Thursday, December 5, 2019

হাংরি জেনারেশন - মলয় রায়চৌধুরীর লিগ্যাসি : বাসব রায়



১. মলয় রায়চৌধুরী আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেন মাত্র দুটো কারণে। ফিফটিজ-এ লেখালিখি শুরু করলেও তাঁর ভাষায় একেবারে রাবীন্দ্রিক ছাপ নেই। তখন যাঁরা লিখছিলেন বাংলা ভাষায়, মলয় ঠিক তার উলটোদিক থেকে লিখেছেন এবং লিখতে লিখতে নিজস্ব একটি ভাষা তৈরি করেছেন। চলমান গদ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, তাকে অস্বীকার করে লেখা সত্যিই কঠিন বিষয় ছিল, এমনকি আজও তা সমান সত্য। এখানে অজিত রায়ের ভাষার কথা বলতে হয় যে তিনি সমকালকে অতিক্রম করেছেন, অন্তত ভাষার দিক থেকে।

এবং মলয়ের নিজেকে উপুড় করে দেওয়ার ক্ষমতাকে আমি সেলাম করি। মলয় নিজেকেই যেন ছুরি দিয়ে কোপাতে থাকেন, আর তখন যে রক্তপাত হয় সেটাই তাঁর লেখালিখি। ছোটলোকের ছেলেবেলা, ডুবজলে, মেধার বাতানুকূল, নামগন্ধ যাই পড়ি না কেন, মলয় সেখানে নিজের মাংসের টুকরোই সাজিয়ে রেখেছেন। আশ্চর্যের ব্যাপার যে মলয় রায়চৌধুরী বাংলা সাহিত্যে কালজয়ী লেখক হতে আসেননি, তিনি এসেছিলেন বাঁক বদলের জন্য, যেন সেটাই তাঁর কাজ। মলয়ের সেরা লেখা কোনটা? আমি জানি না, সম্ভবত মলয়ও জানেন না। কেননা তিনি সেরা লেখা লিখতে চাননি কখনো, চেয়েছিলেন চলমান সাহিত্যের ওপর হাতুড়ির ঘা মেরে নিজের ভাষাটাকে প্রতিষ্ঠা করতে। এবং কোনো সন্দেহ নেই যে তিনি সফল।

আজ অজিত রায়, এর আগে নবারুণ, যে ভাষায় লিখছেন সেটা মলয় রায়চৌধুরীরই লিগ্যাসি।

২. শুধুই লিটল ম্যাগাজিনের লেখক বলে কিছু হয় না। যে কোনো লেখকই লেখেন পাঠকরা পড়বেন বলে। লিটল ম্যাগাজিনে সিরিয়াস লেখালিখি করা যায়, অধিকাংশ বাণিজ্যিক পত্রিকা যা ছাপায় না। কিন্তু শুধুই লিটল ম্যাগাজিনে লিখবেন বলে কোনো লেখক পণ করেন না। লেখকের লেখাটাই কাজ, কোথায় ছাপা হচ্ছে সেটা দ্বিতীয় বিষয়। লিটল ম্যাগাজিন শুরু হয়েছিল বা এখনও হয় প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মধ্য দিয়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে কোনো লিটল ম্যাগাজিন নিজেই প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়। এটা চমস্কির তত্ত্ব, যে একটা মত প্রবল হতে থাকলে তার বিরুদ্ধ মত উঠে আসে। এবার দ্বিতীয় মত শক্তিশালী হলে আসে তৃতীয় মত। খেলাটা চলতেই থাকে। এবং এভাবে লিটল ম্যাগাজিনে লিখেও কখন যে লেখক প্রতিষ্ঠান বা আপনার কথায় লিটল ম্যাগাজিনেই লিখে ফেলেন, এটা বোঝা যায় না।

মলয় রায়চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, আমার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই, আমি প্রতিষ্ঠান বিরোধী নই। আমার লেখাটা যদি ঠিকঠাক প্রতিষ্ঠান ছাপায় তাহলে আমার লেখা দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু ওরা তা ছাপবে না, তাই বলা যায় আমি প্রতিষ্ঠান বিরোধী নই, প্রতিষ্ঠান আমার বিরোধী।

৩. আমরা যাঁদের লেখালিখি-জীবন দেখে কবিতার জগতে এসেছিলাম, কবিতা লিখেই সমাজের ঝুঁটি নাড়িয়ে দিয়েছিলেন যিনি, আমার সম্পর্কিত দাদা, ওহঃ হো, মেজোকাকার কবিতা পড়ুন। আরেকটি তথ্য আমার জন্মের দুবছর আগে কবিতা লিখে জেলে গিয়েছিলেন ওই অসভ্য, বুনো, প্রথাবিরোধী বা নতুন প্রথার জন্মদাতা....
‘মলয়দাস বাউলের দেহতত্ব’

ডোমনি, তুইই দয়াল, যখন বিদেশে যাস কেন রে আনিস কিনে সেক্সটয় ?
ভাইব্রেটর, ডিলডো, বেন-ওয়া-বল, গুহ্যের মুক্তমালা ?
ডোমনি, তুইই দয়াল,জানি কেন বিডিএসএম কবিতার বই এনেছিস,
জি-বিন্দু হিটাচির ম্যাজিকের ছড়ি ? নিপল টিপে কাঁপাবার ক্লিপ ?
ডোমনি, তুইই দয়াল, হাত-পায়ে দড়ি চোখে ঠুলি আমাকে চেয়ারে
উলঙ্গ বেঁধে রেখে দিয়েছিস, নিজের ফাঁস খুলে তলাতল রক্তের স্বাদটুকু দিলি
ডোমনি, তুইই দয়াল, শুদ্ধ প্রেমে মজল যারা কাম-রতিকে রাখলে কোথায়
চাবুক মারিস তুই, চুলের মুঠি ধরে ক্ষিরোদধারাকে চুষে বের করে নিস
ডোমনি, তুইই দয়াল, চাতক স্বভাব নাহলে অমৃতের দুধ তুই দিবিনাকো
আমার খিদে নেই, মুখের ভেতরে কৃষ্ণের বিশ্বরূপ খেয়ে মজে গেছি
ডোমনি, তুইই দয়াল, যতো ইচ্ছে আনন্দ কর, দেহ নিয়ে খেল
আমি একটুও নড়ব না, আহ উহ করব না, যতো চাই ধাতুবীজ নিস
( দহগ্রাস পত্রিকায় প্রকাশিত )

৪. সমীর রায়চৌধুরী মারা গেলেন। কে তিনি? না সুনীল-শক্তি-সন্দীপন-দীপকের বন্ধু, হাংরি খ্যাত মলয় রায়চেৌধুরীর দাদা। এমন নয় যে সমীর রায়চেৌধুরী অন্যদের পরিচয়েই পরিচিত। তাঁর নিজেরও কিছু উচ্চমানের লেখা আছে। হাওয়া ৪৯ নামে দুরন্ত একটা লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনাও করেছেন বেশ কিছুদিন। আনন্দবাজারীয় সাহিত্যের পাঠকরা অবশ্য সমীরকে শুধু সুনীল-শক্তির চাইবাসার বন্ধু বলেই জানেন।
এর বাইরে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের বিভিন্ন আত্মজৈবনিক লেখালিখিতে সমীরকে আবিষ্কার করা যায়। অ্যালেন গিনসবার্গের কাশী যাত্রায় সমীর সম্ভবত সঙ্গী ছিলেন কিছুদিন। কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর সঙ্গে ওঠাবসা ছিল সমীরের, পরে চাইবাসায় চলে যান। জনশ্রুতি তাঁর বোনের সঙ্গেই প্রথম প্রেম শক্তির। তবে সমীর রায়চৌধুরীকে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন হাংরির নকল গ্রুপ। হাংরি আন্দোলন সম্পর্কিত খুব মোটা একটা বই আছে বাজারে। যার সম্পাদনা করেছেন সমীর চেৌধুরী। মজার ব্যাপার ওই বইটিতে হাংরির শেষকথা মলয় রায়চেৌধুরীর কোনো লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অথচ তাঁর দাদাই কি না সম্পাদক! সত্যটা হচ্ছে এই সম্পাদক সমীর চৌধুরী আজ মারা যাননি, অনেক আগেই হারিয়ে গেছেন বাংলা সাহিত্য থেকে। কেননা ওই বইয়ের সম্পাদক মলয়ের দাদা নন। এটাই মজা।

ইদানীং সমীর কিছুই লিখছিলেন না। কিন্তু তিনি ছিলেন গত ষাট বছরের বাংলা লেখালিখির এক আশ্চর্য দলিল। সমকালীন বাংলা সাহিত্যের সব খবর রাখতেন। তাঁর চেয়ে অনেক বেশি ধারালো হয়েও মলয় রায়চৌধুরী এই জায়গায় কিছুটা পিছিয়ে আছেন (যদি তুলনা করতেই হয়), মলয় বেশ কয়েক বছর লেখালিখির বাইরে ছিলেন। সমীর রায়চেৌধুরীর মৃত্যু মানে ইতিহাসের ইতিহাসে চলে যাওয়া।
তাঁকে শ্রদ্ধা…

৫. দায়িত্ব না নিয়ে একটু হাস্যচ্ছলে বলি, হাংরি লেখকদের মধ্যে কেউ আধুনিকতাবাদীদের মতো 'ডক্টরেট' ছিলেন না, ----- সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, মনোবিজ্ঞান কোন কিছুতেই একজনও 'উলেমা' ছিলেন না ... ঠিকই, কিন্তু এঁরা সকলেই প্রচুর পড়াশোনা করতেন, মলয়-সমীর সবচেয়ে বেশি পড়েছেন। শৈলেশ্বর কাছাকাছি থাকবেন। অরুণেশ একটু পেছনে।

৬.ইদানীং, না, ইদানীং নয়, যখন হাংরি আন্দোলন প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে, মানে সবাই যখন বলতে শুরু করেছেন হাংরিরা নতুন কিছু শুরু করেছিল, ভালোই করেছিল। লক্ষ করেছি, তখনই এই শৈলেশ্বর জাতীয়রা খোপ থেকে বেরিয়ে গলাবাজি করছেন যে আমিও ছিলাম... আমিই স্রষ্টা। এরকম আরো কেউ কেউ আছেন। শৈলেশ্বর অন্য এক সমীর চৌধুরীকে দিয়ে ঢাউস বই সম্পাদনা করিয়েছেন হাংরি আন্দোলন, প্রজন্ম নিয়ে। সেখানে মলয় রায়চৌধুরীর কোনো কবিতা নেই, লেখা নেই। হতে পারে ! মলয়কে ছাড়া হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে একটা বাক্য লেখা সম্ভব? কিন্তু সেটাই হয়েছে। শৈলেশ্বর কয়েকটা ভালো কবিতা লিখেছেন ঠিকই, কিন্তু চরিত্রে গোলমাল আছে... কিংবা এটাই হয়তো অনেকের পছন্দের চরিত্র ।

৭. “আপনারা গত ৪৭ বছরে কোন বালডা ছিড়ছেন ; রাজনীতি মেধায় লাথি মারছে…; রাজা আছে, নীতি নাই
নেতা চোদার টাইম নাই ; লাঠির ভয় দেখাবে না। লাঠি একদম ভরে দিব।”
আমার কথা নয়, বাংলাদেশে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পোস্টারের ভাষা। এবং আমার কথাটা হল যে এটাই ভাষা। এটাই সভ্য ভাষা। সমাজ বদলে যাচ্ছে, পৃথিবী বদলে যাচ্ছে, সংস্কার বদলে যাচ্ছে, মানসিকতা বদলে যাচ্ছে আর তাই এটাই মান্য ভাষা।

বাংলাভাষায় হাংরি জেনারেশন মুভমেন্ট প্রথম এরকম ভাষা ব্যবহার করেছিল, তার অপ্রত্যাশিত সমালোচনা হয়েছে, যদিও এখন অনেকেই ওই আন্দোলনের ক্ষীর খেতে চাইছেন। তো সেটা অন্য কথা, যা বলার তা হল এই যে যাঁরা বৈষ্ণব সাহিত্যের পর, বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দ-বিভূতি-শরতের পর, আর পড়েননি, খুব বেশি হলে সুনীল-শঙ্খ, তাঁদের বলার, আপনারা একটু মলয়-অজিত-নবারুণ-সন্দীপন পড়ুন।
এখন আর প্রেম করছি বা ভালোবাসি নয়, বলুন প্রেম পাচ্ছে। সংস্কার বদলে যাচ্ছে, চরিত্র-চরিত্রহীনতার সংজ্ঞা বদলে যাচ্ছে... আপনারা আর ভাষার শুদ্ধতা আশা করবেন না... সংস্কারের শুদ্ধতা আশা করবেন না... জীবনকে দেখুন.. শুধু বেঁচে না থেকে জীবনকে যাপন করুন... আনন্দে থাকুন... আত্মাকে কষ্ট দেবেন না... যা মন থেকে করতে ইচ্ছে যাচ্ছে সেটাই করুন... সবাইকে কষ্ট দিন, শুধু নিজেকে কষ্ট দেবেন না... গালি দিন...প্রেম করুন... মূল কথা আনন্দে থাকুন... নির্মল থাকুন...।

৮.”একাই লড়েছিলুম; কেউ বলেনি হোক কলরব । একাই নেমেছিলুম ব্যাঙ্কশাল কোর্টের সিঁড়ি বেয়ে। সেদিন একাই কলকাতার পথে ঘুরেছিলুম সকাল পর্যন্ত ।” বলেছেন মলয় রায়চৌধুরী । লড়াইটা শুরু একাই করতে হয়, পরে সহযাত্রী হয় অনেকে, যেমন এখন হয়েছি, আমরা

৯. ‘যুগশঙ্খ’ পত্রিকার জন্য নেয়া সাক্ষাৎকারে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমাকে বলেছিলেন, "হাংরি আন্দোলন আরম্ভ করার জন্য মলয় ইচ্ছে করেই আমার আমেরিকা-বাসের সময়টা বেছে নিয়েছিল"।

১০. সাইয়েদ জামিলের কবিতা  কারো ভালো লেগেছে, কারো ভালো লাগেনি, যা স্বাভাবিক। সেই প্রসঙ্গে একটা বা দুটো কথা যা আমার বলতে ইচ্ছে করছে, তা হল, আজ, এই ২০১৮ সালে, সাহিত্যে শুদ্ধতা আর আশা না-করাই ভালো। এখন আর কেউ বলছে না ‘কুৎসা রটাচ্ছে’, বরং ‘কুৎসা করছে’ চলছে। শব্দের ব্যবহার বদলে যাচ্ছে, ভাষা বদলে যাচ্ছে ; বদলে যাচ্ছে সংকেত, প্রতীক, চিত্রকল্প। ফেসবুক করছ, গুগল করুন... এসব বেশ চলছে। বিদেশে এটা অনেক আগেই প্রতীয়মান। দু-একটি উল্লেখ মনে হয় সংগত।
America when will we end the human war?
Go fuck yourself with your atom bomb.
I don’t feel good don’t bother me.
এই কবিতা ১৯৫৭ সালে লিখেছেন অ্যালেন গিনসবার্গ।
ষাটের দশকে ‘আমায় দিয়ে করিয়ে নিল তিন বিধবা’ লিখেছেন অরুণেশ ঘোষ। এই সেদিন ‘ভুলে যাবেন না, অনেক কিছুর উপরই পেচ্ছাপ করে যেতে হবে আমাদের’ লিখলেন বন্ধু-কবি প্রবুদ্ধসুন্দর কর। আর যে কবিতা দিয়ে এই পোস্ট শেষ করব সেটা হল আরেকটা কবিতা, অংশ নয়, গোটা...
ওঃ মরে যাব মরে যাব মরে যাব
আমার চামড়ার লহমা জ্বলে যাচ্ছে অকাট্য তুরুপে
আমি কী কোরবো কোথায় যাব ওঃ কিছুই ভাল্লাগছে না
সাহিত্য-ফাহিত্য লাথি মেরে চলে যাব শুভা
শুভা আমাকে তোমার তরমুজ আঙরাখার ভেতর চলে যেতে দাও
চুরমার অন্ধকারে জাফ্রান মশারির আলুলায়িত ছায়ায়
সমস্ত নোঙর তুলে নেবার পর শেষ নোঙর আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে
আর আমি পারছি না, অজস্র কাঁচ ভেঙে যাচ্ছে কর্টেক্সে
আমি জানি শুভা, যোনি মেলে ধরো, শান্তি দাও
প্রতিটি শিরা অশ্রুস্রোত বয়ে নিয়ে যাচ্ছে হৃদয়াভিগর্ভে
শাশ্বত অসুস্থতায় পচে যাচ্ছে মগজের সংক্রামক স্ফুলিঙ্গ
মা, তুমি আমায় কঙ্কালরূপে ভূমিষ্ঠ করলে না কেন ?
তাহলে আমি দুকোটি আলোকবর্ষ ঈশ্বরের পোঁদে চুমো খেতুম
কিন্তু কিছুই ভলো লাগছে না আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না
একাধিক চুমো খেলে আমার গা গুলোয়
ধর্ষণকালে নারীকে ভুলে গিয়ে শিল্পে ফিরে এসেছি কতদিন
কবিতার আদিত্যবর্ণা মূত্রাশয়ে
এসব কী হচ্ছে জানি না তবু বুকের মধ্যে ঘটে যাচ্ছে অহরহ
সব ভেঙে চুরমার করে দেব শালা
ছিন্নভিন্ন করে দেব তোমাদের পাঁজরাবদ্ধ উৎসব
শুভাকে হিঁচড়ে উঠিয়ে নিয়ে যাব আমার ক্ষুধায়
দিতেই হবে শুভাকে
ওঃ মলয়
কোলকাতাকে আর্দ্র ও পিচ্ছিল বরাঙ্গের মিছিল মনে হচ্ছে আজ
কিন্তু আমাকে নিয়ে আমি কী কোরবো বুঝতে পারছি না
আমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
আমাকে মৃত্যুর দিকে যেতে দাও একা
আমাকে ধর্ষণ ও মরে যাওয়া শিখে নিতে হয়নি
প্রস্রাবের পর শেষ ফোঁটা ঝাড়ার দায়িত্ব আমায় শিখতে হয়নি
অন্ধকারে শুভার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়া শিখতে হয়নি
শিখতে হয়নি নন্দিতার বুকের ওপর শুয়ে ফরাসি চামড়ার ব্যবহার
অথচ আমি চেয়েছিলুম আলেয়ার নতুন জবার মতো যোনির সুস্থতা
যোনিকেশরে কাচের টুকরোর মতন ঘামের সুস্থতা
আজ আমি মগজের শরণাপন্ন বিপর্যয়ের দিকে চলে এলুম
আমি বুঝতে পারছি না কী জন্যে আমি বেঁচে থাকতে চাইছি
আমার পূর্বপুরুষ লম্পট সাবর্ণচৌধুরীদের কথা আমি ভাবছি
আমাকে নতুন ও ভিন্নতর কিছু কোরতে হবে
শুভার স্তনের ত্বকের মতো বিছানায় শেষবার ঘুমোতে দাও আমায়
জন্মমুহূর্তের তীব্রচ্ছটা সূর্যজখম মনে পড়ছে
আমি আমার নিজের মৃত্যু দেখে যেতে চাই
মলয় রায়চৌধুরীর প্রয়োজন পৃথিবীর ছিল না
তোমার তীব্র রূপালি য়ূটেরাসে ঘুমোতে দাও কিছুকাল শুভা
শান্তি দাও, শুভা শান্তি দাও
তোমার ঋতুস্রাবে ধুয়ে যেতে দাও আমার পাপতাড়িত কঙ্কাল
আমাকে তোমার গর্ভে আমারই শুক্র থেকে জন্ম নিতে দাও
আমার বাবা-মা আন্য হলেও কি আমি এরকম হতুম ?
সম্পূর্ণ ভিন্ন এক শুক্র থেকে মলয় ওরফে আমি হতে পারতুম ?
আমার বাবার অন্য নারীর গর্ভে ঢুকেও কি মলয় হতুম ?
শুভা না থাকলে আমিও কি পেশাদার ভদ্রলোক হতুম মৃত ভায়ের মতন ?
ওঃ বলুক কেউ এসবের জবাবদিহি করুক
শুভা, ওঃ শুভা
তোমার সেলোফেন সতীচ্ছদের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীটা দেখতে দাও আমায়
পুনরায় সবুজ তোশকের ওপর চলে এসো শুভা
যেমন ক্যাথোড রশ্মিকে তীক্ষ্ণধী চুম্বকের আঁচ মেরে তুলতে হয়
১৯৫৬ সালের সেই হেস্তনেস্তকারী চিঠি মনে পড়ছে
তখন ভাল্লুকের ছাল দিয়ে সাজানো হচ্ছিল তোমার ক্লিটোরিসের আশপাশ
পাঁজর নিকুচি করা ঝুরি তখন তোমার স্তনে নামছে
হুঁশাহুঁশহীন গাফিলতির বর্ত্মে স্ফীত হয়ে উঠছে নির্বোধ আত্মীয়তা
আ আ আ আ আ আ আ আ আ আঃ
মরে যাব কিনা বুঝতে পারছি না
তুলকালাম হয়ে যাচ্ছে বুকের ভেতরকার সমগ্র অসহায়তায়
সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়ে যাব
শিল্পের জন্যে সক্কোলকে ভেঙে খান-খান করে দোব
কবিতার জন্যে আত্মহত্যা ছাড়া স্বাভাবিকতা নেই
শুভা
আমাকে তোমার লাবিয়া ম্যাজোরার স্মরণাতীত অসংযমে প্রবেশ কোরতে দাও
দুঃখহীন আয়াসের অসম্ভাব্যতায় যেতে দাও
বেসামাল হৃদয়বত্তার স্বর্ণসবুজে
কেন আমি হারিয়ে যাইনি আমার মায়ের যোনিবর্ত্মে ?
কেন আমি পিতার আত্মমৈথুনের পর তাঁর পেচ্ছাপে বয়ে যাইনি ?
কেন আমি রজোস্রাবে মিশে যাইনি শ্লেষ্মায় ?
অথচ আমার নীচে চিত আধবোজা অবস্থায়
আরামগ্রহণকারিণী শুভাকে দেখে ভীষণ কষ্ট হয়েছে আমার
এরকম অসহায় চেহারা ফুটিয়েও নারী বিশ্বাসঘাতিনী হয়
আজ মনে হয় নারী ও শিল্পের মতো বিশ্বাসঘাতিনী কিছু নেই
এখন আমার হিংস্র হৃৎপিণ্ড অসম্ভব মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে
মাটি ফুঁড়ে জলের ঘূর্ণি আমার গলা ওব্দি উঠে আসছে
আমি মরে যাব
ওঃ এসমস্ত কী ঘটছে আমার মধ্যে
আমি আমার হাত হাতের চেটো খুঁজে পাচ্ছি না
পায়জামায় শুকিয়ে-যাওয়া বীর্য থেকে ডানা মেলছে
৩০০০০০ শিশু উড়ে যাচ্ছে শুভার স্তনমণ্ডলীর দিকে
ঝাঁকে-ঝাঁকে ছুঁচ ছুটে যাচ্ছে রক্ত থেকে কবিতায়
এখন আমার জেদি ঠ্যাঙের চোরাচালান সেঁদোতে চাইছে
হিপ্নোটিক শব্দরাজ্য থেকে ফাঁসানো মৃত্যুভেদী যৌনপরচুলায়
ঘরের প্রত্যেকটা দেয়ালে মারমুখি আয়না লাগিয়ে আমি দেখছি
কয়েকটা ন্যাংটো মলয়কে ছেড়ে দিয়ে তার অপ্রতিষ্ঠিত খেয়োখেয়ি।
এই কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে, কার কবিতা এবং কবিতার নাম কী বলার জন্য কোনো পুরস্কার নেই।

১১. এখনকার কলেজ পড়ুয়াদের তো আর মলয়ের মেধা নেই ।

১২. বহু আগে আর্থার মিলার বলেছিলেন, ‘ভাষাকে যে আক্রমণ সরে সেই ভাষাকে বাঁচায়।’ এখানে আমি অজিত রায়ের নামটি উল্লেখ করতে চাই, যিনি ভাষাকে আক্রমণ করে বাংলাভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এই আক্রমণের বিষয়টি অবশ্য সবাই সাদরে আমন্ত্রণ জানাবেন না। কেননা তাঁর লেখায় উল্লেখ না করলেও একটা শ্রেণির প্রতি তাচ্ছিল্য, শ্লেষ ধরা পড়ে। এবং এখান থেকেই তিনি হয়ে যান ব্রাত্য, যেভাবে একদিন মলয় রায়চৌধুরীকে কলকাতা রেখেছিল একটু দূরে। আজ তিনিই কি না বাংলাভাষার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জীবিত ব্যক্তিত্ব।

.
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আত্মীয়-পরিজনের বাইরে আমি যাঁর নাম প্রথম শুনেছি, তিনি, 
মলয় রায়চৌধুরী। হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথ নন, মলয় রায়চৌধুরী। আমি যখন বড় হচ্ছি, ওই ১৯৬৬ 
থেকে, চারপাশে শুধু একজনের কথাই চর্চিত, তিনি, মলয় রায়চৌধুরী। ১৯৬৪ সালে মলয় 
নেমে আসছেন ব্যাঙ্কশাল কোর্টের সিঁড়ি দিয়ে, একা। আর ধীরে ধীরে তিনি চর্চায় চলে আসছেন 
কলকাতা সন্নিহিত অঞ্চলের। তখন বেহালা, যেখানে আমার ছোটবেলা কেটেছে, 
কলকাতার মধ্যে ছিল না। বেহালার সাবর্ণপাড়ার দ্বাদশ মন্দিরের চাতালে কিংবা 
শখেরবাজার মোড়ের আড্ডায় শুধুই মলয়। 
তো আমি মলয় রায়চৌধুরীকে নিয়ে বড় হয়েছি বললে সম্ভবত অত্যুক্তি হয় না। 
ইস্কুলে যাই, সেখানে শিক্ষকরা আলোচনা করেন মলয়কে নিয়ে ; ঘরে ফিরি, দাদা-কাকারা 
আলোচনা করেন মলয়কে নিয়ে ; একটু সন্ধ্যায় পাড়ার কালভার্টেও 
আলোচনার একটাই বিষয় - মলয়। 
মলয়-বাসুদেব-ফাল্গুনী-শৈলেশ্বর-সুবো-সুবিমল-দেবী-অবনী-প্রদীপ প্রমুখ তখন 
আমাদের ঘরের ছেলে। তাঁদের লেখা যেখান থেকে হোক সংগ্রহ করে পড়ছেন বয়োজ্যেষ্ঠরা। 
এই আবহে আমি বড় হয়েছি। আর তাই মূলধারার সাহিত্যের প্রতি কখনো আগ্রহ বোধ করিনি। 
১৪-১৫ বছরের মধ্যেই আমি পড়ে নিয়েছি ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ বা ‘চর্মরোগ’। 
এবং সেখান থেকেই এই প্রতীতী সম্ভবত জন্মে যায় যে সাহিত্য বলতে এসবই, 
বাস্তবতা-জীবন-অন্ত্যজ-প্রান্তিক স্বর ছাড়া সাহিত্য হয় না। 
এর বেশ কিছু পড়ে যখন আনন্দবাজারীয় লেখালিখি পড়তে গেছি, হাসি পেয়েছে। 
বাজারি আনন্দের প্রকাশিত সাহিত্য ওই সুখী মধ্যবিত্তের জন্য। সেখানে একটা কৃত্রিম ভাষা,
 নাটকীয় কিছু শব্দের সমাহার। সেখানে জীবন, অন্তত আমি, কখনো খুঁজে পাইনি। 
অথচ শিক্ষিত বাঙালি ওইসব পড়েই নিজেকে এলেমদার, পণ্ডিত মনে করেছে, করে। 
আর ঠিক এখানেই মলয় ধাক্কা মারেন। বাংলা গদ্যের রীতি ঠিক কী হবে তা সম্ভবত 
ঠিক হয়ে যায় রবীন্দ্রনাথ নোবেল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, যে লিখলে ওই জোব্বা পরা বুড়োর 
মতোই লিখতে হবে। এবং এরপর যাঁরা লিখতে এসেছেন, যেমন 
শরৎ-তারাশঙ্কর-মানিক-বিভূতি-শরদিন্দু থেকে হালের সুনীল-শীর্ষেন্দু-সমরেশরা, 
কেউ ওই গদ্যের বাইরে যেতে পারেননি। বিষয় যাঁর যেমনই হোক, গদ্যের রীতি 
বা ভাষার আঙ্গিক ও প্রকরণ সেই রাবিন্দ্রিকএবং বাজার বা বাংলা সাহিত্যের 
কলকাত্তাইয়া প্রতিষ্ঠান এই গদ্যকেই প্রমোট করেছে। পাঠকও খুশি থেকেছেন এই গদ্য পড়ে। 
এর বাইরে না লেখক না পাঠক কেউই ভাবতে পারেননি। 
মলয় রায়চৌধুরী ঠিক এই জায়গাটাকেই ধাক্কা দিয়েছিলেন। তাঁর বহুচর্চিত কবিতা 
‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ থেকে হালের ‘ছোটলোকের ছেলেবেলা’ লেখাতেও ওই ধাক্কা স্পষ্ট। 
লেখালিখিতে বাস্তবতা-জীবন যেমন মলয় রায়চৌধুরী প্রথম বাংলা সাহিত্যে এনেছেন, 
ঠিক তেমনই গদ্যের ভাঙচুর তাঁর লেখাতেই আমরা প্রথম দেখতে পেয়েছি। আর এজন্যই 
প্রতিষ্ঠান তাঁকে ব্রাত্য করে রেখেছিল, হয়তো-বা এখনও করেই রেখেছে। 
মলয়ের প্রথম প্রকাশিত বই সম্ভবত ‘মার্কসবাদের উত্তরাধিকার’। সেখানে মলয় কী লিখেছেন 
তা এখানে আলোচ্য নয়। বলার কথা হল, মলয় হাফ লিটারেট সাহিত্যিক নন, পড়াশোনা 
করেই লিখতে এসেছিলেন। আর সেজন্য মলয়ের লেখালিখি যতটা না আবেগের তার চেয়ে 
অনেক বেশি মেধাজারিত। কোনো এক সাক্ষাৎকারে মলয় জানিয়েছেন যে বৈদ্যুতিক ছুতার 
লিখতে লেগেছিল তিন মাস। কেন? না, প্রতিটি শব্দ অনেক চিন্তা করে বসাতে হয়েছে। 
তাহলে আমি দুকোটি আলোকবর্ষ ঈশ্বরের পোঁদে চুমু খেতুম
এই লাইন মলয়কে লিখতে হয়েছে, বাংলাভাষাকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য। 
আর কে না জানে ‘ভাষাকে যে আক্রমণ করে সে-ই ভাষাকে বাঁচায়।’ 
মিথ্যে না বলতে কী, রক্তরস কমে যাওয়া বাংলাভাষাকে ওই মলয় রায়চৌধুরীই 
প্রথম আক্রমণ করেন। তাঁর সেই শক্তি ছিল বলেই প্রতিষ্ঠান তাঁকে উঠোনে প্রবেশের 
অনুমতি দেয়নি। বরং মলয়দের শক্তি পাঠক-সহ-প্রতিষ্ঠানকে গ্রাস করে নিতে পারে 
ভেবেই তাঁরা সম্মিলিত আক্রমণের সামনে পড়েন। যার ফলশ্রুতি কিছু বই নিষিদ্ধ, 
মামলা, মলয় দোষী সাব্যস্ত এবং তারপর ১৯৬৭ সালে মামলায় জয়। 
এর ফলে মলয়ের কী হয়েছে সে বিচার অন্যরা করবেন, বাংলাভাষার যে বিপুল 
ক্ষতি হয়ে গেল তা অনস্বীকার্য। কেননা মলয় তো বটেই, ইদানীং 
অজিত রায়-রবীন্দ্র গুহ-রণবীর পুরকায়স্থরা তুলে আনছেন যে নিচুতলার সংস্কৃতি, 
জীবনযাপনের শৈলী, আচার-আচরণ, ক্রোধ-আনন্দ, প্রেম-ভালোবাসা... 
অসম্ভব দরকারি ছিল বাংলা সাহিত্যে। এগুলো বাদ দিয়ে সাহিত্য যেন একেবারে ম্যাড়ম্যাড়ে। 
মলয় রায়চৌধুরী প্রথম এই ভাবনা এনেছিলেন বাংলা সাহিত্যে। কী? না, নিজেকে সাংস্কৃতিক 
জারজ ঘোষণা করে সরাসরি বলেছিলেন, অন্ত্যজ-প্রান্তিক স্বর উঠে আসা উচিত সাহিত্যে। 
এবং তা হবে সরাসরি। সেখানে কোনো ফাঁকি থাকবে না। আর তাই, মলয় রায়চৌধুরীর, 
ঠিক এই জায়গায় কাল্ট ফিগারের সম্মান প্রাপ্য।
মলয় রায়চৌধুরীকে নিয়ে অনেকেই লিখেছেন, ভবিষ্যতেও লিখবেন, মলয় হলেন বাংলা 
সাহিত্যের জায়মান কিংবদন্তি, যাঁকে আনগ্ন শুষে নিলেও শেষ হয় না। 
কবি-প্রাবন্ধিক-উপন্যাসকার যেভাবেই তাঁকে অভিহিত করা হোক না কেন, 
কোনোটাই মলয় সম্পর্কে শেষ কথা নয়। 
আর তাই একটা লেখায় সমগ্র মলয় রায়চৌধুরীকে ধরা আমি তো আমি, 
শিবের বাপেরও অসাধ্য কাজ! আর তাই আমি অন্য দু-একটি কথা বলি। 
মলয়ের উদ্যোগে হাংরি আন্দোলন যখন শুরু হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই সকলে 
একে অচ্ছু্ৎ ঘোষণা করেছিলেন। আজ হাংরি আন্দোলনকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম
 প্রভাবশালী আন্দোলনের মর্যাদা পাচ্ছে। আর তাই বিখ্যাতরা যেভাবেই হোক হাংরির 
ঝোল নিজের কোলে টানতে ব্যস্ত। 
শৈলেশ্বর ঘোষ হাংরি-মামলার পর মুচলেকা দিয়েছিলেন, সবাই জানেন। 
পরে তিনিই হাংরি আন্দোলনের স্রষ্টা বলে কলার তুলে হাঁটতে শুরু করেন, আমি দেখেছি। 
আপাত-ঋষি শঙ্খ ঘোষ এমনভাবে এতদিন লেখালিখি করেছেন যে হাংরি শব্দটাই 
শোনেননি বা শুনলে তাঁর হার্টফেল হবে। তো তিনি সম্প্রতি একটি হাংরি সংকলনে
 নিজের কবিতা রেখে যার-পর-নেই আহ্লাদিত। সৌজন্য শৈলেশ্বর ঘোষ। 
সাহিত্যিক-সততায় মলয় রায়চৌধুরীর পক্ষে আদালতে কথা বলে অনেকটা আলো 
পেয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তো তিনিই আমাকে রেকর্ডেড ইন্টারভিউতে বললেন 
২০০৬ সালে যে
 ‘হাংরি আন্দোলনের জন্য মলয় ঠিক আমার আমেরিকা-বাসের সময়টাই বেছে নিয়েছিল।’ 
তো তাতে কী হল? সুনীল, ‘আমি থাকলে ওই আন্দোলনের নেতৃত্ব স্বাভাবিকভাবেই 
আমার হাতে থাকত।’ এখান থেকে বোঝা যায়, হাংরি আন্দোলনের সঙ্গে যেভাবেই 
হোক নাম জড়ানোর কী আকুল প্রচেষ্টা সুনীলের! ছো...
আর এই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ই কৃত্তিবাস-এ মলয়ের কবিতা ছাপাননি। 
সাহিত্যিক সততা আর কাকে বলে!
যে কোনো আন্দোলনের একটা প্রকরণ আছে। আছে একটা স্ফুলিঙ্গ। 
আন্দোলনকে যত দমিয়ে রাখা হয় ততই আন্দোলনের অন্তঃশক্তি বাড়ে। 
আর সেটা হাংরি মুভমেন্টের ক্ষেত্রেও সমান সত্য। আজও যখন কেউ 
‘ছোটলোক’-এর সংস্কৃতি তুলে আনেন কবিতায়-গদ্যে, আমরা বলি বাঃ 
তুই তো হাংরিদের মতো লিখছিস। 
এবং সত্তরের অরুণেশ, আটের অজিত রায়, নয়ের রাজা সরকার, 
শূন্য দশকের বিকাশ সরকার, প্রথম দশকের তিস্তা রায়, কিংবা বেশ 
আগের রবীন্দ্র গুহ, নবারুণ ভট্টাচার্য (যদিও কৃত্রিম ভাষা), দেবীপ্রসাদ সিংহ, 
সমরজিৎ সিংহ (গদ্য), আফসার আহমেদ, দুলাল ঘোষ, অলোক গোস্বামী, এমনকি 
স্বপ্নময় চক্রবর্তীও ; হালের কান্তারভূষণ নন্দী, মৃণাল দেবনাথ, ধীরাজ চক্রবর্তীরাও 
জেনে বা না-জেনে সেই হাংরিদের লিগ্যাসি হয়ে উঠেছেন। এঁরা ভেঙে ফেলেছেন 
মূলধারার বাংলা সাহিত্যের যাবতীয় ফর্ম, তাঁদের লেখায় উঠে আসছে অন্ত্যজ জীবনযাপন, 
প্রেম-ক্রোধ-দুঃখ-আনন্দের কথা। এখানেই মলয় রায়চৌধুরী অমর হয়ে যান।

No comments:

Post a Comment

হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে

  হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে প্রখ্যাত কবি, হাংরির কবি দেবী রায় ৩ অক্টোবর ২০২৩ চলে গেছেন --- "কাব্য অমৃতলোক " ফ্ল্...