৬ জুন ২০১৫ তারিখের আনন্দবাজার পত্রিকায়, শৈলেন সরকার,পুরো বই না পড়েই, কী লিখবেন ভেবে নিয়ে লিখেছেন, “মলয় রায়চৌধুরী তাঁর ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক কুঠার’ সংক্রান্ত মামলায় সুভাষ ঘোষ ও শৈলেশ্বর ঘোষের মুচলেকা দেওয়া বা বিভিন্ন সঙ্গীর এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকারের সঙ্গে সঙ্গে হাংরি আন্দোলনের সমাপ্তির ঘণ্টা বেজে গেছে বলে তাঁর মনে হয়েছে। কোনও সন্দেহ নেই তাঁর সঙ্গীরা আদালতে সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতে সুবিধাবাদের প্রশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু তিনিও কি নেননি? তিনি জানতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক কুঠার’ কবিতাটিকে পছন্দ করেননি এবং সব জেনেও কেন মলয়বাবু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মিথ্যে করে তাঁর খারাপ লাগা কবিতাটিকে বিচারকের সামনে ভাল বলে শংসাদানে অনুরোধ করেছিলেন? যে অনুরোধ সুনীল রেখেওছিলেন। নিজে বাঁচার জন্য বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে অন্যকে মিথ্যে সাক্ষী দিতে বলাটা কি কম সুবিধাবাদ? আর একটা কথা, ‘হাংরি প্রতিসন্দর্ভ’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিমালিকানার উদ্ভব ও বিকাশ ইওরোপীয় অধিবিদ্যাগত মনন বিশ্বের ফসল।’ তাঁর মনে পড়েছে মঙ্গলকাব্যগুলির কথা, তিনি লক্ষ্য করতে বলেছেন, ‘প্রাক ঔপনিবেশিক কালখণ্ডে এই মাইক্রোপরিসরগুলি ছিল গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর রচয়িতারা নন।’ ওই একই লেখায় হাংরি আন্দোলনের শুরুর দিকে ফালি কাগজে প্রকাশিত রচনা প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘রচনাগুলি দিলদরাজে বিলি করে দেয়া হত, যে প্রক্রিয়াটি হাংরি আন্দোলনকে দিয়েছিল প্রাক-ঔপনিবেশিক সনাতন ভারতীয় নশ্বরতা বোধের গর্ব।’ কিন্তু প্রথম লিফলেটে হাংরি আন্দোলনের ‘ক্রিয়েটর’ হিসাবে নিজের নাম ‘মলয় রায়চৌধুরী’ ছাপিয়ে মলয়বাবু নিজে কি ভারতীয় নশ্বরতাবোধের উদাহরণ রাখতে পেরেছিলেন?”
কবিতাটার শিরোনাম যে ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’, শৈলেন সরকার খিল্লি করে তা পালটে দিয়েছেন । দ্বিতীয়ত, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাক্ষ্য দেবার আগে কবিতাটি পড়েননি । প্রথম পড়েন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে । সাক্ষ্য দেবার দুই বছর আগে কৃত্তিবাস প্রকাশনী থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার কাব্যগ্রন্হ ‘শয়তানের মুখ’ প্রকাশ করেছিলেন । তৃতীয়ত, লিফলেটে ‘ক্রিয়েটর’ লেখা মানেই তা অশোকের শিলালিপি নয়, তা, পুলিশ কমিশনার যেমন বলেছিলেন, দাঁতের মাজনের বিজ্ঞাপন আর লোকে হাতে পেয়ে মুচড়ে বা ছিঁড়ে ফেলে দেবে । হাংরি আন্দোলনের শতাধিক লিফলেট প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু মাত্র কয়েকটিই পাওয়া যায়, কেননা তা ক্রিয়েটরের শিলালিপি ছিল না । আন্দোলনের সমাপ্তির কথা প্রদীপ চৌধুরীও ঘোষণা করেছিলেন, লাল কালিতে পুস্তিকা ছাপিয়ে, কিন্তু তা শৈলেন সরকারের দৃষ্টি এড়িয়ে গেল । প্রদীপ তাঁর ব্যাখ্যায় জানিয়েছিলেন যে হাংরি আন্দোলন হয়ে উঠছিল একটি প্রতিষ্ঠান এবং তার মৃত্যু ঘোষণা জরুরি ছিল । প্রসঙ্গত, প্রদীপ চৌধুরী হাংরি আন্দোলনকে ত্রিপুরার কবি অরুণ বণিক, রসরাজ নাথ, রত্নময় দে, সেলিম মুস্তফা, অরূপ দত্ত প্রমুখকে নিয়ে আগরতলায় আরম্ভ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু রাজনৈতিক কারণে অরুণ বণিক খুন হয়ে যাবার পর তা থেমে যায় । অরুণ বণিকের কবিতা আলোচিত হয় না । পরাবাস্তববাদীদের সমস্তকিছু কিন্তু সংরক্ষণ করা হয়েছে, করেছেন পরবর্তী প্রজন্ম।
No comments:
Post a Comment