্যকার সাব্যস্ত করতে আদৌ গল্প-উপন্যাসে আসেন নি। তবু, গোড়া থেকেই যেটা সচেতনভাবে করেছেন, গল্প-বানানোর প্রথাগত টেকনিক ও সিদ্ধ নিয়মগুলোকে বানচাল করে বাংলার চলে-আসা মূল সাহিত্যধারাকে একেবারে অস্বীকার করার চেষ্টা। ভাষার ক্ষেত্রেও মিথ, দুয়ো শব্দকলাপ ও পড়িয়ে-নেওয়ার যাবতীয় সরঞ্জাম ইস্তেমাল। এবং বিষয় পুরোপুরি অধীত, সংপৃক্ত, যেন রিচার্ডস ওয়ার্ক পড়ছি। যেমন, 'ডুবজলে', 'জলাঞ্জলি' আর 'নামগন্ধ' ---- এই ট্রিলজিতে মলয় এক-গোছের চাকরির জিগির এনেছেন, সেটা হল, টাটকা আর পচা নোট আলাদা করা, একশোটা নোটের প্যাকেট তৈরি করা, এভাবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, যেন, 'অর্থনীতির স্নাতক হবার এই-ই পরিণাম। অমন বিতিকিচ্ছিরি কায়িক শ্রম করবার জন্যে ওই অফিসটা চেয়েছিল অর্থনীতি গণিত কমার্সে ভালো নম্বর প্রাপক স্নাতক।' অন্যদিকে, আজন্ম শহরবাসী মলয় কীভাবে পশ্চিমবাংলার গ্রামাঞ্চলে পরিব্যাপ্ত রাজনীতি, অর্থনীতি, দুর্নীতি আর কালচার জরিপ করেছেন তা 'নামগন্ধে' পড়ে থ মেরে যায় পাঠক। 'এই ভেবে যে কী করে পারেন! রীতিমত 'আলু-সমাজ-নাম'গুলোর গন্ধতালাশ। প্রান্ত গন্ধ।' কাহিনী বা নাটক সেখানে ন্যূন, আগেই বলেছি, বরং তা ঘনিয়ে ওঠার সম্ভবনা দেখা দিলে মলয় তা নিরাসক্ত ও নির্মোহ মনে ভেঙে দিয়েছেন। অন্বেষণের মেধা প্রোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে পাতায়-পাতায়, বিশেষত উপন্যাসের শেষ দিকটা মার্ভেলাস। খোদ মলয়ের জীবন যেমন, উপন্যাসও তেমনি ----- জীবনেরই, অথচ প্রথানুগতের বাইরে। জীবনেরই ছোট ছোট খণ্ড, জীবনের সমাহার যেন, সম্পূরক। যেমন একযুগ পর ভবেশকাকার।বোন খুশিদিকে দেখে অপ্রত্যাশিত ধাক্কায় নির্বাক আনন্দে ছারখার হয়েছে যিশু। 'পঞ্চাশ বছরের একজন বালিকাকে কাছে পাবার ক্ষমতাকে দুর্জয় করে তুলতে, উঠে বসেছিল যিশু।' ভোগদৃশ্যটা অবিস্মরণীয় ----- 'প্রশ্রয়প্রাপ্ত যিশু গনগনে ঠোঁট বুলায়, রুদ্ধশ্বাস, ত্রস্ত। সিনেমা দেখে, টিভি দেখে, উপন্যাস পড়ে মানুষ-মানুষীর যৌনতার বোধ কলুষিত হয়ে গেছে, সর্বজনীন হয়ে গেছে। খুশিদির জৈব-প্রতিদান, বোঝা যাচ্ছে, সেই অভিজ্ঞতায় নিষিক্ত নয়। থুতনির টোল কাঁপিয়ে, ফুঁপিয়ে ওঠে খুশিদি; বলল, আয়, ভেতরের ঘরে চল যিশকা।'
 
আর, যেজন্য এই উপন্যাসের জিগির। মলয়ের লক্ষ্য গপ্পো বলা নয়, উপন্যাস গড়া নয় ---- ভাষা নির্মাণ। যেন, বাংলা গদ্যকে সশক্ত বনেদ পাইয়ে দিতেই তুখোড় কবিতাবাজ মলয় গদ্যের বাদাড়ে এসেছেন। গদ্য, যা বাঙালির যতিচিহ্ন। সমস্ত আবেগময়তাকে জোর ধাক্কা মেরে, থুয়ে রেখে, বাংলা গদ্যভাষাকে আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে মলয় মরিয়া। অন্তত নামগন্ধ বাবদ আমার স্বতোচ্ছ্বাস মারহাবা।

 

অনুপম মুখোপাধ্যায় লিখেছেন

 অনুপম মুখোপাধ্যায় লিখেছেন

। মলয় রায়চৌধুরী। আমার মনে হয় এই মুহূর্তে তিনি বাংলা সাহিত্যের একমাত্র জীবিত আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক। প্রায় একাই জ্বলে থাকা আগুন। তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় দু-দশক হয়ে গেল। আমার এই সম্পর্ক থেকে পাওয়ার ভাগটা এতই বেশি, এত কিছুই শিখেছি তাঁর কাছে, এটাকে প্রায় একতরফা সম্পর্কই বলা যায়। এখনও তিনি লেখায় সমান সক্রিয়। এমনকি, হয়ত আগের চেয়েও সক্রিয় ও সজীব মনে হচ্ছে তাঁকে আমার আজকাল। আসন্ন শারদীয়ায় আপনারা একাধিক পত্রিকায় তাঁর করা অনুবাদ পাবেন, পত্রিকাগুলোর ঠিকানা নিজেই বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন। হয়ত এই মুহূর্তেই একটা উপন্যাস লিখছেন, যেটা পড়ার পরে আমাদের অনেক কিছু নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। আত্মপ্রচারে তিনি একটা নতুন দিকই খুলে দিয়েছেন, যেদিকটাতে পা রাখার ফলে আমাকেও অনেকে আজ চেনেন। প্রতিষ্ঠান নয়, নিজেই নিজেকে বহন করার এই লেখক। বন্ধুর বদলে শত্রু কুড়িয়ে চলা এই লেখক। এই... কবি। তাঁকে নিয়ে যা বলার বললাম ‘কবিতীর্থ’-এর এই সংখ্যায়। সব কথা যে ভাল বলেছি এমন নয়। মলয় দা আজ অবধি আমার প্রশংসা ছাড়া নিন্দা করেননি। আমার তো একটু দায়িত্ব আছে তাঁকে রাগিয়ে দেওয়ার, তাই না? সত্যি ছাড়া মিথ্যে বলিনি।।


 

Monday, August 9, 2021

সোনালী মিত্র নিয়েছেন মলয় রায়চৌধুরীর সাক্ষাৎকার

 


সোনালী মিত্র নিয়েছেন মলয় রায়চৌধুরীর সাক্ষাৎকার


সোনালী মিত্র :  '' প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার '' এর পরে মলয় রায়চৌধুরীর সেই কবিতা আর এলো কই যে আগামী প্রজন্ম মনে রাখবে ? নাকি বিতর্ক হয়েছিল বলে কবিতাটা বিখ্যাত হয়েছিল ? নাকি মলয় রায়চৌধুরীর সব প্রতিভা ঢাকা পরে গেলো ''প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার '' এর সৌজন্যে ?

.

মলয় রায়চৌধুরীওটা ছিল মূলত দ্রুতির কবিতা ; আক্ষেপানুরাগের কবিতা । ওই কবিতার দরুন পঁয়ত্রিশ মাস ধরে আদালত-উকিল-চাকুরি থেকে সাসপেনশানের কারণে অর্থাভাব ইত্যাদির ফলে দ্রুতির রেশ আক্রান্ত হয়েছিল । কলকাতায় তো আমার মাথাগোঁজার ঠাঁই ছিল না, কেননা আমরা তখন পাটনায় থাকতুম । সুবিমল বসাক ছাড়া অন্যান্য বন্ধুরাও কলকাতায় তাদের আস্তানায় রাতে থাকতে দিত না । উত্তরপাড়ার আদিবাড়ির খণ্ডহরে রাতে থাকলে সকালে কলকাতা আদালতে যাবার জন্যে প্যাসেঞ্জার ট্রেন, যার সময়ের ঠিক ছিল না । ইলেকট্রিক ট্রেন তখন সেরকমভাবে আরম্ভ হয়নি । সে কি দুরবস্হা । টয়লেট করতে যেতুম শেয়ালদায় দাঁড়িয়ে থাকা দূরপাল্লার ট্রেনে ; রাত কাটাতুম সুবিমলের জ্যাঠার স্যাকরার এক-ঘরের দোকানে, বৈঠকখানা পাড়ায় । একই শার্ট-প্যাণ্ট পরে দিনের পর দিন কাটাতে হতো ; স্নান রাস্তার কলে, সেগুলোও আবার এতো নিচু যে হামাগুড়ি দিয়ে বসতে হতো । কবিতা লেখার মতো মানসিক একাকীত্বের সময় পেতুম না মাসের পর মাস । 

.

‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটা তখন বিখ্যাত হয়নি ; হয়েছে এই বছর পনেরো-কুড়ি হল । তখন তো ভয়ে লোকে হাংরি শব্দটাই ব্যবহার করত না, কবিতাটা নিয়ে আলোচনা তো দূরের কথা । আমার মনে হয় বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ওদেশে কবিতাটা প্রকাশের ব্যাপারে বা হাংরি আন্দোলন নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে ভীতি ছিল না । ঢাকায় মীজানুর রহমান ওনার পত্রিকায় ধারাবাহিক আমার ‘হাংরি কিংবদন্তি’ প্রকাশ করেছিলেন । আশির দশকে আমার বেশির ভাগ লেখা প্রকাশিত হয়েছে ঢাকার পত্র-পত্রিকায় । বাংলাদেশের কবিদের দেখাদেখি পশ্চিমবঙ্গে বছর দশেক পরে কবিতাটা প্রকাশের সাহস যোগাতে সক্ষম হন লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকেরা । এখন তো কলকাতার সংবাদপত্রের পুস্তিকাতাও প্রকাশিত হতে দেখি । ‘ক্ষুধার্ত’, ‘ক্ষুধার্ত খবর’ ইত্যাদি যে পত্রিকাগুলো সুভাষ ঘোষ আর বাসুদেব দাশগুপ্ত প্রকাশ করত, তাতেও ওরা আমার কবিতা প্রকাশ করতে বা আমার নামোল্লেখ করতে ভয় পেতো ; এমনকি হাংরি শব্দটা এড়াবার জন্য ক্ষুধার্ত শব্দটা প্রয়োগ করা আরম্ভ করেছিল । আসলে শৈলেশ্বর ঘোষ, সুভাষ ঘোষ আদালতে আমার বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়ে গিয়ে আত্মঅবমাননার গাড্ডায় পড়েছিল ।

.

আমার মনে হয় তোদের নাগালে আমার বইপত্র পৌঁছোয় না বলে কেবল ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ দ্বারা প্রভাবিত রয়েছিস । আমার উপন্যাস ‘ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস’ আর ‘অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা’ তো বেশ বৌদ্ধিক রেসপন্স পেয়েছে, বিশেষ করে কম বয়সী অ্যাকাডেমিশিয়ানদের থেকে । নয়তো কেনই বা বিষ্ণুচন্দ্র দে আমার কবিতা নিয়ে পিএচডি করবেন, উনি ওনার গবেষণাপত্র গ্রন্হাকারে প্রকাশ করেছেন । স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় এম ফিল করবেন ? মারিনা রেজা ওয়েসলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাংরি আন্দোলন নিয়ে গবেষণার জন্য আসবেন ? আরও কয়েকজন তরুণ-তরুণী গবেষণা করছেন । অধ্যাপক দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটা বিনির্মাণ করে অ্যাকাডেমিশিয়ানদের সাইটে আপলোড করেছেন । পড়ে দেখতে পারিস । তুই দিল্লিতে থাকিস বলে আমার বইপত্র পাস না। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ইটালি থেকে গবেষণার জন্য আসছেন ড্যানিয়েলা লিমোনেলা ।

..

সোনালী মিত্র :  হাংরি আন্দোলন নতুনধারার কবিতার জগতে বিপ্লব এনেছিল । কিছুদিন ফুল ফুটবার পরেই রোদের তাপে মিইয়ে গেলো ! মতপার্থক্য জনিত কারণেই কি আন্দোলন শেষ হয়ে গেলো ? পৃথিবীতে সমস্ত আন্দোলনই প্রথমে আগুন লাগিয়ে দেয় মানুষের বুকে , আবার আগুন নিভিয়েও দেয় আন্দোলনের হোতারা , হাংরি ও এর ব্যতিক্রম হোল না কেন?

.

মলয় রায়চৌধুরী: হ্যাঁ, পৃথিবীর সব আন্দোলনই একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে ; তার কাজ হয়ে গেলে মিলিয়ে যায় ; আন্দোলন মাত্রেই সমুদ্রের আপওয়েইলিং । হাংরি আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় একের পর এক কতোগুলো আন্দোলন হয়ে গেছে বাংলা সাহিত্যে । তারা মিডিয়া প্রচার পায়নি বলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি । আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলুম, যে কারণে এই মাস তিনেক আগেও বিবিসির প্রতিনিধি এসে একটা প্রোগ্রাম তৈরি করে নিয়ে গেলেন আর প্রসারণ করলেন । গত বছর আমেরিকা থেকে অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে একটা ফিল্ম তৈরি করে নিয়ে গেলেন ; হাংরি আন্দোলন নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বক্তৃতা দেবার সময়ে ওনার কাজে লাগে ফিল্মটা। হাংরির পর তো কবিতার আর গদ্যের ক্রিয়েটিভ ধারাই পালটে গেছে ।

.

সোনালী মিত্র :  আপনারা কবিতা আন্দোলন করে কি করতে চেয়েছিলেন ? এতদিন পরে পেছনের দিকে তাকালে কি মনে হয় অল্পবয়সে হুজুকে চেপেছিল আপনাদের সাহিত্য সাধনা ? আপনারা যা চেয়েছিলেন তার কতখানি সফলতা অর্জন করেছিলেন ? যদি সফলতা অর্জন করে থাকেন তাহলে ধরে রাখতেই বা পারলেন না কেন ?

.

মলয় রায়চৌধুরী : না, আমাদের আন্দোলন কেবল কবিতার আন্দোলন ছিল না । গদ্য-নির্মাণ আর ছবি-আঁকারও আন্দোলন ছিল । ছবি আঁকায় ১৯৭২ সালে অনিল করঞ্জাই ললিত কলা অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন । বাসুদেব দাশগুপ্তের ‘রন্ধনশালা’ গল্পের বইটা সেই ষাটের দশকেই প্রশংসিত হয়েছিল ; এখন তো ওর রচনাসমগ্র প্রকাশিত হয়েছে, আর পাঠকদের দ্বারা সমাদৃত হচ্ছে । হাংরি আন্দোলনের কারণে পাঠবস্তু মুক্ত হয়ে গেছে যুক্তির কেন্দ্রিকতা থেকে; কবিতা আর গল্প লেখা হচ্ছে মুক্ত-সূচনা, মুক্ত-সমাপ্তি এবং মুক্ত আঙ্গিক নিয়ে ; মানের নিশ্চয়তা এড়াতে পারছে ; অফুরন্ত মানে গড়তে পারছে; সংকরায়ণ ঘটাতে পারছে; ‘আমি’কে বহুমাত্রিক আর বহুস্বরিক করে তুলতে পারছে ; শিরোনামের পরিবর্তে রুবরিক প্রয়োগ করতে পারছে ; ভঙ্গুরতা আনতে পারছে ; মাইক্রোন্যারেটিভকে গুরুত্ব দিতে পারছে; ফ্লাক্স তৈরি করতে পারছে । এ থেকেই তো বোঝা যায় যে পরের পর প্রজন্মে সফলতা ক্রমশ চারিয়ে যেতে পেরেছে ।

.

সোনালী মিত্র : হাংরি ভূত কি গায়ে চেপে বসে আছে এখনও আপনার পরিচয়ের সঙ্গে ? এখন ও যা লেখেন মানুষ তুলনা টানে হাংরি কবিতার সঙ্গে , এটাকে উপভোগ করেন না খারাপ লাগে ? জীবনের এইপ্রান্তে এসে কি মনে হয় হাংরি আন্দোলন অন্যকোন ভাবে পরিচালনা করা যেত যাতে এই সময়েও সমান প্রাসঙ্গিকতা থাকত ?

.

মলয় রায়চৌধুরী: হাংরি আন্দোলনের তো কেউ পরিচালক ছিলেন না । আমাদের আন্দোলনের কোনো সম্পাদকীয় দপতর, হেড কোয়ার্টার, হাই কমাণ্ড, পলিট ব্যুরো জাতীয় ব্যাপার ছিল না । যাঁর যেখান থেকে ইচ্ছে বুলেটিন বা পুস্তিকা প্রকাশ করার স্বাধীনতা ছিল । বাঙালির সাহিত্য চেতনায় এই ব্যাপারটা ছিল অভাবনীয় । প্রথম দিকে হ্যাণ্ডবিলের আকারে বেরোতো আর ফ্রি বিলি করা হতো ; যিনি বের করতেন তিনিই বিলি করতেন । কবিতার পোস্টারের প্রচলনও আমরাই সর্বপ্রথম করি, তখনকার দিনে উর্দু লিথোপ্রেসে অনিল করঞ্জাইয়ের আঁকা পোস্টার ছাপিয়ে । দেয়ালে সাঁটার কাজটা করতেন ত্রিদিব মিত্র আর ওনার প্রেমিকা আলো মিত্র । এখন যেটা হয়েছে তা হাংরি নাম ঘাড়ে চেপে যাওয়ার নয় । যা মাঝে-মাঝে নজরে পড়ে তা হল, মলয় রায়চৌধুরী নামটা আমার লেখার আগেই পাঠকের কাছে পৌঁছে একটা ইমেজ গড়ে ফেলার । এর জন্য আমার কিছু করার নেই । জনৈকা পাঠিকা লিখে জানিয়েছিলেন যে আমার কবিতাগুলোকে তিনি প্রিডেটর মনে করেন, এবং আমাকে নয়, আমার কবিতার সঙ্গে তাঁর সুপ্ত যৌনসম্পর্ক গড়ে ওঠে তা তিনি টের পান । অর্থাৎ এ-ক্ষেত্রে আমার নামকে অতিক্রম করে তিনি আমার কবিতার সঙ্গে সম্পর্ক পাতিয়ে নিয়েছেন । এই তরুণীর চরিত্রটিকে আমি ‘ভালোবাসার উৎসব’ কাব্যনাট্যে ব্যবহার করেছি । হাংরির ভুতপ্রেত আমার চেয়ে পাঠক-পাঠিকার ওপর চেপে বসেছে বেশি করে । আর হাংরি আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা না থাকলে তুই পাঁচ দশক পর বিষয়টা নিয়ে উৎসাহী কেন ?

.

সোনালী মিত্র : স্পষ্টত তখন হাংরি আন্দোলন নিয়ে বাংলার কবিদল দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল , যারা সঙ্গে থাকব বলেও পরে সরে গিয়েছিলেন , যারা কিছুদিন থাকবার পরে সরে গিয়েছিলেন , যারা প্রথম থেকেই বিরুদ্ধে ছিলেন , তাদের প্রতি আপনার কখনও কি মনে হয়েছে যে শিল্প-সাধনার স্বাধীনতার পরিপন্থী ছিলেন তারা ? কিংবা তাদের সেই সাহস ছিল না ?

.

মলয় রায়চৌধুরী : দু’ভাগ নয়, অনেক ভাগ । লেখালেখির জগতে এই ধরণের ঘটনা আকছার ঘটে । এটা ব্যক্তিচরিত্রের ব্যাপার, শিল্প-সাধনার নয় । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমেরিকা থেকে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে ওসকাচ্ছিলেন হাংরি আন্দোলন ছেড়ে বেরিয়া যাবার জন্য । তাঁরা বেরিয়ে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে পুলিশের সাক্ষী হয়ে যেতেই উনি ফিরে এসে আমার পক্ষের সাক্ষী হয়ে গেলেন আর নিজের বন্ধুদের ছবিটা বাঙালির ইতিহাসে নোংরা করে দিলেন । মীজানুর রহমান ‘হাংরি কিংবদন্তি’ ধারাবাহিক প্রকাশ করার পর গ্রন্হাকারে বের করতে চাইছিলেন, কিন্তু সেখানেও শামসুর রাহমানের মাধ্যমে তাঁকে বিরত করা হয় ; করেছিলেন ‘কৃত্তিবাস’ গোষ্ঠীর কবিরা । স্ট্যালিন যখন পরাবাস্তববাদীদের জেলে পুরছিলেন তখন কয়েকজন কমিউনিস্ট হয়ে-যাওয়া পরাবাস্তববাদী স্ট্যালিনকে সমর্থন করেন । হুমায়ুন আজাদ আর অভিজিৎ রায় হত্যা নিয়ে আল মাহমুদ আর নির্মলেন্দু গুণ মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে বসে রইলেন । আল মাহমুদ একজন মৌলবাদী, তাঁর আচরণ বোঝা যায় । নির্মলেন্দু গুণ মুখ খুললেন না ভয়ে, এসট্যাবলিশমেন্ট তাঁকে সাহিত্যের ইতিহাস থেকেই লোপাট করে দিতে পারে এই আশঙ্কায় । পশ্চিমবঙ্গেও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে, কিন্তু ‘পরিবর্তনওয়ালা’ কবি-সাহিত্যিকরা মুখে লিউকোপ্লাস্ট চিপকে লুকিয়ে পড়েন । শিল্প-সাধনার স্বাধীনতা তখন কোথায় যায় ?

.

সোনালী মিত্র :  মলয় রায়চৌধুরী একটা ব্র্যান্ড । মলয় রায়চৌধুরী তকমা ছেপে গেলে অনেক কিছু করে ফেলা যায় যা একটা সাধারণ শিল্পীর দ্বারা সম্ভব নয় ! আপনার কি মনে হয়নি এতদিন যা লিখেছেন , যা লিখছেন এসব যেন কিছুই নয় , চরম কিছু বাকি রয়ে গেলো যা এখনও লেখা হোল না ! শেষ সময়ে এসে কি পেছনে তাকিয়ে হাঁটেন না সামনের পথ তৈরি করার খেলাতে মেতে আছেন ?

.

মলয় রায়চৌধুরী : হ্যাঁ, আসল লেখা এখনও লেখা হয়ে ওঠেনি ; মগজের মধ্যে ঘটে চলে অনেকরকমের ভাবনাচিন্তা। ব্র্যাণ্ড কিনা তা জানি না । আমার কতো প্রবন্ধ, কবিতা, উপন্যাস, কাব্যনাট্য গ্রন্হাকারে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে । ব্র্যাণ্ড হলে তো কোনো না কোনো প্রকাশক রাজি হতেন প্রকাশ করতে । কেউই রাজি হন না । অনেকে ছাপার জন্য টাকা চেয়ে বসেন । টাকাই যদি দিতে হয় তো নিজেই ছাপিয়ে ফ্রি বিলি করা ভালো, যেমন রবীন্দ্রনাথ করতেন । কেননা প্রকাশকরা টাকা নিয়ে নাকি যথেষ্ট কপি ছাপেন না, শুনেছি কয়েকজন তরুণ কবি-সাহিত্যিকের কাছে । পেছনে ফিরে তাকাই না । আমি বইপত্র সংগ্রহ করি না, নিজের বইও আমার কাছে নেই, তাই আগের লেখাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কটা অবিরাম ছিন্ন হয়ে চলেছে । আমার বইয়ের কোনো লাইব্রেরি নেই । বই-পত্রিকা পড়ি, আগ্রহী পাঠকদের বিলিয়ে দিই ।

.

সোনালী মিত্র : যৌবনে শুভা শেষ জীবনে অবন্তিকা'র মধ্যে দিয়ে প্রেমের ভিন্নতা খুঁজতে চাওয়া কি কোন ভুল সংশোধন ? নারীকে যখন ভোগ্য , পুরুষকে ও যখন ভোগ্য ভেবে সমস্ত নৈরাশ্যকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় , তখন কি মনে হয়নি শ্মশানের পাশেই হাসনুহানা গাছে কত ফুল ফুটে আছে , সেই ফুলের শোভা ও নৈরাশ্যর মতই ভীষণ সত্য , ফুলকে উপেক্ষিত করা যায় ?

,

মলয় রায়চৌধুরী : শুভা যৌবনের নয় ; বয়ঃসন্ধিকালের । আমার “রাহুকেতু” উপন্যাস পড়লে তুই আমার জীবনের কয়েকজন নারীর সঙ্গে পরিচিত হতে পারবি । “ভালোবাসার উৎসব” কাব্যনাট্যেও আছেন তাঁরা । আমার ‘অলৌকিক প্রেম ও নৃশংস হত্যার রহস্যোপন্যাস’ বইতে একটি নারী চরিত্র আছে যে একজন আধচেনা পুরুষের হাত ধরে বলে ওঠে, ‘চলুন পালাই’ । এটা আমার জীবনে একজন নারীর প্রবেশের প্রয়াস ছিল । অবন্তিকা একটি নির্মিত প্রতিস্ব । এর আগে রামী, বনলতা সেন, নীরা, নয়ন, সুপর্ণা ইত্যাদি ছিল কবিদের নিজস্ব নারী । অবন্তিকা সেরকম নারী নয়, সে স্বাধীন, পাঠকের কাছে, আলোচকের কাছে, নির্দ্বিধায় যায় । অবন্তিকা আমার স্লেভগার্ল নয় ।

.

সোনালী মিত্র : এই সময়ের কবিতার ভবিষ্যৎ কি ? এই সময়ের কবিতা কোনপথে এগিয়ে গেলে হাংরি যেখানে শেষ করেছিল সেখান থেকে শুরু করা যাবে ? নাকি এখনকার কবিরা গোলকধাঁধায় পড়েছে , কি করবে না করবে কিছুই যেন লক্ষ্য নেই তাদের সামনে ? নাকি এখনকার কবিতা সমাজ রাষ্ট্র সময় থেকে সরে যাওয়া কোন জাফর শা ? কোন উত্তাপ লেগে নেই তাদের হৃদয়ে ?

.

মলয় রায়চৌধুরী : এখন তো অনেকের কবিতা পড়ে আমার হিংসে হয়; অসাধারণ কবিতা লিখছেন এখনকার কবিরা । মনে হয় শব্দ বাক্য ছন্দ সবই তো রয়েছে, আমি কেন এদের মতন লিখতে পারছি না । যেমন রাকা দাশগুপ্ত, সাঁঝবাতি, মুজিবর আনসারী, বিভাস রায়চৌধুরী, অনুপম মুখোপাধ্যায়, বিদিশা সরকার, বহতা অংশুমালী, মিচি উল্কা প্রমুখ । সব নাম এক্ষুনি মনে আসছে না ।

.

সোনালী মিত্র : কবির চেতনায় কোন না কোন পূর্বজ কবির একটি আদর্শগত ধারাপাত থেকে যায়, এটা প্রাচীন কাল থেকেই লক্ষণীয় ,কবি অগ্রজ কোন কবির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন ? আসলেই কে কাউকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়া যায় সাধনায় ? যদি যায় কতদূর গিয়েই বা ফিরে আসা উচিত নিজের চেতনায় ?

.

মলয় রায়চৌধুরী : শৈশবে আমাদের পরিবারে শিউনন্দন কাহার আর বাবার ফোটোগ্রাফি দোকানে রামখেলাওয়ন সিং ডাবর, দুজন কাজের লোক ছিল । শিউনন্দন নিরক্ষর হলেও পুরো রামচরিতমানস মুখস্হ ছিল । রামখেলাওয়ন রহিম, দাদু আর কবির থেকে উদ্ধৃতি দিতে পারত । তারা কাজের লোক ছিল বলে সরাসরি বকুনি দিতে পারত না, কিন্তু রামচরিতমানস বা রহিম-কবির-দাদু থেকে কোট করে জানিয়ে দিত আমরা কী ভুল করছি । আমার বাল্যস্মৃতি “ছোটোলোকের ছোটোবেলা”র ‘এই অধম ওই অধম’ অংশে আমি তাঁদের উদ্ধৃতি দিয়ে নিষেধ করার কিছু উদাহরণ দিয়েছি । অগ্রজ কবিদের বদলে এই দুই জনের প্রভাব আমার ওপর গভীরভাবে পড়েছিল । তাছাড়া, আমাদের বাড়িতে প্রথম স্কুলে পড়তে ঢুকেছিলেন আমার দাদা সমীর রায়চৌধুরী । আমাদের পরিবার সেই অর্থে শিক্ষিত-সংস্কৃতিমান পরিবার ছিল না । বাবা-মা আর জেঠা-কাকারা কেউই স্কুলে পড়েননি । বাবা-জেঠারা সুযোগ পাননি কেননা ঠাকুর্দা ছিলেন ভ্রাম্যমান ফোটোগ্রাফার-আর্টিস্ট, বেশির ভাগ সময় কাটাতেন প্রিন্সলি স্টেটের সদস্যদের পেইনটিং আঁকায় ; উনি সপরিবারে মুভ করতেন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় । আমার বাবা তো জন্মেছিলেন লাহোরে । গোঁড়া বামুন পরিবার ছিল বলে ঠাকুমা আর বড়োজেঠা রবীন্দ্রসঙ্গীতকে মনে করতেন বেমমো ; বহুকাল রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ ছিল আমাদের বাড়িতে ।

.

সোনালী মিত্র : প্রতিটি সফল পুরুষের পিছনে নাকি একজন নারী শক্তি বিরাজ করেন ।আপনার কলমের প্রাণোচ্ছল পরিনতির জন্য কোন নারীশক্তিকে কি আধার মানতে চান ?কবি কলম দূর্ধষ রোম্যান্টিক, এই রোম্যান্টিসিজম এখনো কি প্রেমে পড়তে বাধ্য করে ?আপনার কলমে যে নারীদের পাই তারা কি শুধুই কল্পনারী নাকি বাস্তবেও তাদের ছোঁয়া আছে ?

.

মলয় রায়চৌধুরী : না, আমার পেছনে কোনো নারী নেই, মানে প্রেমিকা-নারী নেই । তবে সাপোর্ট সিস্টেম হিসাবে মা ছিলেন । যে নারীদের আমার লেখায় পাস, তারা কল্পনারী নয়, বাস্তবের নারী, একমাত্র অবন্তিকা হল বিভিন্ন নারীর উপাদান নিয়ে নির্মিত একটি প্রতিস্ব । ‘চলুন পালাই’ পর্ব থেকে আমি আর প্রেমে পড়তে চাই না । রোম্যান্টিক হওয়াটাই আমাকে বিপদে ফেলেছে বারবার । বড্ড ডিসট্র্যাকশান হয় প্রেমে । বুড়ো হয়ে গেছি বলে বলছি না, অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ।

.

সোনালী মিত্র : একদম সর্বশেষ প্রশ্নটা করেই ফেলি , আগামীদিনে আপনার পরিকল্পনা কি ? নতুন কি কোন পরিকল্পনা আছে লেখালেখি নিয়ে ? পাঠকরা কি নতুন স্বাদের কিছু পেতে চলেছে আপনার কলম থেকে ? 

.

মলয় রায়চৌধুরী : তোরা তো আমার লেখাপত্র যোগাড় করে পড়িস না । কমার্শিয়াল পত্রিকায় আমার লেখা বেরোয় না যে হাতে পাবি। ‘রাহুকেতু’ উপন্যাসে লেভেল-জামপিং আর ফ্রো-টু আঙ্গিক দেবার কাজ করেছি । ‘ঔরস’ উপন্যাসে ফর্ম ভেঙে মানুষের পাশাপাশি মাছিদেরও টিভি সাংবাদিকের চরিত্র দিয়েছি । ‘গল্পসংগ্রহ’তে বিভিন্ন জীবজন্তু পাখিপাখালিকে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক মানুষের ভূমিকা দিয়েছি । চটকল আর পাটচাষের দুর্দশা নিয়ে ‘নখদন্ত’ উপন্যাসটায় ডায়েরি, নোটস, সত্য ঘটনা আর কাহিনির মিশেল দিয়েছি । ‘জঙ্গলরোমিও’ নামে একটা উপন্যাস পুজোর সময় প্রকাশিত হবার কথা, যার গল্প একদল ক্রিমিনালদের নিয়ে, সেখানে কারোর নাম উল্লেখ করা হয়নি, তাদের সংলাপের ঢঙই তাদের পরিচয়। এলেকট্রা কমপ্লেক্স নিয়ে একটা নভেলাও প্রকাশিত হবে পুজোর সময় বা পরে, তাতেও ফর্মের নিরীক্ষা করেছি ।


( মায়াজম ব্লগজিনে প্রকাশিত )





Friday, August 6, 2021

মলয় রায়চৌধুরীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন উৎপল ত্রিবেদী

 


মলয় রায়চৌধুরীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন উৎপল ত্রিবেদী

উৎপল : খুব সংক্ষেপে হাংরি আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু বলুন ।


মলয় : ১৯৬০ সালে সাধারণভাবে ভারতের এবং বিশেষ করে পশ্চিমবাংলার উত্তর-ঔপনিবেশিক সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনেটিক অবস্হা যা হয়েছিল, দেশভাগের অজস্র ঘরভাঙা মানুষদের দেখতে-দেখতে এবং সেই সময়ের বাংলা কবিতা পড়তে পড়তে আমাদের মনে হয়েছিল একটা সম্পূর্ণ ওলোট-পালোট দরককার । ১৯৬১ সালে অক্টোবরে আমি, দাদা সমীর রায়চৌধুরী, দাদার বন্ধু শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং আমার বন্ধু হারাধন ধাড়া ( দেবী রায় ) সবাই মিলে হাংরি আন্দোলনের পরিকল্পনা করি । ১৯৬১ সালের পয়লা নভেম্বর পাটনা থেকে আমি ইংরেজিতে একটা বুলেটিন ছাপিয়ে দেবী রায়কে পাঠাই ; উনি কলকাতায় বিলি করার পরই তুমুল চর্চা আরম্ভ হয় এবং ক্রমে প্রায় তিরিশ জন আন্দোলনে যোগ দেন । প্রথম বুলেটিন ইংরেজিতে ছাপাতে হয়েছিল, তার কারণ পাটনায় বাংলা প্রেসগুলো কেবল উপনয়ন, বিয়ে আর শ্রাদ্ধর কার্ড ছাপতো । হাংরি শব্দটা আমি পেয়েছিলুম জিওফ্রে চসারের ‘ইন দ্য সাওয়ার হাংরি টাইম’ থেকে আর দার্শনিক বনেদটা পেয়েছিলুম অসওয়াল্ড স্পেংলারের সংস্কৃতি বিষবক বিশ্লেষণ থেকে ।


উৎপল : কোন তাড়না থেকে আপনার কবিতার জগত এবং হাংরি আন্দোলন নিয়ে জড়িয়ে পড়া ?


মলয় : কবিতা লিখতে আরম্ভ করেছিলুম ১৯৫৯-৬০ নাগাস । দাদা সিটি কলেজে পড়তেন এবং তিরিশের দশকের কবিদের আর কল্লোলের লেখকদের বই এনে দিতেন । উনি মামার বাড়ি পাণিহাটিতে থাকতেন এবং ছোটোমামার মার্কসবাদী ভাবনা-চিন্তায় প্রভাবিত হয়েছিলেন । পরে বিহারের জাতপাতের প্রেক্ষিতে ওনার মনে হয়রছি যে বাস্তব সমাজের সঙ্গে তা খাপ খাচ্ছে না । ১৯৬০ সালে আমি এই মর্মে “মার্কসবাদের উত্তরাধিকার” নামে একটা বই লিখেছিলুম, যার প্রকাশক ছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় । ১৯৬৩ সালে আমার কাব্যগ্রন্হ “শয়তানের মুখ” কৃত্তিবাস প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় । তোমার প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশের উত্তর আগেই দিয়েছি ।


উৎপল : ১৯৬৪ সাল । ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ লেখার পর আপনার নামে আদালতে মামলা হলো । বাংলা সাহিত্যে বোধহয় এই প্রথম কোনও কবিকে অশ্লীলতার দায়ে প্রকাশ্যে হাতে হাতকড়া ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । এই যে শুধু কবিতার জন্য জেল খাটা, একের পর এক মামলায় রাষ্ট্র আপনাকে নাজেহাল করে দেয়া -- এই মুহূর্তে সেই বিষয়গুলোকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন ?


মলয় : একটা ব্যাপার বেঝতে পেরেছিলুম যে যাবতীয় লড়াই একজনকে একাই লড়তে হয় । সুবিমল বসাক ছাড়া আর কারোর সঙযোগীতা তখন পাইনি । এখন এটা নিয়ে বিশেষ ভাবি না ; তবে শৈলেশ্বর ঘোষ আর ওনার শিষ্য সব্যসাচী সেন যেভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করে চলেছেন, তাতে বিরক্ত বোধ করি । আর এনাদের দুজনকে উৎসাহ জুগিয়েছেন শঙ্খ ঘোষ, দে’জ থেকে বিকৃত ইতিহাস প্রকাশ করিয়ে, তাতে তাঁরও লেখা আছে, আরও অনেকের লেখা আছে যারা হাংরি আন্দোলনে ছিল না । অথচ ওই বই থেকে যারা আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল তাদের সবাইকে বাদ দেয়া হয়েছে ।


উৎপল : সমীর রায়চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “হাংরি আন্দোলন বাংলা সাহিত্যে আরও কুড়িটা আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে” -- পরবর্তীতে কোন আন্দোলনে হাংরির প্রভাব আছে বলে আপনার মনে হয় ?


মলয় : নিম সাহিত্য, শ্রুতি, শাস্ত্রবিরোধী, অপরসাহিত্য, নতুন-কবিতা, কংক্রিট কবিতা, ভাষাবদলের সাহিত্য, অধুনান্তিক সাহিত্য, উত্তরআধুনিক সাহিত্য -- এরকম বেশ কয়েকটা, সবগুলো এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না ।


উৎপল : বর্তমান সমাজ ব্যবস্হায় হাংরি আন্দোলনের প্রভাব কি ফুরিয়েছে ?


মলয় : হাংরি আন্দোলন ছিল একটা ক্রোনোট্রপিকাল ( সময়/পরিসর ) ঘটনা । আন্দোলন তার কাজ করে গেছে । ত্রিপুরা, উত্তরবঙ্গতেও কবিরা সেসময়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন । যেমন সুররিয়ালিজম, ডাডাবাদ, ইমেজিজম, ফিউচারিজম, কিউবিজম ইত্যাদি আন্দোলন কবেই শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু তারা এখনও ভেতরে-ভেতরে কাজ করে চলেছে । তারা যখন আবির্ভূত হয়েছিল, তখন তাদের বিশেষ প্রয়োজন ছিল । তেমনিই হাংরি আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ছিল ওই সময়ে ।


উৎপল : আন্দোলনের একপর্যায়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায় রাজসাক্ষী হন । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, দেবী রায় প্রমুখ পিছুটান দেন এবং আপনাকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অপপ্রচার চালান । আপনি এ বিষয়গুলো কীভাবে মূল্যায়ন করেছেন ?


মলয় : শক্তি রাজসাক্ষী ছিলেন না, আমার বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষে সাক্ষী ছিলেন, যেমন ছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় এবং উৎপলকুমার বসু । আমার বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়েছিলেন শৈলেশ্বর ঘোষ আর সুভাষ ঘোষ, যা ওরা চেপে গিয়ে বহুকাল আমার বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছে । আমেরিকা থেকে সন্দীপনকে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চিঠি থেকে জানা গেছে যে সুনীল ভেবেছিলেন হাংরি আন্দোলনের সূত্রপাত করা হয়েছে কৃত্তিবাস গোষ্ঠীকে ভেঙে ফেলার জন্য । এটা বোকার মতন কথাবার্তা । উনি বিদেশে বসে বোধহয় ভাবছিলেন কলকাতায় সবাই লুটেপুটে খেয়ে নিচ্ছে, ওনার জন্যে খুদকুঁড়োও থাকবে না । আমার কেস যখন আদালতে চলছে, উনি কেসের সাবজুডিস অবস্হায় কৃত্তিবাস পত্রিকায় হাংরি আন্দোলনের বিরুদ্ধে সম্পাদকীয় লিখেছিলেন । আবু সয়ীদ আইয়ুবকে লেখা অ্যালেন গিন্সবার্গের চিঠি থেকে এখন জানা গেছে যে সম্পাদকীয় লিখেছিলেন পুলিশের নির্দেশে । দেবী রায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, ছাড়া পান, কিন্তু আমার বিরুদ্ধে ওনার ক্রোধের কারণ মামলার কারণে চাকরি চলে যাবার ভয় । উনি সেসময়ে বস্তিতে থাকতেন, গরিব পরিবারের লোক, বলেছিলেন যে চাকরি চলে গেলে আত্মহত্যা করতে হবে । অপপ্রচার তো এখনও বজায় আছে । কিন্তু তাতে কিছুই আসে যায় না । আমি তো নিজের যেমন ইচ্ছে দিব্বি লেখালিখি করে যাচ্ছি । এই ধরণের নোংরা ব্যাপার পৃথিবীর সব সাহিত্যসমাজে হয়ে এসেছে আর চলছে । আমাদের এখানে পণ্যসাহিত্যের আনন্দবাজারি কারবারের কারণে তা পচে পোকাধরা লাশ হয়ে গেছে ।


উৎপল : বহু আলোচক হাংরি আন্দোলনকারীদের সেসময়ের কার্যকলাপে ডাডাবাদের প্রভাব লক্ষ করেছেন বলে সমালোচনা করেন । এই কারণে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়,  সতীন্দ্র ভৌমিক প্রমুখ হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করেন । এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী ?


মলয় : না, না, সন্দীপন আন্দোল ছাড়েন পুলিশের হুমকির কারণে । ওনাকে, শক্তিকে, উৎপলকে গ্রেপ্তার করার হুমকি দিয়েচিল পুলিশ । আনন্দবাজারের মাধ্যমে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও চাপ দিচ্ছিলেন ওনাদের । উৎপলের তো যোগমায়া দেবী কলেজে লেকচারারের চাকরিও চলে গিয়েছিল ; তারপর অ্যালেন গিন্সবার্গের সুপারিশে লণ্ডনের একটা স্কুলে চাকরি পান । সতীন্দ্র ভৌমিক হাংরি আন্দোলনে ছিলেন না । উনি ‘এষণা’ নামে একটা পত্রিকা বের করতেন । ১৯৬৩ সালে সেই পত্রিকায় শৈলেশ্বর ঘোষের কবিতা পড়ে আমি দেবী রায়ের মাধ্যমে শৈলেশ্বরকে হাংরি আন্দোলনে এনেছিলুম । শৈলেশ্বরের সঙ্গে একই ঘরে থাকতো । আর ডাডাবাদের প্রভাব সম্পর্কে বলি, আগে যে সমস্ত আন্দোলন বা লেখালিখি হয়ে গেছে তাদের প্রভাব পরের লেখালিখিতে থাকবেই ।


উৎপল : অচলায়তন ভাঙার যে শ্লোগান দিয়ে হাংরি আন্দোলন শুরু করেছিলেন, আপনার কি মনে হয় তা স্তিমিত হয়ে গেছে অথবা আজও চলছে ?


মলয় : সিপিএম সরকার আসার পর প্রমোদ দাশগুপ্ত সারা পশ্চিমবাংলায় যে স্ট্যালিনিস্ট নেটওয়র্ক গড়ে তুলেছিলেন, যেটা পরিশ্রম না করেই পরের সরকার পেয়ে গেছে, তারা তো অচলায়তনের পাইক-বরকন্দাজের রক্তচোষার দিগ্বিজয় আরম্ভ করে দিয়েছিল । বিধবা মায়ের মুখে ছেলের রক্তমাখাভাত গুঁজে দিয়েছে, পেট্রল ঢেলে সাধু-সন্ন্যাসীদের পুড়িয়েছে, জিপগাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে মহিলা অফিসারদের গণধর্ষণ করে মেরে ফেলেছে, গ্রামবাসীদের খুন করে বা জ্যান্ত মাটির তলায় পুঁতে দিয়েছে । ভয়ে নিজেদের গুটিয়ে ফেলেছিল সাহিত্যিকরা ; সুভাষ ঘোষ আর বাসুদেব দাশগুপ্ত সুযোগ বুঝে সিপিএমে ঢুকে পড়েছিল । আমি এই ভয়াবহ অবস্হা সম্পর্কে আমার “পোস্টমডার্ন কালখণ্ড ও বাঙালির পতন” পুস্তিকায় বিশ্লেষণ করেছি । এখন বহু সাহসী যুবক-যুবতীদের দেখা পাই, যারা আমাদের পতাকা এগিয়ে নিয়ে চলেছে ।


উৎপল : আপনি একজন অবস্হাপন্ন পরিবারের সন্তান । বাবা কাকা সরকারি চাকরি করতেন । তাঁদের দৃষ্টিতে ‘অশ্লীল’ কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে ফেললেন । সে সময়ে আপনার পপতি বাড়ির প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল ?


মলয় : আমি অবস্হাপন্ন বাড়ির ছেলে কে বলল তোমায় ? বংশটা সাবর্ণ চৌধুরী বলে অনেকে মনে করেন অবস্হাপন্ন । সাবর্ণ চৌধুরীরা উত্তরপাড়ায় রিকশ চালাচ্ছে দেখতে পাবে তুমি । আমার বাল্যস্মৃতি “ছোটোলোকের ছোটোবেলা পো” পোড়ো । ছোটোবেলায় আমরা থাকতুম পাটনা শহরের অন্ত্যজ বিহারি আর অত্যন্ত গরিব মুসলমান অধ্যুষিত ইমলিতলা পাড়ায় । পাড়ার নিবাসীরা ছিল চোর, ডাকাত, পকেটমার ইত্যাদি। দাদা যাতে না কুসঙ্গে পযে খারাপ হয়ে যায় তাই কলেজে পড়ার জন্য দাদাকে মামার বাড়ি পাণিহাটিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল । কুড়িজনের পরিবারে বাবা ছিলেন একমাত্র রোজগেরে । ওনার ফোটো তোলার আর ফোটো থেকে ছবি আঁকার দোকান ছিল পাটনা শহরে । পরে বড়ো জেঠা পাটনা মিউজিয়ামে পেইনটিঙ আর মূর্তি ঝাড়পোঁছের চাকরি পেয়েছিলেন, ক্লাস ফোর স্টাফ । ছয় ভাই একবোনের পরিবারে জেঠা-কাকারা কোনও কাজ করতেন না । উত্তরপাড়ার বসতবাড়ির ট্যাক্স আর ঠাকুমার খাইখরচও বাবাকে পাঠাতে হতো প্রতি মাসে ।আমাদের পোশাক আর জুতো কেবল পুজোর সময়ে কেনা হতো ।  দাদা খেলতে গিয়ে জুতো হারিয়ে আসতো আর সারা বছর খালি পায়ে স্কুলে যেতো । আমাদের বাড়ি চিল ফোটোগ্রফার-আর্টিস্টের । জেঠা কাজ করতেন মিউজিয়ামে । তাই শ্লীলতা সম্পর্কে মধ্যবিত্তসুলভ মানসিকতায় বাড়ির লোক ভুগতেন না । মামলার সময়ে কলকাতার আদালতে বাবা-জেঠা-পিসেমশায় আসতেন সাহস যোগাবার জন্যে ।


উৎপল : সাহিত্যে শ্লীল-অশ্লীল কীভাবে নির্ধারিত হয় ? অশ্লীলতার মাপকাঠি আদৌ কি আছে ?


মলয় : ইংরেজরা আসার আগে আমাদের সাইত্যবোধে শ্লীল-অশ্লীল ভেদাভেদ ছিল না । ধাকলে বাৎসায়ন, জয়দেব, বিদ্যাপতি, ভারতচন্দ্র  আমাদেরভাষায় হতে পারতেন না, কবিয়ালদের আবির্ভাব হতো না । খাজুরাহো, কোণারক, পুরীর মন্দিরের স্হাপত্য হতো না । অলঙ্কারশাস্ত্রে প্রথম রসই তো আদিরস । সাম্রাজ্যবাদীরা এসে তাদের ভিকটোরীয় মূল্যবোধ চাপিয়ে দিয়ে গেছে ; তা থেকে বেরোবার আর উপায় নেই । এখন তো বিজেপির লোকেরা শ্লীল-অশ্লীলের বিচারক হয়ে দাঁড়িয়েছে । কোনো লেখায় ভাষার কাজ থাকলে, তা যদি পাঠককে উত্তেজিত করেও, তাকে অশ্লীল বলা চলে না ।


উৎপল : এ পর্যন্ত আপনার কাব্যগ্রন্হ, উপন্যাস, প্রবন্ধ মিলিয়ে বইয়ের সংখ্যা কতগুলো ?


মলয় : সত্তরটার মতো হবে । আমি বইপত্র সংগ্রহে রাখি না, তাই সঠিক সংখ্যা বলতে পারব না । আমার সম্পর্কে পিএইচডি করেছেন বিষ্ণুচন্দ্র দে, উনি এই সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে রেখেছেন ।


উৎপল : আপনি প্রথম প্রেমে পড়েছিলেন যা নারীর, তাঁর সম্পর্কে কিছু বলুন । সেটা কোন সময়ে ?


মলয় : সময়টা ১৯৫৪-৫৬ । নারী বলা ভুল হবে । তিনি ছিলেন স্কুলছাত্রী । তাঁর সমর্থনে মারপিট করতে গিয়ে আমাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । কিন্তু ওনার পরিবার কোনোকিছু না জানিয়েই হঠাৎ পাটনা থেকে উধাও হয়ে যান। আমার উপন্যাস ‘রাহুকেতু’তে আমি লিখেছি এই বিষয়ে । গাঙচিল থেকে প্রকাশিতব্য আমার রচনাসংগ্রহের দ্বিতীয় খণ্ডে আছে । ( গাঙচিল মলয়বাবুর রচনাবলী কোনও রহস্যজনক কারণে প্রকাশ করতে অস্বীকার করে )।


উৎপল : নতুন যারা লেখালিখির জগতে আসছে, তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী ?


মলয় : যেমন ইচ্ছের তেমন লেখো, প্রচুর পড়াশুনো করো, একা থাকার চেষ্টা করো, ডায়েরি রাখো, আর অবশ্যই মনে কিছু এলেই তক্ষুনি লিখে রাখো, পরে প্রয়োগ করার জন্য ।


উৎপল : এই সময়ে বিশ্বকাব্যে বাংলা কবিতার স্হান কোথায় বলে মনে করেন ?


মলয় : পোয়েট্রি, প্যারিস রিভিউ, লণ্ডন ম্যাগাজিনের কবিতাগুলো পড়ে বুঝতে পারি, বাংলায় যা লেখা হচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক কবিতার স্তরে । দুর্ভাগ্য যে অনুবাদ হয় না, যোগ্য অনুবাদক নেই । বিদেশে কবিতা একটা অ্যাবসট্র্যাক্ট আঙ্গিক নিয়েছে, বাংলা কবিতায় অ্যাবসট্র্যাক্ট কবিতা লেখার ধারা তো চলছে নানা কবিতার পাশাপাশি ।


উৎপল : হাংরি ইশতাহারের একটা পয়েন্ট ছিল, “আত্মআবিষ্কারের পর লেখা আর আঁকা ছেড়ে দেওয়া হবে”---এই নীতি আপনারা কতোটুকু মেনে চলেছেন ?


মলয় : সেসময়ে মনে হয়েছিল জীবনের কোনো একটা সময়ে আত্মআবিষ্কার সম্ভব । এখন বুঝতে পারি যে বয়সের সঙ্গে-সঙ্গে জীবনে এতোপ্রশ্ন জমতে থাকে যে তার উত্তর দেয়া অসম্ভব । ফলে, আত্মআবিষ্কার শেষ হয় না, আরও কঠিন হয়ে উঠতে থাকে ।


উৎপল : গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে উগ্রপন্হীদের হাতে খুন হয়েছেন অভিজিৎ রায়, আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন, নিলয় নীল, ওয়াশিকুর রহমান বাবু প্রমুখ মুক্তমনা ব্লগারদের । ভারতেও গোবিন্দ পানসারে, এম এম কালবার্গিকে হত্যা করেছে কট্টর হিন্দুবাদীরা । সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিপন্ন । আপনার কি মনে হয় না যে শেষ অবধি উগ্রপন্হা এই শতাব্দীর চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়াবে ?


মলয় : হ্যাঁ, তাই মনে হয়, এবং তার ফলে একসময়ে কোনো দেশ আণবিক বোমা ব্যবহার করে ফেলবে, যার দরুন হয়তো বিশ্বযুদ্ধও বেধে যেতে পারে ।


উৎপল : কাশ্মীরের মানুষ ভারত রাষ্ট্রের শোষণ, অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে, লড়াই করছে রাষ্ট্রের সেনার সাথে । কাশ্মীরিরা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাঁচতে চায় । আপনি কাশ্মীরের এই আজাদির লড়াইকে কীভাবে দেখছেন ?


মলয় : আমি চাকুরিসূত্রে জম্মুকাশ্মীরে গেছি । হোটেলে পৌঁছোতেই দুজন কাশ্মীরি যুবক ভুল করে আমাকে সাংবাদিক ভেবে গাড়ি নিয়ে এসেছিল বারামুলা নিয়ে যাবার জন্য । পরে, জম্মু ফেরার যে বাসে বসেছিলুম, তার পেছন দিকে বোমা ফেটে আমার অধস্তন অফিসাররা আহত হয়েছিল । আর পি এফের লোকেরা আমাকে আপেল আর আখরোট নিয়ে মুম্বাই ফিরতে দেয়নি । বলেছিল, নিয়ে গেলে এদের সাহায্য করা হবে । তখনই অবস্হাটা ব্যক্তিগতভাবে আঁচ করতে পেরেছিলুম । কাশ্মীর একটা ছোট্ট জায়গা, জম্মু আর লাদাখ থেকে আলাদা, সুতরাং সেখানের লোকেদের স্বাধীনতা দেয়ার অসুবিধা হবার কথা নয় । কিন্তু ভারতে হিন্দুত্ব একটা কায়েমি স্বার্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে ; ভারতীয় পুঁজিবাদের দোসর হয়ে গেছে । কাশ্মীর পাকিস্তানে ঢুকলেই সারা দেশে দেশভাগের সময়ের চেয়ে ভয়াবহ দাঙ্গা আরম্ভ হবে । পাকিস্তান আর ভারত একসঙ্গে বসে ওদের স্বাধীনতার আর ওদের ব্যাপারে নাক না গলাবার গ্যারেন্টি দিলে সুরাহা সম্ভব । জেনারাল মুশররফ নাকি এরকমই একটা পরিকল্পনা ফাইনাল করে ফেলেছিলেন বাজপেয়ির সঙ্গে আলোচনায় । সমস্যা হলো ভারতীয় এসট্যাবলিশমেন্ট পাকিস্তানের সরকারকে বিশ্বাস করে না ।


( ‘কবিতার দেশে’ পত্রিকার বৈশাখ ২০১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত )

Wednesday, August 4, 2021

বাংলাদেশে হাংরি আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসা

ঢাকায় কিছু অসাধু লোক হাংরি আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে টাকা কামাবার চেষ্টা করছে । তারা এই জাল বইটা বের করেছে যাতে প্রধান হাংরি আন্দোলনকারীদের কবিতা নেই । পরিবর্তে রয়েছে অচেনা লোকজনের রচনা । 


 

হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে

  হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে প্রখ্যাত কবি, হাংরির কবি দেবী রায় ৩ অক্টোবর ২০২৩ চলে গেছেন --- "কাব্য অমৃতলোক " ফ্ল্...