কলকাতা, ১৭ জুলাই ১৯৬৪
হাংরি আন্দোলন মামলা রুজু হবার আগে ।
দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টারের সংবাদ 'সাহিত্যে বিটলেমী' শিরোনামে ।
"আধুনিক সমাজে রাজনীতিকের প্রকৃত স্হান নির্দেশ করা হবে -- সেই স্হান হচ্ছে গণিকার মৃতদেহ ও গর্দভের লেজের মাঝামাঝি কোথাও । -- ঘোষণাটি একটি গোষ্ঠীর যাঁরা নিজেদের সাহিত্যগোষ্ঠী বলে পরিচয় দেন । তবে এঁদের রাজনীতিও আছে এবং সেই রাজনীতির যে দশদফা উদ্দেশ্য ঘোষণা করা হয়েছে তার অন্যতম একটি হচ্ছে উপরের এই উদ্ধৃতিটি ।
কাব্য সম্পর্কে এদের ঘোষণাটি আরও চমকপ্রদ -- 'কবিতাগ্রন্হ স্ত্রীর চেয়ে মনোরম ও টেঁকসই । বিবাহিত নারী দু-দিনের পুরোনো বইয়ের তলতলে মলাট বনে যায় কিন্তু কবিতার নারী দিনের পর দিন আঁট হয়ে চেপে ধরে আপনাকে ।'
১৯৬১ সালে কলকাতায় যে তরুণরা এই 'অতিরিক্ত দুঃসাহসের' এবং 'অভিভাবক, সমাজ, সাহিত্যিক শালীনতা, এমনকি পুলিশকেও উপেক্ষা করার' এই আন্দোলন শুরু করেন, নিজেদের তাঁরা 'হাংরি জেনারেশন' বা ক্ষুৎকাতর সম্প্রদায় নাম দিয়েছেন । এঁদের মুখপাত্রের কথা যদি লন তাহলে গত দু'বছরে এই আন্দোলন কলকাতার অন্তত অর্ধশত তরুণকে আকৃষ্ট করেছে । এঁদের বয়স ১৮ থেকে ৩২-এর মধ্যে ।
এইসব তরুণদের মধ্যে চাকুরিজীবী, অধ্যাপক, ছাত্র প্রভৃতি বিভিন্ন স্তরের মানুষ আছে । মধ্য কলকাতার কয়েকটি রেস্তরাঁয়, পান্হশালায়, কখনও পথেরই উপর দাঁড়িয়ে তাঁরা আড্ডা দেন । গাঁজা ভাঙ ইত্যাদি নেশায়ও তাঁদের অরুচি নেই ।
নর্দমা প্যান্টালুন ও ছুঁচালো জুতোপরা যে সব মস্তানের সন্ধানে পুলিশ হালে পাড়ায় পাড়ায় নজর রাখছে, অথচ নিজেদের বিটলস বলে পরিচয় দিয়ে যারা গঙ্গার ধারে গাঁজার ছিলিম টানতে যাচ্ছে তাদের সঙ্গে এক গোত্রে ফেললে হাংরিরা আপত্তি করেন । ( কেননা তাঁরা ইন্টেলেকচুয়াল ) কিন্তু প্রথমোক্তদের মতো এঁরাও পোশাক ও চলাফেরায় উদ্ভটের উপাসক এবং পুলিশ এঁদের সুনজরে দেখে না ।
বিশ্বব্যাপী যোগ : এই গোষ্ঠীর যোগাযোগ নাকি বিশ্বব্যাপী । নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরি এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এঁদের বুলেটিনের ফোটোস্টাট কপি দেখা যায় । লণ্ডনের এক বখ্যাত প্রকাশক এঁদের কবিতার একটি পেপারব্যাক সংকলন বার করবেন বলে স্হির করেছেন । সানফ্রানসিসকোর 'সিটিলাইটস জার্নাল' ( ১ নং ) এঁদের কবিতা সম্পর্কিত ম্যানিফেস্টো ছেপেছে । মেক্সিকোর 'এলকর্ণো এমপ্লুমাদো' স্প্যানিশ ভাষাভাষীদের সমক্ষে এঁদের পেশ করেছে । ইংল্যাণ্ড ও ইউরোপের অ্যাংরিরা যোগাযোগ করে বাহবা জানিয়েছে হাংরিদের ।
এই আন্দোলন চালানোর জন্য টাকা যোগায় কে ? এঁরা বলেন টাকা আসে 'শাড়ি-পরা মন্ত্রী, ঝরিয়া খনিশ্রমিক সংস্হা, বারুইপুর ব্যায়াম সমিতি, যোগমায়া ক্লাব, জনৈকা অ্যাকট্রেস, পাকিস্তানের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও হিন্দু মহাসভার জনৈকা সেক্রেটারির কাছ থেকে ।'
গ্রন্হতালিকা : এঁদের দলের সদস্যরা সাহিত্য, রাজনীতি, সমাজ সম্পর্কে বুলেটিন প্রকাশ করেন এবং কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিনে সাহিত্য চর্চা করেন । এঁদের সদস্যদের কয়েকটি গ্রন্হের নাম -- 'মাংসের ত্রিকোণ ও আমরা', 'ঘোড়ার সঙ্গে ভৌতিক কথাবার্তা', 'নষ্ট গাড়িবারান্দা', 'শয়তানের মুখ', 'গোলাকৃতি অন্ধকার', 'জারজ', 'অলীক তারবার্তা', 'ধর্ষণ' ইত্যাদি ।
এঁদের একদা চালু কোনো সাহিত্য পত্রিকায় এঁদের রচনা ছাপা হয় না । তাই এঁরা একদিন কোনো কাগজের অফিসে গিয়ে কয়েক-তা ফুলস্কেপ কাগজ দিয়ে বলে এসেছেন -- এটা একটা গল্প, ছাপতে হবে । তাঁরা জুতোর বাক্স পাঠিয়েছেন, পুস্তক সমালোচনা স্তম্ভে 'রিভিউ' করার জন্য ।"
হাংরি আন্দোলন মামলা রুজু হবার আগে ।
দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টারের সংবাদ 'সাহিত্যে বিটলেমী' শিরোনামে ।
"আধুনিক সমাজে রাজনীতিকের প্রকৃত স্হান নির্দেশ করা হবে -- সেই স্হান হচ্ছে গণিকার মৃতদেহ ও গর্দভের লেজের মাঝামাঝি কোথাও । -- ঘোষণাটি একটি গোষ্ঠীর যাঁরা নিজেদের সাহিত্যগোষ্ঠী বলে পরিচয় দেন । তবে এঁদের রাজনীতিও আছে এবং সেই রাজনীতির যে দশদফা উদ্দেশ্য ঘোষণা করা হয়েছে তার অন্যতম একটি হচ্ছে উপরের এই উদ্ধৃতিটি ।
কাব্য সম্পর্কে এদের ঘোষণাটি আরও চমকপ্রদ -- 'কবিতাগ্রন্হ স্ত্রীর চেয়ে মনোরম ও টেঁকসই । বিবাহিত নারী দু-দিনের পুরোনো বইয়ের তলতলে মলাট বনে যায় কিন্তু কবিতার নারী দিনের পর দিন আঁট হয়ে চেপে ধরে আপনাকে ।'
১৯৬১ সালে কলকাতায় যে তরুণরা এই 'অতিরিক্ত দুঃসাহসের' এবং 'অভিভাবক, সমাজ, সাহিত্যিক শালীনতা, এমনকি পুলিশকেও উপেক্ষা করার' এই আন্দোলন শুরু করেন, নিজেদের তাঁরা 'হাংরি জেনারেশন' বা ক্ষুৎকাতর সম্প্রদায় নাম দিয়েছেন । এঁদের মুখপাত্রের কথা যদি লন তাহলে গত দু'বছরে এই আন্দোলন কলকাতার অন্তত অর্ধশত তরুণকে আকৃষ্ট করেছে । এঁদের বয়স ১৮ থেকে ৩২-এর মধ্যে ।
এইসব তরুণদের মধ্যে চাকুরিজীবী, অধ্যাপক, ছাত্র প্রভৃতি বিভিন্ন স্তরের মানুষ আছে । মধ্য কলকাতার কয়েকটি রেস্তরাঁয়, পান্হশালায়, কখনও পথেরই উপর দাঁড়িয়ে তাঁরা আড্ডা দেন । গাঁজা ভাঙ ইত্যাদি নেশায়ও তাঁদের অরুচি নেই ।
নর্দমা প্যান্টালুন ও ছুঁচালো জুতোপরা যে সব মস্তানের সন্ধানে পুলিশ হালে পাড়ায় পাড়ায় নজর রাখছে, অথচ নিজেদের বিটলস বলে পরিচয় দিয়ে যারা গঙ্গার ধারে গাঁজার ছিলিম টানতে যাচ্ছে তাদের সঙ্গে এক গোত্রে ফেললে হাংরিরা আপত্তি করেন । ( কেননা তাঁরা ইন্টেলেকচুয়াল ) কিন্তু প্রথমোক্তদের মতো এঁরাও পোশাক ও চলাফেরায় উদ্ভটের উপাসক এবং পুলিশ এঁদের সুনজরে দেখে না ।
বিশ্বব্যাপী যোগ : এই গোষ্ঠীর যোগাযোগ নাকি বিশ্বব্যাপী । নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরি এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এঁদের বুলেটিনের ফোটোস্টাট কপি দেখা যায় । লণ্ডনের এক বখ্যাত প্রকাশক এঁদের কবিতার একটি পেপারব্যাক সংকলন বার করবেন বলে স্হির করেছেন । সানফ্রানসিসকোর 'সিটিলাইটস জার্নাল' ( ১ নং ) এঁদের কবিতা সম্পর্কিত ম্যানিফেস্টো ছেপেছে । মেক্সিকোর 'এলকর্ণো এমপ্লুমাদো' স্প্যানিশ ভাষাভাষীদের সমক্ষে এঁদের পেশ করেছে । ইংল্যাণ্ড ও ইউরোপের অ্যাংরিরা যোগাযোগ করে বাহবা জানিয়েছে হাংরিদের ।
এই আন্দোলন চালানোর জন্য টাকা যোগায় কে ? এঁরা বলেন টাকা আসে 'শাড়ি-পরা মন্ত্রী, ঝরিয়া খনিশ্রমিক সংস্হা, বারুইপুর ব্যায়াম সমিতি, যোগমায়া ক্লাব, জনৈকা অ্যাকট্রেস, পাকিস্তানের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও হিন্দু মহাসভার জনৈকা সেক্রেটারির কাছ থেকে ।'
গ্রন্হতালিকা : এঁদের দলের সদস্যরা সাহিত্য, রাজনীতি, সমাজ সম্পর্কে বুলেটিন প্রকাশ করেন এবং কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিনে সাহিত্য চর্চা করেন । এঁদের সদস্যদের কয়েকটি গ্রন্হের নাম -- 'মাংসের ত্রিকোণ ও আমরা', 'ঘোড়ার সঙ্গে ভৌতিক কথাবার্তা', 'নষ্ট গাড়িবারান্দা', 'শয়তানের মুখ', 'গোলাকৃতি অন্ধকার', 'জারজ', 'অলীক তারবার্তা', 'ধর্ষণ' ইত্যাদি ।
এঁদের একদা চালু কোনো সাহিত্য পত্রিকায় এঁদের রচনা ছাপা হয় না । তাই এঁরা একদিন কোনো কাগজের অফিসে গিয়ে কয়েক-তা ফুলস্কেপ কাগজ দিয়ে বলে এসেছেন -- এটা একটা গল্প, ছাপতে হবে । তাঁরা জুতোর বাক্স পাঠিয়েছেন, পুস্তক সমালোচনা স্তম্ভে 'রিভিউ' করার জন্য ।"
No comments:
Post a Comment