হাংরি আন্দোলনের কবিতায় প্রতিবাদের উৎসসন্ধান
মোমিন মেহেদী | |
মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০১১ | |
হ্যান্ডবিলের আকারে সাহিত্যকৃতি প্রকাশের পেছনে ছিল সময়কেন্দ্রিক ভাবধারাকে চ্যালেঞ্জের প্রকল্প । ইউরোপীয় সাহিত্যিকদের পাঠবস্তুতে তো বটেই , মাইকেল মধুসূদন দত্ত-র প্রজন্ম থেকে বাংলা সন্দর্ভে প্রবেশ করেছিল শিল্প-সাহিত্যের নশ্বরতা নিয়ে হাহাকার । পরে, কবিতা পত্রিকা সমগ্র, কৃত্তিবাস পত্রিকা সমগ্র, শতভিষা পত্রিকা সমগ্র , ইত্যাদি দুই শক্ত মলাটে প্রকাশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপের এই নন্দনতাত্বিক হাহাকারটিকে । পক্ষান্তরে, ফালিকাগজে প্রকাশিত রচনাগুলো দিলদরাজ বিলি করে দেয়া হতো , যে-প্রক্রিয়াটি হাংরি আন্দোলনকে দিয়েছিল প্রাকঔপনিবেশিক সনাতন ভারতীয় নশ্বরতাবোধের গর্ব। সেইসব ফালি কাগজ, যাঁরা আন্দোলনটি আরম্ভ করেছিলেন, তাঁরা কেউই সংরক্ষণের বোধ দ্বারা তাড়িত ছিলেন না, এবং কারোর কাছেই সব কয়টি পাওয়া যাবে না । ইউরোপীয় সাহিত্যে নশ্বরতাবোধের হাহাকারের কারণ হল ব্যক্তিমানুষের ট্র্যাজেডিকে কেন্দ্রিয় ভূমিকা প্রদান । যে-ট্র্যাজেডিভাবনা গ্রেকো-রোমান ব্যক্তি-এককের পতনযন্ত্রণাকে মহৎ করে তুলেছিল; পরবর্তীকালের ইউরোপে তা বাইবেলোক্ত প্রথম মানুষের 'অরিজিনাল সিন' তত্বের আশ্রয়ে নশ্বরতাবোধ সম্পর্কিত হাহাকারকে এমন গুরুত্ব দিয়েছিল যে এলেজি এবং এপিটাফ লেখাটি সাহিত্যিক জীবনে যেন অত্যাবশ্যক ছিল। ১৯৬১ সালের নভেম্বরে, শক্তিদার জন্মদিনে, যে বুলেটিন প্রকাশিত হল, তা হল ইংরেজিতে । অনেকে পৃষ্ঠপট না জেনেই মন্তব্য করতেন যে বাংলা সাহিত্যের আন্দোলন কি না শুরু করা হল ইংরেজি ভাষায় । ইতিহাসের দায় মিটিয়ে লেখা কবিতা কখনোই কবিতা হয় না। চিরন্তন এই সত্যকে ধারন করে এগিয়ে চলে কবিতা। পৃথিবীতে সব কালে, সব দেশে কবিতার ইতিহাস ও রাজনীতি সংলগ্নতা একটি স্বাভাবিক ও সার্বজনীন বিষয়। বিশেষ ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক পটভূমিতেই যে মহৎ কবি ও কবিতার জন্ম হয়, তা এমন কোন কাব্যপ্রেমিক নেই যে বিশ্বাস করে না। কবি পাবলো নেরুদা, ফেদোরিকা গার্সিয়া লোরকা, নাজিম হিকমত, পাউল সেলান, সিমাস হিনি, কাজী নজরুল ইসলাম ও আরো কত শত কবি যে ইতিহাসের দায় মিটিয়ে বড়ো কবি সে কথাতো স্কুলের শিশুরাও জানে । |
No comments:
Post a Comment