শত্রুতা শেখা দরকার মাকড়সাদের থেকে ; ওইটুকু মাকড়সা অথচ শত্রুদের মুখে থুতু ছিটিয়ে কি বিশাল জালের ফাঁদ পেতে রাখে ।
***
ফোন করে স্বপ্নে আসতে চাইছেন এক যুবতী–কবি ।
***
স্বপ্ন মাত্রেই পোস্টমডার্ন, তাদের অরৈখিক রাইজোম্যাটিক প্লটের কারণে ।
***
দেবীরা সবাই রোগের ( শীতলা, মনসা, পর্ণশর্বরী, ধূমাবতী ) আর দেবতারা সবাই চিকিৎসক ( ধন্বন্তরী, ধাত্রী, অশ্বিনীভাইরা ) । কেন ?
***
যদি না চোখে–চোখে রাখা হয়, তাহলে পুলিশ স্টেট হয়ে ওঠার জন্য গণতন্ত্রের মাটি সবচেয়ে নরম ।
***
সঙ্গমের চেয়ে যোনির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার আনন্দ বেশি ।
***
জলাতঙ্ক রোগটা কুকুরেরা মানুষের কাছ থেকে পেয়েছে ।
***
আমার কখনও ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’ হয়নি ; প্রতিবার ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট টাচ’ হয়েছে ।
***
কবিতার জন্য নিয়তিকে বশে আনতে হয় ।
***
প্রতিশোধের ষড়যন্ত্রকে জিইয়ে রাখা জরুরি কেননা তা জখমকে তাজা রাখে ।
***
আমার যে কুষ্ঠি–ঠিকুজি মা তৈরি করিয়েছিলেন, তার সমস্ত ভবিষ্যবাণীকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছি ।
***
যে যুবতী নিজেকে কুৎসিত বলে মনে করেন, তাঁর আত্মচিন্তা সম্পর্কে ধারণা করা অসম্ভব ।
***
প্রচণ্ড বৃষ্টিতে সবুজ ঘাসের ওপরে সঙ্গমের তুলনা হয় না । যেমন শরৎকালের জ্যোৎস্নায় ফাঁকা মাঠে জোনাকিদের মাঝে উলঙ্গ প্রেমিক–প্রেমিকার নাচ ।
***
প্রেম তখনই সফল যখন তা প্রেমিক আর প্রেমিকা দুজনকেই একযোগে ধ্বংস করে দ্যায় ।
***
কবির প্রতিষ্ঠা অন্য কবিদের ঈর্ষায় লুকিয়ে । অগ্রজ লেখকেরা ঈর্ষা করার মাধ্যমে অনুজ লেখকদের স্বীকৃতি দেন
***
তুমি যাকে ঘৃণা করছ সে যদি তা জানতে না পারে তাহলে ঘৃণা করার কোনো মানে হয় না ।
***
প্রকৃত সুন্দরীর দিকে দ্বিতীয়বার তাকালে সৌন্দর্যের পরিভাষা যৌনতায় পালটে যায় ।
***
মানুষ পৃথিবীর প্রতি অপার বিরক্তি নিয়ে জন্মায় ; তাই সে জন্মেই কাঁদতে আরম্ভ করে ।
***
নাগরিকদের দুঃখ–কষ্ট–যন্ত্রণা দেবার জন্যই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ।
***
অপবাদ আকর্ষণ করার ক্ষমতা না থাকলে জীবদ্দশায় একজন কবির খ্যাতি বৃথা ।
***
সবচেয়ে আনন্দদায়ক বৃষ্টি হল যখন তা ফাঁকা মাঠে তোমায় তাড়া করছে আর তা তোমায় ধরে ফেলতে ব্যর্থ হল ।
***
যেকোনো ব্যাপার তোমাকে নষ্ট করে দিতে পারে, তা অসাধারণ কবিতা হোক বা অপরূপা প্রেমিকা ।
***
কখনও সাহিত্য–আলোচকদের মনের মতন লেখার চেষ্টা করা উচিত নয় । নিজের মনের মতন লিখতে গেলে রিস্ক নিতেই হবে ।
***
তোমার লিঙ্গও সঠিক সময়ে তোমার নির্দেশ মানতে অস্বীকার করতে পারে ।
***
ক্ষমা করার আগে গভীর ভাবে খতিয়ে দেখা উচিত ।
***
এই বয়সে কোনো যুবতী ভালোবাসার প্রস্তাব জানালে অমঙ্গলের আশঙ্কায় আক্রান্ত হই ।
***
জীবন সম্পর্কে কথা বলা প্রায় অসম্ভব কেননা বাংলা ভাষায় তার জন্য সঠিক অভিব্যক্তি এখনও পাওয়া যায় না ।
***
আমি ভাগ্যবান যে আয়নাকে ঘৃণা করার দরকার হয় না । আমার টাক পড়েনি ; কখনও পড়বেও না ।
***
মানব সম্প্রদায়ের মুক্তির তাত্বিকরা শেষ পর্যন্ত গণহত্যাকারীতে রূপান্তরিত হয় ।
***
সবচেয়ে বাজে আবিষ্কার হল লাউডস্পিকার, বিশেষ করে যখন তা সাম্প্রদায়িক বিশ্বাসের দানব হয়ে ওঠে ।
***
কবিতা মনের বিশৃঙ্খলাকে কয়েদ করে ।
***
প্রতিটি শব্দেই যদি ক্রিয়া লুকিয়ে থাকে, তাহলে একটিমাত্র সত্য বলে কিছু হয় না ; যা হয় তা হল কর্ম । ক্রিয়াপদে নিহিত থাকে কর্মশক্তি ।
***
আদালতের জজরাই যখন সন্দেহের ঊর্দ্ধে নন বলে বিধায়করা দাবি করছেন, তখন সাহিত্যের বিচারকরা কোন যুক্তিতে সন্দেহের ঊর্দ্ধে ?
***
ব্যর্থ বিপ্লবী বিদেশে গিয়ে মার্ক্সের কবর দেখতে যান । ব্যর্থ কবি বিদেশে গিয়ে বদল্যারের কবর দেখতে যান।
***
“কোথায়” জায়গাটা ঠিক কোথায় ?
***
এককালে যারা অবক্ষয়বিরোধী ছিল তারাই বঙ্গসমাজে অবক্ষয় নিয়ে এলো ।
***
বক্সিং ম্যাচ যারা দেখতে যায় তারা হার–জিতের মাধ্যমে জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান খোঁজে ।
***
“পবিত্র বই” আর “অপবিত্র বই”-এর পার্থক্য হল যে “অপবিত্র বই” কেবলমাত্র কবিরাই লিখতে পারেন ।
***
গ্ল্যামারের আকর্ষণ হল ক্যাটওয়াকের শেষে যুবতীদের সমবেত ঘামের গন্ধ, যা অত্যন্ত দামি পারফিউম দিয়েও চাপা পড়ে না ।
***
সকলেই ভাবে ‘পৌঁছে গেছি’ । পেছন ফিরে তাকিয়ে টের পায় যেখানে সে দাঁড়িয়েছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে ।
***
কেউ আমাকে ঘৃণা করলে তা উপভোগ করি ।
***
পশুরা জানতেই পারল না যে মানুষ সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী ।
***
ধর্ম যে উদ্দেশ্যহীন এবং ভাঁওতা তা সবচেয়ে ভালো করে জানে সেই বুড়োগুলো যারা নারী ও কিশোরদের মানববোমা তৈরি করে পাঠায় ।
***
প্রগতির একরৈখিক ধারণা প্রিমিটিভ ।
***
বাজার–করা আর ভোট–দেওয়া ছাড়া নাগরিকের কোনো সম্পর্ক আছে কি সমাজ আর রাষ্ট্রের সঙ্গে ?
***
দেশভাগের আগে পূর্ববঙ্গের যে সাম্যবাদীরা দেশভাগ সমর্থন করেছিল, তারাই ১৫ই আগস্ট ১৯৪৭–এর অনেক আগে ভারতে পালিয়ে এসেছিল । তাদের কি তকমা দেয়া উচিত ? বিশ্বাসঘাতক !
***
“প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার” কবিতাটি হল Confessions of pain ; যে কবিরা এই কবিতাটিকে হিংসে করেন, তাঁরা প্রকৃতপক্ষে আমার যন্ত্রণাবোধকে হিংসে করেন ।
***
লেসবিয়ানরা পুরুষাঙ্গের মুখমেহন করতে পান না বলে কি ‘পেনিস এনভি’ পুষে রাখেন ?
***
প্রতিশোধস্পৃহা জন্মায় উন্মদের মস্তিষ্কে, অথচ উন্মাদনা ছাড়া কবিতা লেখা যায় না ।
***
তুমি যদি নার্সিসিস্ট না হও, তাহলে তুমি আধুনিক কবি নও ।
***
বাঙালির ‘মধ্যমেধা’ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের অনেকে চেঁচামেচি করেন । যদি সকলেই ‘মধ্যমেধা’ হতো তাহলে বিদেশে কারা পালিয়ে গিয়ে বসবাস করছে ?
***
ভালো মানুষের পক্ষে ভালো বন্ধু পাওয়া অত্যন্ত কঠিন ।
***
আশাবাদ : লক্ষ বছর আগে মরে গিয়েছে যে নক্ষত্র তার আলো এখন এসে পৌঁছেচে পৃথিবীতে ।
***
মরে গেলে আত্মার সদ্গতির জন্য শোকপ্রকাশ করবেন না ; আমার আত্মা নেই । আমার গ্রন্হগুলোর আত্মা আছে ।
***
কবিতার উৎস কোনো–না–কোনো রহস্য যার উন্মোচন অন্য উপায়ে সম্ভব নয় ।
***
যার নির্বাণ কিংবা মহানির্বাণ ঘটে সে তা জানতে পারে না । তাহলে নির্বাণ বলতে কী বোঝায় ?
***
যোনিকে ফর্সা করে তোলার বিজ্ঞাপন প্রায়ই দেখি টিভিতে । যোনি কালো হোক বা ফর্সা তাতে প্রেমিকের কীই বা এসে যায় !
***
জোয়ার, ভাটা, এল নিনো, নিম্নচাপ, ঘূর্ণাবর্ত, বন্যা ! জলের অসুখ হল প্রকৃতির জলাতঙ্ক ।
***
সব ধর্মের পুরোহিতরাই নানা রকমের আচরণ করেন । দেখে মনে হয় বাচ্চাদের খেলা । তাই বোধহয় ধর্মগুলোয় নানা খোকোনপ্রিয় গাঁজাখুরি গল্প গড়ে ওঠে ।
***
ভারতে অনেক পরিবার হাজার বছর ধরে গরিব । তবু তারা হাতে অস্ত্র তুলে নেয় না কেন ? জাতপাতের বর্ণবিভাজনের কারণে !
***
অন্ধকারে বিছানাকে আরণ্যক বধ্যভূমি করে তোলাই ফুলশয্যা ।
***
রাস্তায় অচেনা মানুষদের ভিড়ে গা–ঘেঁষাঘেষি করে হাঁটার সময়ে একাকীত্বকে যেভাবে উপভোগ করি, সেভাবে একা ঘরের কোনে বসে হয় না ।
***
পাশা খেলায়, মানে জুয়ায়, যুধিষ্ঠির কখনও জিততে পারেননি, তবু কেন শকুনি চরিত্রের প্রয়োজন ?
***
যে লোকটা ভয়ে কখনও কোনো মাদক নেয়নি সে গাঁজাটানার বিরোধীতা করবেই ।
***
এক–একজন মানুষকে একবার দেখলেই টের পাওয়া যায় তার মগজে সাভানার কোন জন্তুদের উৎপাত চলছে ।
***
জীবনে একবার অন্তত আকুল কামলালসায় আক্রান্ত হবার অভিজ্ঞতা জরুরি ।
***
পরস্পরবিরোধিতা আর অনিশ্চয়তার সম্ভাবনাকে একযোগে ধরে ফেলতে পারে কবিতা ।
***
প্রেম শেষপর্যন্ত অনীহা, উদাসীনতা, গতানুগতিকতা, অমনোযোগ, একঘেয়েমিতে পৌঁছে ফুরিয়ে যায় ।
***
বিশ্বাসঘাতকরা মরবার আগে আত্মসন্মানহীন শিষ্যদের তৈরি করে যায়, যারা মৃতের গোলামি করে বেঁচে থাকে ।
***
যে লোক তোমার সঙ্গে ছলনা করেছে সে চিরকাল তোমার বিরুদ্ধে কথা বলবে, এবং সে যদি লেখক হয় তাহলে তোমার বিরুদ্ধে লিখবে ।
***
জীবনে একবার কেউ–না–কেউ পিঠে ছুরি মারবেই, আর সে–আঘাত কখনও সারবে না ।
***
বিশুদ্ধ ক্ষমতার লোভ থেকে গুণ্ডা এবং রাজনেতাদের জন্ম ।
***
মেয়েদের ভগাঙ্কুর কেটে ফেলার প্রধান উদ্দেশ্য তাদের যৌনসুখ থেকে বঞ্চিত করা । সউদি আরবে এই প্রথা তুলে দেয়া হয়েছে কেননা আব্রাহামিক ধর্মগ্রন্হে কেবল পুরুষের খতনা সম্পর্কে নির্দেশ আছে ।
***
বিষয়–সম্পত্তির জন্য মানুষ–মানুষীর এতো লোভ হয় কেন ? ভবিষ্যতের জন্য নয় । যখন মানুষ গুহাবাসী ছিল তখন গুহার দখলিসত্ত্ব নিয়ে লড়াই করতে হতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য । সেই প্রাগেতিহাসিক মানুষ ঘাপটি মেরে থাকে বেশির ভাগ মানুষের চরিত্রে ।
***
বুড়ো বয়সের একটা ফোটো পোস্ট করেছিলুম ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে, একথা জানিয়ে যে পেনশনে টিকে আছি এবং মুম্বাইতে থাকি । বহু তরুণী প্রোপোজাল পাঠিয়েছেন ! কী কারণ হতে পারে ? বাবা–প্রেমিক চাই ? মুম্বাইতে ছাদ চাই ?
***
অনেক পরিচিত মানুষ–মানুষী স্বপ্নে বারবার আসেন, অথচ আমি চাই না তাঁরা আসুন । বোঝা যায় যে প্রতিটি ব্যাপারে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হতে পারে না ।
***
আমি লিখি গল্পহীন গল্প ; অনেকে তাকেও ছোটোগল্প বলে মনে করেন ।
***
সৃজনশীল মানুষের অধঃপতনের অভিজ্ঞতা হওয়া জরুরি, কেননা তা জ্যোতিষ্কদের হয়, পশুদের হয় না ।
[ রচনাকাল : নভেম্বর – ডিসেম্বর, ২০১৫ ]
No comments:
Post a Comment