মত্ততা জারি আছে।
প্রদীপ চৌধুরি স্মরণে----
১৯৭৭-৭৮ সাল। লেখালেখির শুরুতে আমরা কতিপয় যুবক তখন এই রাজ্যের এক প্রান্তিক শহরের বাসিন্দা। শহরটির নাম শিলিগুড়ি। চোখের সামনে তখন লেখালেখি বলতে ছিল এক শ্রেণীর বৈঠকি সময়ক্ষেপণের নামে সাহিত্য চর্চা। তবু মাঝেমধ্যে হাতে যে দুই একখান ভালো বাংলা বই বা পত্রিকা আসতো না তা নয়---আসতো। গোগ্রাসে গিলতামও সে সব। কিন্তু খিদের উপশম হতো না তাতে। বরং অস্থিরতা বেড়েই চলে। সময় গড়ায়। গড়িয়ে গড়িয়ে আশির দশকের শুরুতে এসে আমরা নোঙর তুলে নিই। অপ্রতুল যোগাযোগের মধ্যেও একটা আপ্রাণ চেষ্টা জারি রাখি। ঘটনাক্রমে এই সময় একটি ঠিকানা আসে হাতে। ঠিকানাটি প্রদীপ চৌধুরির। আগরতলার। ওই সময় উনি আগরতলাতেই থাকতেন। চিঠি লিখি । উত্তর পাই। ঘটে বিস্তারিত যোগাযোগ। আমাদের বইপত্রের আবদার মেটাতে তিনি একসময় কিছু বইপত্র পাঠিয়ে দেন কোচবিহারের অরুণেশ ঘোষের কাছে এবং আমাদের সংগ্রহ করে নিতে বলেন।
চেনা লেখাজগতের বাইরের সব লেখাপত্র পত্রিকা ও বই। সেই সব বই গেলা খুব সহজ হলো না। মাথা বোঝাই হয়ে গেলো দ্বিধা দ্বন্দ্বে প্রশ্নে সংশয়ে। আজ বলা বাহুল্য সেই সব বই ছিল ক্ষুধার্ত প্রজন্মের বই পত্র পত্রিকা। তারমধ্যে কবিতার বই প্রদীপ চৌধুরির' অন্যান্য তৎপরতা ও আমি', 'চর্মরোগ,' ৬৪ ভূতের খেয়া' । শৈলেশ্বর ঘোষের ' জন্ম নিয়ন্ত্রণ', 'অপরাধীদের প্রতি'। গদ্যের বই সুভাষ ঘোষের 'আমার চাবি' ও যুদ্ধে আমার তৃতীয় ফ্রন্ট'।
প্রদীপ চৌধুরি সঙ্গে আমার পত্রালাপ জারি থাকে। সেই সব পত্রালাপও কম উদ্দীপনাময় ছিল না। তাঁর পাঠানো বই পত্রিকা সংগ্রহের সূত্রে ১৯৮০ সনেই আমার পরিচয় ঘটে কোচবিহারের অরুণেশ ঘোষের সঙ্গে। হাতে পাই তাঁর কবিতা গ্রন্থ 'শব ও সন্ন্যাসী'। তারপরের এক দুই বছরের মধ্যে আমরা পেতে থাকব বাসুদেবের গল্পগ্রন্থ 'রন্ধনশালা' ও ফালগুনি রায়ের কবিতা গ্রন্থ 'নষ্ট আত্মার টেলিভিশন' । প্রতিটি বইই আমাদের জন্য কিছু না কিছু বদ্ধ দরজা খোলার সহায়ক হয়েছিল।
বোঝাই যাচ্ছে এরপর সেই সব কতিপয় প্রান্তিক যুবকের ভাবনা বিশ্বটি একটা বিপজ্জনক কৌণিক গতিপথ ধরে ধাবিত হতে শুরু করেছিল। আর এর সূচিমুখটি তৈরি করে দিয়েছিলেন এক আত্মস্থ কবিতাপ্রাণ মানুষ প্রদীপ চৌধুরি।
না,আপনি যান নি কোথাও প্রদীপ দা। মত্ততা জারি আছে এবং আপনিও আছেন। থাকবেন।
No comments:
Post a Comment