আন্দোলনে অশ্লীল শব্দপ্রয়োগ প্রসঙ্গেঃ
ষাটের দশকে পশ্চিম বাঙলায় কবিসাহিত্যিকদের একটা আন্দোলন হয়েছিলো। নাম ছিলো হাংরি আন্দোলন বা "হাংরিয়ালিস্ট মুভমেন্ট"। কবিরা বেছে বেছে শব্দ প্রয়োগের যান্ত্রিকতায় হাপিয়ে উঠছিলেন। যে শব্দ বা শব্দগুচ্ছ জীবনকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলেনা তার বিরোধীতা করছিলেন। এই নাম কবি জিওফ্রে চসারের হাংরি কবিতা থেকে ধার করা। যখন সমাজের ভালো কনসেপ্ট হজম হয় বা লুপ্ত হয়, তখন সেই ক্ষুধার্ত সমাজ যা পায় তাই খেয়ে নিতে চায় অবলীলায়। তখনকার আন্দোলনের মুল ধারনা ছিলো এটা। আন্দোলনের কবিরা তাদের সাহিত্যে প্রচুর অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করেছেন। আন্দোলনের প্রাণপুরুষ কবি মলয় রায়চোধুরী "প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতোর" কবিতায় "ঈশ্বরের পোঁদে" চুমু খেতে চেয়েছেন পর্যন্ত। বিয়ের কার্ডে কবিতা লিখে মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছেন, সারারাত ছবি একে এক্সিবিশন শেষে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছেন, এস্টাবলিশমেন্ট বিরোধীতা আর কাকে বলে! ফলাফল, মামলা, ফেরারি জীবন। পরে উনারা বিশ্বব্যাপী খ্যাতিলাভ করেন ও অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন।
কিন্তু এ আন্দোলনের রেশ রয়ে যায় কয়েক দশক। আমাদের দেশেও হাংরি প্রভাবিত বেশ ক'জন কবি আছেন। তার মধ্যে রফিক আজাদ অন্যতম। "ভাত দে হারামজাদা" তার সাহসী উচ্চারণ। বলেছেন, "ক্ষুধার্তের কাছে নেই ইষ্টানিষ্ট, নিয়মকানুন। দৈবাৎ ধরো তোমাকে যদি পেয়ে যাই, সর্বগ্রাসী ক্ষুধার কাছে উপাদেয় উপাচার হবে"।
কথাগুলো কিছু সুশীলদের জন্যে বলা। দেশে চলমান ছাত্র আন্দোলনে অশ্লীল স্লোগান ওঠায় উনারা সেগুলো তুলোধোনা করেছেন, আন্দোলনের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। উনারা কি জানেন, একটা গণ আন্দোলনে সব শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব থাকে? যে ছাত্ররা গণজোয়ার তৈরি করেছে তার মধ্যে উচ্চ মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে গায়েগতরে খেটে খাওয়া পরিবারের ছেলেমেয়েরাও আছে। প্রতিবাদ করার আকস্মিক ভাষা কি সবার এক হতে পারে? এই সুশীল ও ব্যকরণবিদরা আদতে কোনকিছু পাল্টাতে পারবেন সাতজন্মে? মানুষ এই নৈরাজ্যবাদী সড়ক ব্যবস্থাপনায় অতিষ্ঠ। প্রতিদিন সড়কে মানুষ খুন হলে ব্যাকরণ মেনে কথা বলা যায়না। কবিতার মতো "সর্বগ্রাসী ক্ষুধার্ত" না হলে লাইসেন্সহীন সার্জেন্টকে দিয়ে তার নিজের নামে ৫০০ টাকা জরিমানা করিয়ে ঐ টাকা দিয়ে বনরুটি আর কলা কিনে খাওয়া সম্ভব? সব অর্জন আর সম্ভাবনা বুড়োরা নিঃশেষ করেছে, মানুষ আক্ষরিক অর্থেই হয়েই গেছে "হাংরি"। ক্ষুধা সবচেয়ে অনুভব করছে আজকের দিনের কিশোর-কিশোরীরা। স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে এসে গোগ্রাসে গিলছে সব অনিয়ম। সেখানে হয়তো কিছুটা ভূল হচ্ছে, পুলিশ তাদের ভাষায় হয়ে যাচ্ছে "চ্যাটের বাল"। কিন্তু এ ভূল সুশীলের হাজার বছরের নীরবতার চেয়ে ভালোই বলতে হবে।
যেদিন কোন সুশীল তার বাবাকে/ভাইকে/বোনকে থেঁতলানো অবস্থায় বাসের চাকার নিচে আবিস্কার করবেন, সেদিন হয়তো তিনি তার সব সুশীলতা আর ব্যাকরণ ভূলে গিয়ে চিৎকার করে "শুয়োরের বাচ্চা" বলে উঠবেন।
কার্টেসী:- Prince Ahmed
ষাটের দশকে পশ্চিম বাঙলায় কবিসাহিত্যিকদের একটা আন্দোলন হয়েছিলো। নাম ছিলো হাংরি আন্দোলন বা "হাংরিয়ালিস্ট মুভমেন্ট"। কবিরা বেছে বেছে শব্দ প্রয়োগের যান্ত্রিকতায় হাপিয়ে উঠছিলেন। যে শব্দ বা শব্দগুচ্ছ জীবনকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলেনা তার বিরোধীতা করছিলেন। এই নাম কবি জিওফ্রে চসারের হাংরি কবিতা থেকে ধার করা। যখন সমাজের ভালো কনসেপ্ট হজম হয় বা লুপ্ত হয়, তখন সেই ক্ষুধার্ত সমাজ যা পায় তাই খেয়ে নিতে চায় অবলীলায়। তখনকার আন্দোলনের মুল ধারনা ছিলো এটা। আন্দোলনের কবিরা তাদের সাহিত্যে প্রচুর অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করেছেন। আন্দোলনের প্রাণপুরুষ কবি মলয় রায়চোধুরী "প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতোর" কবিতায় "ঈশ্বরের পোঁদে" চুমু খেতে চেয়েছেন পর্যন্ত। বিয়ের কার্ডে কবিতা লিখে মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছেন, সারারাত ছবি একে এক্সিবিশন শেষে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছেন, এস্টাবলিশমেন্ট বিরোধীতা আর কাকে বলে! ফলাফল, মামলা, ফেরারি জীবন। পরে উনারা বিশ্বব্যাপী খ্যাতিলাভ করেন ও অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন।
কিন্তু এ আন্দোলনের রেশ রয়ে যায় কয়েক দশক। আমাদের দেশেও হাংরি প্রভাবিত বেশ ক'জন কবি আছেন। তার মধ্যে রফিক আজাদ অন্যতম। "ভাত দে হারামজাদা" তার সাহসী উচ্চারণ। বলেছেন, "ক্ষুধার্তের কাছে নেই ইষ্টানিষ্ট, নিয়মকানুন। দৈবাৎ ধরো তোমাকে যদি পেয়ে যাই, সর্বগ্রাসী ক্ষুধার কাছে উপাদেয় উপাচার হবে"।
কথাগুলো কিছু সুশীলদের জন্যে বলা। দেশে চলমান ছাত্র আন্দোলনে অশ্লীল স্লোগান ওঠায় উনারা সেগুলো তুলোধোনা করেছেন, আন্দোলনের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। উনারা কি জানেন, একটা গণ আন্দোলনে সব শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব থাকে? যে ছাত্ররা গণজোয়ার তৈরি করেছে তার মধ্যে উচ্চ মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে গায়েগতরে খেটে খাওয়া পরিবারের ছেলেমেয়েরাও আছে। প্রতিবাদ করার আকস্মিক ভাষা কি সবার এক হতে পারে? এই সুশীল ও ব্যকরণবিদরা আদতে কোনকিছু পাল্টাতে পারবেন সাতজন্মে? মানুষ এই নৈরাজ্যবাদী সড়ক ব্যবস্থাপনায় অতিষ্ঠ। প্রতিদিন সড়কে মানুষ খুন হলে ব্যাকরণ মেনে কথা বলা যায়না। কবিতার মতো "সর্বগ্রাসী ক্ষুধার্ত" না হলে লাইসেন্সহীন সার্জেন্টকে দিয়ে তার নিজের নামে ৫০০ টাকা জরিমানা করিয়ে ঐ টাকা দিয়ে বনরুটি আর কলা কিনে খাওয়া সম্ভব? সব অর্জন আর সম্ভাবনা বুড়োরা নিঃশেষ করেছে, মানুষ আক্ষরিক অর্থেই হয়েই গেছে "হাংরি"। ক্ষুধা সবচেয়ে অনুভব করছে আজকের দিনের কিশোর-কিশোরীরা। স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে এসে গোগ্রাসে গিলছে সব অনিয়ম। সেখানে হয়তো কিছুটা ভূল হচ্ছে, পুলিশ তাদের ভাষায় হয়ে যাচ্ছে "চ্যাটের বাল"। কিন্তু এ ভূল সুশীলের হাজার বছরের নীরবতার চেয়ে ভালোই বলতে হবে।
যেদিন কোন সুশীল তার বাবাকে/ভাইকে/বোনকে থেঁতলানো অবস্থায় বাসের চাকার নিচে আবিস্কার করবেন, সেদিন হয়তো তিনি তার সব সুশীলতা আর ব্যাকরণ ভূলে গিয়ে চিৎকার করে "শুয়োরের বাচ্চা" বলে উঠবেন।
কার্টেসী:- Prince Ahmed
No comments:
Post a Comment