Saturday, May 9, 2020

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়-এর ২১.১.১৯৬১ তারিখের চিঠি

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়-এর ২১.১.১৯৬১ তারিখের চিঠি

প্রিয় সুনীলবাবু,
.
মাত্র এই পৃষ্ঠা এবং এর উল্টোপাতাটুকু লিখব, অর্থাৎ আগে থেকেই একটা সংযম আরোপ করে নিচ্ছি । চিঠিটা পাঠাব অনেকদিন পরে, অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত পাঠাব কিনা খুবই সাবধান হয়ে গেছি আমি ।
.
এই সাবধানতা, আপনার সম্পর্কে, মূলত একটিমাত্র কথা, যা আপনাকে জানানোর । আপনার ব্যবহার আমাকে সাবধান করে দিয়েছে । কোনোরকম সচেতন মনোযোগ না দিয়ে, শেষের দিকে আমি আপনার সঙ্গে মেলামেশা করছিলাম; যাবতীয় সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ধরে নিয়েছিলাম আমি আপনার বন্ধু । যে-ভাবেই তার সংজ্ঞা করা যাক, যে-কোনো বিরুদ্ধতা সত্ত্বেও আপনাকে আমার বন্ধু ভেবেছিলাম ।শেষ পর্যন্ত এই ধারণা আমার হয়ে গিয়েছিল । শেষ পর্যন্ত মানে এই যে তার আগে বহুদিন তা হয়নি, বহু সময় লেগেছিলল এ-জন্যে অনেক স্বার্থত্যাগ ( চারিত্রিক ) আমি করেছিলাম, দাম দিয়েছিলাম এর । পুরো দাম দিলে একটা জিনিশ আমি পাব, আমি আশা করেছিলাম । তারপর আপনি আমাকে সাবধান করে দিলেন ।
.
৬-ই ডিসেম্বরে মধ্যরাতে ইডেন হসপিটাল রোডের মুখে দাঁড়িয়ে যে-সব কথা আপনি আমাকে বলেন, তা-ই আমাকে সাবধান করে দেয় । অবশ্য অতটা অপ্রত্যাশিত লাগা উচিত হয়নি, কারণ গত এক বছরে মাঝে-মাঝেই অপমান করেছেন, কোথাও একটা প্রত্যাশা আমার সেদিন থাকা উচিত ছিল । সত্যি, আজ মনে পড়ছে অনেকবার, পাঁচ বার কি ছ’বার, আমাকে সকলের সামনে অপমান করেছিলেন । অপমান করা আপনার সঙ্গত হয়েছিল কি হয়নি, সে-কথা ভাবছি না । কারণ, এটাই ভাবছি যে, অপমান হচ্ছে অপমান । এবং বন্ধুকে কেউ অপমান করে না ।
.
যে বন্ধু নয়, অবশ্য তাকে করে। কিন্তু ওই যে বললাম, আমার শেষ পর্যন্ত ধারণা জন্মে যায় যে আমি আপনার বন্ধু, বা আরো কতো বড়ো ভুল, আপনি আমার বন্ধু । আগের অপমানগুলি আমি ক্রমশ ভুলে যাই । কিন্তু আপনি অনুতপ্ত দেখে ৬-ই ডিসেম্বরের অপমানও আমি পাছে ভুলে যাই, তাই পরদিন হাসতে-হাসতে, ‘কী মশাই, are you angry with me’ জিজ্ঞাসা করেছিলেন বলে আজ পর্যন্ত আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ আমার হয়নি।
.
শেষ পর্যন্ত আপনার অনুরক্ত হয়ে পড়া ছাড়া আমার উপায় ছিল না । বন্ধুত্ব আমার কাছে বড় আশার জিনিশ ছিল । অন্য কোনো human value সম্পর্কে আমি সুনিশ্চিতভাবে জানতে পারিনি, যেমন প্রেম, ভাতৃত্ব, দেশ বা বাবা-মার সম্পর্কে অনুভব, এইসব । বন্ধুত্ব সম্পর্কে কিছুটা পেরেছিলাম । যতদিন ভুল ধারণা ছিল, বন্ধুত্ব ছিল বেঁচে থাকার একটা আশ্বাস, একমাত্র মানে ।
ইতি
প্রীতিসহ
সন্দীপন

No comments:

Post a Comment

হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে

  হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে প্রখ্যাত কবি, হাংরির কবি দেবী রায় ৩ অক্টোবর ২০২৩ চলে গেছেন --- "কাব্য অমৃতলোক " ফ্ল্...