Saturday, August 4, 2018

ব্রজকুমার সরকার : হাংরি আন্দোলন

হাংরি আন্দোলন

বাংলা সাহিত্যে স্হিতাবস্হা ভাঙার আওয়াজ তুলে, ইশতাহার প্রকাশের মাধ্যমে, শিল্প ও সাহিত্যের যে একমাত্র আন্দোলন হয়েছে, তার নাম হাংরি আন্দোলন, যাকে অনেকে বলেন হাংরিয়ালিস্ট, ক্ষুধিত, ক্ষুৎকাতর, ক্ষুধার্ত আন্দোলন । আর্তি বা কাতরতা শব্দগুলো মতাদর্শটিকে সঠিক তুলে ধরতে পারবে না বলে, আন্দোলনকারীরা শেষাবধি হাংরি শব্দটি গ্রহণ করেন । হাংরি আন্দোলন, এই শব্দবন্ধটি বাংলাভাষায় ঠিক সেভাবে প্রবেশ করেছে যে ভাবে মুসলিম লিগ, কম্ম্যুনিস্ট পার্টি বা কংগ্রেস দল ইত্যাদি সংকরায়িত শব্দবন্ধগুলো । উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে ডিসকোর্সের সংকরায়ণকে স্বীকৃতি দেয়া তাঁদের কর্মকাণ্ডের অংশ ছিল । ১৯৬১ সালের নভেম্বরে পাটনা শহর থেকে একটি ইশতাহার প্রকাশের মাধ্যমে হাংরি আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং হারাধন ধাড়া ওরফে দেবী রায় ।কবিতা সম্পর্কিত ইশতাহারটি ছিল ইংরেজিতে, কেন না পাটনায় মলয় রায়চৌধুরী বাংলা প্রেস পাননি । আন্দোলনের প্রভাবটি ব্যাপক ও গভীর হলেও, ১৯৬৫ সালে প্রকৃত অর্থে হাংরি আন্দোলন ফুরিয়ে যায় ।

১৯৬২-৬৩ সালে হাংরি আন্দোলনে যোগদান করেন বিনয় মজুমদার, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, সুবিমল বসাক, ত্রিদিব মিত্র, ফালগুনী রায়, আলো মিত্র, অনিল করঞ্জাই, সুভাষ ঘোষ, করুণানিধান মুখোপাধ্যায়, প্রদীপ চৌধুরী, সুবো আচার্য, হরনাথ ঘোষ, নীহার গুহ, আজিতকুমার ভৌমিক, অশোক চট্টোপাধ্যায়, অমৃততনয় গুপ্ত, ভানু চট্টোপাধ্যায়, শংকর সেন, যোগেশ পাণ্ডা, মনোহর দাশ, তপন দাশ, শম্ভু রক্ষিত, মিহির পাল, সুকুমার মিত্র, দেবাশিষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ।


নকশাল আন্দোলনের পর উত্তরবঙ্গ এবং ত্রিপুরার তরুণ কবিরা( অরুণেশ ঘোষ, সেলিম মোস্তাফা , নিত্য মালাকার প্রমুখ) আন্দোলনটিকে আবার জীবনদান করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাত্ত্বিক ভিত্তিটি জানা না থাকায় তাঁরা আন্দোলনটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি ।

হাংরি আন্দোলনের অবদানঃ
হাংরি আন্দোলনের অবদান সম্পর্কে বিভিন্ন আলোচক বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন । হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে এম ফিল এবং পি আইচ ডি গবেষণা হয়েছে । অতএব যে কয়েকটি ক্ষেত্রে গবেষকরা একমত সেগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে ।
(১). পত্রিকার নামকরণ : হাংরি আন্দোলনের পূর্বে পত্রিকার নাম হতো কবিতা, পূর্বাশা, অরণি কৃত্তিবাস, অগ্রণি, শতভিষা,উত্তরসূরী, ধ্রুপদী, সংবেদ, ক্রান্তি, চতুরঙ্গ ইত্যাদি । হাংরি আন্দোলনকারীরা যে-ধরণের নাম রাখার চল করলেন তা বৈপ্লবিক । ফলে তার পর থেকে পত্রিকার নামকরণে বিপুল পরিবর্তন ঘটল । যেমন, কৌরব, আবার এসেছি ফিরে, মানুষের বাচ্চা, ঢ়পের কাগজ, আমি আর লীনা হঁটে চলেছি, ক্ষেপচুরিয়াস, দিল্লী হাটার্স ইত্যাদি । (২) সাবঅলটার্ন বা নিম্নবর্গ থেকে সাহিত্যক্ষেত্রে আগমন, যা কবিতা, কৃত্তিবাস, শতভিষা, ধ্রুপদী ইত্যাদি পত্রিকায় দৃষ্টিকটুভাবে অনুপস্হিত থাকতো । হাংরি আন্দোলন প্রথম যৌথভাবে প্রন্তিকের ডিসকোর্সকে স্হান করে দিল । (৩). পাঠবস্তুতে মুক্তসূচনা ও মুক্তসমাপ্তির প্রচলন ,বিশেষ করে প্রদীপ চৌধুরী, ফালগুনী রায়, মলয় রায়চৌধুরী, ত্রিদিব মিত্র ও শৈলেশ্বর ঘোষের কবিতা-বিশেষ যেখান থেকে ইচ্ছা পড়া যায়, স্তবক ও পঙক্তি উপর-নিচ রদবদল করে পড়া যায় । একই প্রক্রিয়া গদ্যে এনেছেন সুভাষ ঘোষ, সমীর রায়চৌধুরী, ফালগুনী রায় ও সুবিমল বসাক । (৪). মনস্হিতি প্রকাশকালীন অব্যয় শব্দ কবিতায় প্রয়োগ; যেমন ওঃ, আঃ, আহ, আআআআআআআহ‌,, উঃ, শ্যাঃ, ফুঃ, হাহ ইত্যাদি, বিশেষ করে মলয় রায়চৌধুরী, প্রদীপ চৌধুরী ও ফালগুনী রায়- এর কবিতায় । (৫). পাঠবস্তুতে অনুক্রমহীনতা প্রয়োগ : বাক্যবুননে লজিকাল ক্র্যাক বা যুক্তিফাটল প্রয়োগ যা দেবী রায়, মলয় রায়চৌধুরী, শৈলেশ্বর ঘোষ প্রমুখের কবিতার বৈশিষ্ট্য । সত্তর দশকের পর পশ্চিম বাংলায় এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে । (৬). গুরুচণ্ডালী শব্দগঠন ও বাক্য প্রয়োগ যা হাংরি আন্দোলনকারীদের পূর্বে নিষিদ্ধ ছিল বর্তমানে আকছার হয়ে গেছে । (৭). ভঙ্গুর বাকপ্রতিমা প্রয়োগ । হাংরি আন্দোলনকারীদের কবিতায় একটি ছবি সম্পূর্ণ গড়ে ওঠার আগেই তা মিলিয়ে গিয়ে আরেকটি ছবি ভেসে ওঠে । বাংলা কবিতায় এটি এখন প্রতিষ্ঠিত শৈলী । (৮). যৌন চিত্রকল্প, অশ্লীল শব্দ, গালমন্দ, নিচুতলার অভিব্যক্তি যা পাঁচের দশক পর্যন্ত পাঠবস্তুতে নিষিদ্ধ ছিল তার যথেচ্ছ প্রয়োগের সূত্রপাত করে গেছেন হাংরি আন্দোলনকারীরা । (৯). তাঁদের পাঠবস্তুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গৌহাটি বিস্ববিদ্যালয়ের রিডার ড, শঙ্কর ভট্টাচার্য লিখেছেন যে সেগুলো "সাধারণত প্রতিবাদ-মুখর, আনুষ্ঠানিকতা-বর্জিত, প্রাতিস্বিকতায় ভঙ্গুর, অস্হির, আস্বস্তিকারক, ছকহিন, ঐক্যহীন, খাপছাড়া, এলোপাতাড়ি ও আয়রনিমূলক" । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগীব প্রধান ড. তরুণ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, "ভাষায়, ছন্দে, অলংকার, স্তবকে তুমুল ভাংচুর" করেছেন তাঁরা, এবং "যৌনতার সঙ্গে এসেছে ব্যঙ্গ, আত্মপরিহাস ও অসহায় মানুষের নিস্ফলতার যন্ত্রণা; আত্মপ্রক্ষেপ ঘটিয়ে তঁরা নিরপেক্ষ হয়ে যান" । আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বি. দে মলয় রায়চৌধুরী ও হাংরি আন্দোলন বিষয়ে ৩৫০ পৃষ্ঠার গবেষণার জন্য পিএচ.ডি. সন্মান দ্বারা ভূষিত হয়েছেন ।


==================================================
হাংরী আন্দোলনের যুবরাজ - ত্রিদিব মিত্র কে নিয়ে আলোচনা লিখেছিলেন সুবিমল
বসাক যা এখানে তুলে ধ রা হলো ।

ত্রিদিবমিত্র : হাংরিআন্দোলনের দ্রোহপুরুষ
(সুবিমল বসাক লিখিত)
================================================

হাংরি আন্দোলনের দ্রোহপুরুষ ত্রিদিব মিত্র এবং তাঁর তদানীন্তন প্রেমিকা আলো মিত্র ( যাঁকে তিনি পরবর্তীকালে বহু ঝড়-জলের পর বিয়ে করেন ) সম্পর্কে পত্র-পত্রিকায় বিশেষ লেখালিখি দেখতে পাওয়া যায় না, তার কারণ আন্দোলনকারীদের কয়েকজন আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন, ষাটের সেই টালমাটাল সময়ে, যাতে এই প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি বিশেষ বিজ্ঞাপিত ও প্রচারিত না হন। হাংরি জেনারেশন কেবল একটি পত্রিকা হয়ে থেকে যেত ত্রিদিব ও আলোর অবদান ছাড়া। তা যে আন্দোলন হতে পেরেছে তার কারণ এঁদের দুজনার অভাবনীয় তৎপরতা।কালীদা, যিনি খালাসিটোলা ভাটিখানার মালিক বা ম্যানেজার ছিলেন, বলেছিলেন যে আলো মিত্রের আগে আর কোনো মহিলা খালাসিটোলায় ঢোকার সাহস করেননি।

ষাটের দশকে যা নতুন-নতুন কার্যকলাপ সাহিত্যিকরা আরম্ভ করেছিলেন তা ত্রিদিব মিত্র ও আলো মিত্রর মস্তিষ্কপ্রসূত। তাঁরাই প্রথম পোস্টকার্ডে কবিতা, পুস্তিকার আকারে কবিতা, রঙিনকাগজে কবিতা, ভাঁজকরা কাগজে কবিতা আরম্ভ করেছিলেন।তাঁরাই প্রথম মাইকেল মধুসূদন দত্তের সমাধিতে কবিতা পাঠের আয়োজন করেছিলেন। তাঁরাই প্রথম খালাসিটোলা নামে কলকাতার বিখ্যাত ভাটিখানায়, জীবনানন্দ দাশের জন্মদিনে, পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশের অনুষ্ঠান করেছিলেন।খালাসিটোলায় কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানও তঁদের অবদান। তাঁরা দুজনে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন; ইংরেজিতে 'ওয়েস্ট পেপার' ও বাংলায় 'উন্মার্গ' । তাঁদের পূর্বে বাংলা সাহিত্যে পত্রিকার এরকম নাম রাখার কথা কেউ চিন্তা করতে পারতেন না। বস্তুত, তার পর থেকে পত্রিকার নামকরণে বিপ্লব ঘটে গিয়েছে পশ্চিমবাংলায়।
মলয় রায়চৌধুরী ও দেবী রায় যে-সমস্ত মুখোশ হাংরি আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিলি করার জন্য ছাপিয়েছিলেন, জোকার দানব পশু পাখি মিকিমাউস দেবী-দেবতা ইত্যাদি, সেগুলি এনারা দুজনে পৌঁছে দিয়ে আসতেন তখনকার মন্ত্রী ও প্রশাসনের কর্ণধারদের, সংবাদপত্র-মালিকদের , যার জন্য যথেষ্ট বুকের পাটা দরকার। এনারা দুজনে কাঁধে মই নিয়ে কলকাতা ও হাও্ড়ার কলেজ ও অন্যত্র হাংরি আন্দোলনের পোস্টার সাঁটতেন; পোস্টার এঁকে দিতেন অনিল করঞ্জাই ও করুণানিধান মুখোপাধ্যায় ।হাংরি আন্দোলনের পূর্বে কবিতার পোস্টারের ধারণা কলকাতার সাহিত্যিকদের ছিল না।

ত্রিদিব মিত্রের জন্ম হাওড়ার অভিজাত পরিবারে, ১৯৪০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তিনি স্কুল-ফাইনাল পরীক্ষার পর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে পালান , এবং চল্লিশ দিনের যে হোলি উৎসব মথুরা ওবৃন্দাবনে হয়, তাতে অংশ নিয়েছিলেন। যাঁরা ওই উৎসবে কখনও অংশ নিয়েছেন তাঁরাই কেবল জানেন ব্যাপারটা কত আনন্দদায়ক ও উৎশৃঙ্খল। তিনি ছিলেন ফর্সা ও সুপুরুষ, এবং স্বাভাবিকভাবেই তাঁর অভিজ্ঞতা ভালো হয়নি। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে ক্রুদ্ধ ও সমাজ সম্পর্কে বিতৃষ্ণ করে তুলেছিল, যা লাঘব হয় হাংরি আন্দোলনে যোগ দেয়ার মাধ্যমে।

ত্রিদিবের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল খালাসিটোলার ভাটিখানায়।তারপর আমার মাধ্যমে মলয়ের সঙ্গে ও অন্যান্যদের সঙ্গে। মলয়ের সঙ্গে নৈকট্য গড়ে ওঠে ত্রিদিবের এবং সেকারণেই ত্রিদিবের পত্রিকা দুটি হাংরি আন্দোলনের অভুমুখ হয়ে ওঠে।ওর পত্রিকা প্রকাশিত হলেই আমরা দল বেঁধে খালাসিটোলায় অনুষ্ঠান করতাম; তারপর বাইরে বেরিয়ে কলকাতার পথে অনেক রাত পর্যন্ত চরে বেড়ানো; কখনও বা গাঁজার পুরিয়া ম্যানেজ করে রামকৃষ্ণ ঘাটে সারা রাত। পকেটে টাকা থাকলে বেপাড়ায়। ত্রিদিবের সুপুরুষ চেহারার জন্য ওর খাতির হত বেশি, গালও টিপে দিত কেউ-কেউ।


পেটে মদ পড়লেই ত্রিদিবের কন্ঠ থেকে কথা ছুটতে শুরু করত; অন্য সময় ও একেবারে চুপচাপ, কারোর সঙ্গে তখন কোনো কথা বলত না।একেবারে ফালগুনী রায়ের বিপরীত চরিত্র।আমরা কফিহাউসে একত্রিত হলেও অত্যধিক কথাবার্তায় বিরক্ত ত্রিদিব সাধারণত কফিহাউসে যেত না। যেত তখনই যখন হাংরির কোনো বুলেটিন বা মুখোশ বা পোস্টকার্ড বা ফোল্ডার বিলি করার থাকত, কিংবা কফিহাউসের সিঁড়ির দেয়ালে পোস্টার লাগাবার থাকতো। অনেকে পোস্টার ছিঁড়ে দিতো বলে ত্রিদিবের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি রুখতে হতো আমাদের।
ত্রিদিব ও তার প্রেমিকার হাংরি তৎপরতার কারণে হাংরি আন্দোলনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লেও, ত্রিদিব নিজের লেখালিখিকে অবহেলা করেছে, যখন কিনা অন্যান্য হাংরি আন্দোলনকারীরা সে-সময় নিজেদের লেখায় মনোনিবেশ করেছেন।


কেবলমাত্র দুটি কবিতা-পুস্তিকা রেখে গেছেন ত্রিদিব -- ঘুলঘুলি ও প্রলাপ-দুঃখ । ঘুলঘুলি ছিল ফোল্ডারের আকারে এবং প্রলাপ-দুঃখ ছিল ৪৮ পৃষ্ঠার, ল্যাকভার্নিশহিন কালো রঙের মলাট, কাভারে ত্রিদিবের কোমর পর্যন্ত নেগেটিভ ছবি -- শুয়ে আছে ঘাসের ওপর, হাতে সিগারেট। গণেশ পাইন এঁকে দিয়েছিলেন ওর প্রলাপ-দুঃখ বইটির প্রচ্ছদ। বইটি প্রকাশের পরও ত্রিদিব সেইভাবে প্রচার করেনি, যখন কিনা হাংরি বুলেটিন সে পৌঁছে দিত সকলের টেবিলে বা বাসায় বা দপতরে।


ফালগুনী রায়ের মতই একলা থাকতে ভালো বাসত ত্রিদিব মিত্র।নিস্পৃহ ছিল নিজেরই লেখালিখির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।তার কিংবদন্তি গড়ে ওঠে মূলত আলোর সঙ্গে ওই ষাটের দশকে লিভ-ইন, তা সত্তেও অবাধ যৌনতা, বেশ্যাদের মধ্যে বিস্ময়কর পপুলারিটি, কাঁচা মাছ ও কাঁচা মাংস খাবার জন্যে একগুঁয়ে লোভ, ঘনঘন সিগারেট খাওয়া (অধিকাংশ সময়ে গাঁজা বা চরস দিয়ে), টিপিকাল হাওড়ার কথ্যভাষায় কথা বলার ঝোঁক, জীবনানন্দের কবিতা আওড়াতে থাকা, খালি গায়ে রাস্তায় হাঁটা।



ব্যাংকশাল কোর্টে যখন মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে কেস চলছিল তখন শৈলেশ্বর ঘোষ, সুভাষ ঘোষ, সুবো আচার্য, বাসুদেব দাশগুপ্ত, প্রদীপ চৌধুরী, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় কারোর টিকিটি দেখা যেত না ।শৈলেশ্বর আর সুভাষ তো রাজসাক্ষী হয়ে গিয়েছিল, এবং সে-বাবদ টাকাও পেয়েছিল সরকারের কাছ থেকে। আমি যেতাম আর যেত ত্রিদিব ও আলো; অনেক সময়ে ফালগুনী রায়।


এতদিন ধরে আমরা গাদাগাদা বই পেয়েছি: ফুলের বই, পাখির বই, সেলাইয়ের বই, রান্নার বই, ছবি লেখার বই, ঘরকন্নার বই, ডেবিটক্রেডিটের বই, পোস্টাপিসের বই, সমাজতত্বের বই, শাক-সব্জি ফলানোর বই, গানের বই, প্রাপ্তবয়স্কের বই -- এই নানা ধরণের বই; তেমনি এতদিন ধরে পেয়ে এসেছি যন্ত্রণার কবি, হতাশার কবি, প্রেমের কবি, মুক্তি-যুদ্ধের কবি, নিসগৈর কবি, জনপদ কবি, রোমান্টিক কবি, মৌমাছির কবি -- এমন ধারা অনেক। জীবনের কবি । সারপ্রাইজিং ব্যাপার। ত্রিদিবের লেখালিখি জীবনের সঙ্গে অমন ওতপ্রোত ভাবে জড়িত বলেই তার রচনা অমোঘ, দোষময় ও কলঙ্কিত।মনে পড়ে, বিষ্ণুপুর শহর থেকে তিন মাইল দূরে ব্রীড়াবতী নদীতে আমি, মলয়, সুবো আর ত্রিদিব বেশ কয়েক ঘন্টা সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে স্নান করেছিলাম; বহু চাষি সেসব দেখে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। তার পরেও, চাষিদের দৌলতে, বালির চড়ায় মহুয়া টেনে পড়েছিলাম আমরা।


প্রলাপ-দুঃখ কাব্যগ্রন্হে ত্রিদিব দেখিয়েছে মুদ্রার অপরপিঠ।একথা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে সাহিত্যের কমিটমেন্ট ও রাজনীতির কমিটমেন্ট এক নয় । রাজনীতির কমিটমেন্ট বিধানসভার-লোকসভার বাইরে ভেতরে আলাদা হতে পারে, কিন্তু সাহিত্যে একবার কমিটেড হয়ে গেলে তার আর ফেরার উপায় থাকে না, বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া।


মলয় লেখালিখি দুই দশকের জন্যে ছেড়ে দিয়েছিল, যে কারণেই হোক, জানি না। ত্রিদিবও মলয়ের সঙ্গে লেখালিখি ছেড়ে দিয়েছিল, কিন্তু আর ফেরেনি, এমনকি আমাদের কারোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি।এমনই তার ঘৃণা ও ক্রোধ। সে কাউকে ক্ষমা করেনি। ফালগুনী তবু ক্ষমা করে দিয়েছিল শৈলেশ্বর ও সুভাষকে, ত্রিদিব করেনি। ত্রিদিবের মতে, হাংরি জেনারেশন আন্দোলনকে দূষিত করে দিয়েছিল এই দুইজনের( শৈলেশ্বর আর সুভাষ ) কার্যকলাপ।

( রচনা: ৯ মে ১৯৭২ )
Comments
Anindita Mitra
Anindita Mitra New information.
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Anindita Mitra
LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Jharna Muhkerjee
Jharna Muhkerjee ANEK KICHU JANLAM DHANYABAD
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Sirajul Islam
Sirajul Islam Oochena jogot.oojana kotha.. Aro besi kore janate hobe nutun projanmoke.Thanks dada
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Nilima Deb
Nilima Deb worth reading my dear KB.
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 1y
Munira Chowdhury
Munira Chowdhury এই বিষয় নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে...
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 1y

No comments:

Post a Comment

হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে

  হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায় : নিখিল পাণ্ডে প্রখ্যাত কবি, হাংরির কবি দেবী রায় ৩ অক্টোবর ২০২৩ চলে গেছেন --- "কাব্য অমৃতলোক " ফ্ল্...