Tuesday, October 30, 2018

বাসব রায় : মলয় রায়চৌধুরীর ভাষা

বাংলাবাজার ছেয়ে গেছে সুখী মধ্যবিত্ত সাহিত্য-নির্মাণে। প্রতিষ্ঠান সেই লেখাই ছাপায় যা এই সুখী মধ্যবিত্ত ভাবাবেগকে স্যাটিসফাই করে। সেখানে অন্ত্যজ স্বর, শ্রেণি সংগ্রাম বা বৈষম্য কিংবা সাহিত্যের প্রকরণ সম্পর্কিত লেখা কলকে পায় না। বাংলা গদ্যের ‘অন্য স্বর’ প্রতিষ্ঠান সহ্য করতে পারে না। কেননা তাতে তাদের এতদিনকার বাজার নীতি (মার্কেট পলিসি) ধাক্কা খায়। সন্দীপন আনন্দবাজারের বার্ষিক সংখ্যায় অসুখ না-থাকার উপন্যাস লিখেছিলেন সম্পাদক রমাপদ চৌধুরী সহ গোটা আবাপ-র গুষ্টিকে গালি দিয়ে। তো তাঁকে তখনই ব্লক করা হয়। সাগরময় ঘোষ বানপ্রস্থে যাওয়ার আগে একবার লিখতে বলেছিলেন, সন্দীপন তাতে মুতে দেন। এই অহংকার অবশ্য দেখাতে পারেননি হাংরি-যোদ্ধা অরুণেশ ঘোষ। দেশ পত্রিকার কবি-তালিকায় তাঁর নাম উঠেছে ওই ছোট্ট একটি কবিতার জন্য।
মলয় রায়চৌধুরী, অজিত রায় কিংবা রবীন্দ্র গুহ কখনো প্রতিষ্ঠানের চোখে ব্লু বয় হতে পারবেন না, যাবতীয় সাহিত্যগুণ সত্ত্বেও। কেননা ওঁদের লেখালিখি ওই সুখী মধ্যবিত্ত মানসতাকে স্যাটিসফাই করে না। ছয় দশকের মলয় রায়চৌধুরী সহ হাংরি জেনারেশনের লেখকদের কথা ভাবুন। ওঁরা বাংলা গদ্যে, কবিতার কথা বলছি না, নিয়ে এসেছিলেন নতুন স্বর, নতুন শব্দ, নতুন আঙ্গিক। তো তাঁদের যেভাবেই হোক মূল ধারার সাহিত্য থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এবং একটু লক্ষ করলেই বোঝা যায়, সেই নির্গমন-পর্বে শুধু আবাপ বা দেশ নয়, অংশ নিয়েছিল প্রায় সব মূলধারার প্রকাশনা। কেননা তারা মিলার-কথিত সেই কথাটা জানে, ভাষাকে যে আক্রমণ করে সেই ভাষাকে বাঁচায়। তো, কে আর সাংস্কৃতিক জারজদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে নিজের বাজার নষ্ট করে! এবং যে কথা আগে অনেকবার বলেছি, সময় এসেছে, আবার বলার, মলয়-অজিত-রবীন্দ্র কেউই প্রতিষ্ঠান-বিরোধী নন, প্রতিষ্ঠান এঁদের বিরোধী।
বাংলা গদ্যের এই সাড়ে সব্বনাশ ঘটিয়েছেন ওই জোব্বা পরা দেড়েল বুড়ো। নিজে কখনো প্রান্তিক বা অন্ত্যজ জীবন কাটাননি, সম্ভবত একটি দিনও কাটাননি তাঁদের সঙ্গে, তো লিখেছেন একটা প্রায়-কৃত্রিম গদ্যভাষায়। নোবেল লরিয়েটের লেখা বলে ওটাই বাংলা সাহিত্যের স্ট্যান্ডার্ড ভাষা হয়ে গেল। যার বাক্যছন্দ এখনও ইউরোপীয় ঢঙের। ইংরেজিতে যেমন বলে ‘আই লাভ ইউ’, তো তার বাংলা হল ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’। কেউ লিখতেই পারল না যে ‘ভালোবাসি, আমি, তোমাকে’ কিংবা ‘তোমাকে, ভালোবাসি, আমি’।
আর, আমি শালা এক গাড়ল, ওই ভাষাতেই লিখতে শিখেছি!
Comments
হেমন্ত সরখেল প্রতিষ্ঠান এদের বিরোধী-
এটাই হয়তো স্বাভাবিক। নব আঙ্গিক, নিজেকে খোঁড়া, এসব মেনে নিতে হলে, তাকে স্বীকৃতি দিতে হলে, সে কলমের কাছে অনেক সময়ই হয়তো প্রতিষ্ঠান, কলমের সামনে বামন হয়ে যাবে। অজিতদার লেখার ভাষা আমাকে এটা ভাবায়। সেটা মেনে নেওয়া একটা গারোয়ানের পক্ষে সম্ভব নয়। যাই হোক, মহাকাল কিছুকেই নস্যাৎ করে না, এখানেও তার ব্যতিক্রম হবে না, সেটা বিশ্বাস করি।
আরোর আশায় রইলাম, দাদা।
Manage
LikeShow More Reactions
Reply5d
Alam Ara Barbhuiya Leena এই জোব্বা পরা বুড়োর গানে কবিতায় কিন্তু নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায় আর সেখানেই তো তিনি সার্থক। আজ অবধি প্রাসঙ্গিক। আশা করি আগামীতেও থাকবেন।
Manage
LikeShow More Reactions
Reply5d
Basab Ray ঠিকই তিনি প্রাসঙ্গিক, কুড়িটা কবিতায় একটা ভালো লাগে, আর মিথ্যে না বলতে কী, তাঁর উপন্যাসের নাম আমার একটাও মনে নেই। কী করব, মনে নেই।
Manage
LikeShow More Reactions
Reply5d
Alam Ara Barbhuiya Leena এটা ঠিক সবার চাহিদা,সবার পছন্দ, ভালো লাগা না লাগা যে এক হবে তা'তো নয়। ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা অফুরান।
Paritosh Talukdar রবীন্দ্র গুহ র গল্প শিকঞ্জের পাখি খামোশ পড়েছিলাম বহু দিন আগে। বিস্ময়ে হতবাক। যারা গল্পে পরীক্ষা নিরীক্ষা পছন্দ করেন তারা পড়ে দেখতে পারেন।
Manage
LikeShow More Reactions
Reply5d
Kantarbhusan Nandi আমার যা বলার :
১. বাসববাবু রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাকে প্রায়-কৃত্রিম বলেছেন। যাঁর গদ্যভাষার আপনি ভক্ত, সেই সন্দীপন একটা লেখায়, শরৎচন্দ্রকে আক্রমণ করতে গিয়েই সম্ভবত বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের অন্তত একটা নিজস্ব ভাষা ছিল। এতদ্বারা সন্দীপন কী বোঝাতে চেয়েছেন আপন
িই বলুন। ঠিক কোথায়, কোন প্রবন্ধে সন্দীপন বলেছিলেন আমার মনে নেই। বাসববাবু নিশ্চয় বলতে পারবেন।
২.বাসববাবু বলেছেন, নোবেল লরিয়েটের লেখা বলে রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাই বাংলা সাহিত্যের স্ট্যান্ডার্ড ভাষা হয়ে গেছে। তাই কি? আচ্ছা, রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস (গল্প বাদ দিচ্ছি) কোনোকালে জনপ্রিয় ছিল? ইতিহাস ঘাঁটুন, দেখবেন তাঁর উপন্যাস কোনোদিন পাঠকপ্রিয় হয়নি। হবার কথাও ছিল না। শরৎচন্দ্র বাদ দিন, ওই সময় অনেক মধ্যমেধার উপন্যাসকারও রবীন্দ্রনাথের চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিলেন । রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষা আপামর পাঠককে এবং উপন্যাসকারদের তেমন প্রভাবিত করেনি।
৩. বাংলা গদ্যের সাড়ে সর্বনাশ ওই জোব্বা পরা বুড়ো ঘটাননি,তাঁর পক্ষে ঘটানো সম্ভবও ছিল না। সর্বনাশ ঘটিয়েছেন শরৎচন্দ্র। অনেকেই সেটা বলেন, মানেন। সবার কথা বাদ দিচ্ছি, স্বয়ং সন্দীপন বলে গেছেন বাংলা গদ্যের, বাংলা সাহিত্যের বারোটা বাজিয়ে গেছেন 'খড়ের বাছুর" শরৎচন্দ্র। সন্দীপনের মতে শরৎচন্দ্রের জন্যই বাংলা সাহিত্যে "জনতা পার্টির লেখকে" ভরে গেছে। আমিও তা-ই বিশ্বাস করি।
Manage
LikeShow More Reactions
Reply1dEdited
Basab Ray এবং আপনার বিশ্বাস সঠিক

No comments:

Post a Comment

হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে

  হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে প্রখ্যাত কবি, হাংরির কবি দেবী রায় ৩ অক্টোবর ২০২৩ চলে গেছেন --- "কাব্য অমৃতলোক " ফ্ল্...