অরুণেশ ঘোষ স্মৃতি পুরস্কার !!
গত পরশু আমি জানলাম--এবারের কোচবিহার বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে (৩ জানুয়ারী, ২০১৭) আমাকে অরুণেশ ঘোষ স্মৃতি পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সম্বর্ধনা জানাবে জেলা বইমেলা কমিটি ! বাজারে গুজব ছিল--আমাকে অমিয়ভূষণ স্মৃতি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। আসলে তা নয়। তাতে অবশ্য আমার হতাশ হওয়ার কোন কারণ ঘটছে না। সময়ের থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকা সাহসী কবি-প্রাবন্ধিক-গল্পকার অরুণেশ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কারের মানসিক মূল্য আমার কাছে কম নয়। অরুণেশদার কথায় পরে আসছি--প্রসঙ্গতঃ অমিয়ভূষণকে নিযে দু’চার কথা বলে নিই।
অমিয়ভূষণ মজুমদারের সঙ্গে আমার একটা গভীর মানসিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। আমি উত্তরবঙ্গে আসার আগে ওঁর লেখার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। ঠিকঠাক পড়েছিলাম কিনা সেটা তিনি নানান প্রশ্নের মাধ্যমে যাচাই করেই খুশি হয়েছিলেন। একাধিক বড় সংবাদমাধ্যমে আমিই প্রথম অমিয়ভূষণকে নিয়ে সাক্ষাৎকার ভিত্তিক বড় প্রতিবেদন লিখেছিলাম (গপ্পো নয়--প্রমাণ আছে)। শিলিগুড়ির দীনবন্ধুমঞ্চে সরাসরি সম্প্রচারিত আকাশবাণীর গল্পপাঠের অনুষ্ঠানে কোচবিহার থেকে আমি ও অমিয়ভূষণ আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। সে এক দারুণ স্মৃতি ! আসামের তৎকালীন বাংলা দৈনিক ‘সময় প্রবাহ’ কাগজেও অমিয়দাকে নিয়ে পাতাজোড়া আমার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। মাথাভাঙ্গায় ‘সাহিত্য ভগীরথ’ সাহিত্য সম্মেলনে তাঁকে সম্মানিত করেছিলাম--যদিও কথা দিয়েও শেষপর্যন্ত তিনি উপস্থিত হতে পারেন নি--তাঁর হয়ে স্মারকাদি গ্রহণ করেছিলেন তমসুক পত্রিকার সম্পাদক কবি সমীর চট্টোপাধ্যায়। পরে না আসতে পারার জন্যে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আমায় চিঠিও দিয়েছিলেন ! তাঁর না অাসতে পারার কারণটা পরে জেনেছিলাম। দুঃখ পাইনি--কারণ আমার অভিজ্ঞতা ছিল।
সুনীল-শঙ্খ-জয়--থেকে শুরু করে অনেক কবি-সাহিত্যিককেই তথাকথিত বাংলাসাহিত্য জগতের কিছু চামচিকে সবসময়ে নিজেদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি মনে করে প্রাণপণে আগলে রাখার চেষ্টা করে এসেছে নিজেদের শূন্য বাজার দরকে ঠেলেঠুলে ওপরে তোলার জন্যে। কিন্তু নিজের কিছু না থাকলে যে চামচিকে থেকে কোকিল হয়ে ওঠা যায় না--এটা তাদের কে বোঝাবে !
অরুণেশদাকে ঘিরেও এরকম কিছু চামচিকে অন্যান্য অনেক গুণমুগ্ধদের কাছ থেকে তাকে দূরে সরিয় রাখার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে গেছে। আমি কখনোই চামচিকে বৃত্ত ভেঙ্গে ভেতরে গলে যাওয়ার চেষ্টা করি নি--দূর থেকেই তাদের প্রতি আমার মুগ্ধতা ধরে রেখেছি।
অরুণেশদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেকটাই ছিল মানসিক। কত বিষয় নিয়ে (বিশেষ করে বিদেশি সাহিত্য) কত যে আলোচনা করেছি তা আমিই জানি ! অরুণেশদার বোধ এবং বৈদগ্ধ ছিল রীতিমতো ঈর্ষণীয়। চামচিকেদের মাঝখানে তাকে পেখম ছড়ানো ময়ূর মনে হত। অবশ্য এটা সকলের মনে হত কি না জানি না--আমার মনে হত।
হয়তো কাকতলীয় মনে হবে--২০১২ সালে কোচবিহার থেকে অরুণেশদাকে মরণোত্তর সম্বর্ধনা জানাল বাংলা আকাদেমি (অনেকটাই সাদামাটা ভাবে--আমার অন্ততঃ তাই মনে হয়েছে)। ঐ একই মঞ্চে বাংলা আকাদেমি’র পক্ষে প্রয়াত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী আমার হাতে স্মরকাদি তুলে দিয়ে সম্বর্ধনা জানিয়েছিলেন ! ঐ মঞ্চেই প্রয়াত ক্ষুধার্ত কবি শৈলেশ্বর ঘোষ দীর্ঘ ক্লান্তিকর লিখে আনা ভাষণ পাঠ করলেন--একবারের জন্যেও তিনি অরুণেশদার নামোচ্চারণ করলেন না !! ইতিহাস জানি তাই ভীষণই খারাপ লেগেছিল ! সেই অরুণেশ ঘোষ স্মৃতি পুরস্কার আমাকে নিঃসন্দেহে আবেগাপ্লুত করবে !
অমিয়ভূষণ স্মৃতি পুরস্কার পেলেও আমি একইরম অনুভূতিতে সিক্ত হতাম ! কমিটি যাকে যেরকম উপযুক্ত মনে করেছেন সেই রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্নটা হল অন্যরকম।
এদেশের কোনও পুরস্কার প্রাপকের (এখন তো নোবেলেও!) মনোনয়ন বিতর্ক-এর ওপরে থাকে না। সুতরাং আমার মনোনয়ন প্রশ্নাতীত থাকবে--এমনটা অামি আদৌ ভাবছি না। অনেকেই আমার নাম মনোনয়নে রাজনৈতিক সংযোগ খুঁজে বের করবেন। অনেকেই নিজেদের ঘনিষ্ঠ মহলে সবিস্ময়ে প্রশ্ন করবেন--এ লোকটা আবার কবে কবিতা লিখল? অরুণেশ ঘোষের নামটাই কমিটি ডুবিয়ে দিল !! শেষপর্যন্ত কিছু না পেয়ে ঠোঁট উল্টে কেউ কেউ বলেও ফেলতে পারে--দূর--অরুণেশ পুরস্কার একটা পুরস্কার হল? দেশের ক’জন নাম শুনেছে?
যেখানেই থাকুন--অরুণেশদা এইসব বালখিল্য অর্বাচীনতায় নিশ্চয়ই হাসবেন না। তিনি উপুড় হয়ে কলম চালাতে থাকবেন তাঁর অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপির ওপর। আমি তাঁর নামাঙ্কিত স্মৃতি পুরস্কার গ্রহণের মুহূর্তটিতে প্রবলভাবে আবেগতাড়িত হব ! কোনও পুরস্করের যোগ্য বলে নিজেকে ভাবতে না পারলেও অরুণেশদার জন্যেই আমাকে যেতে হবে। আমাকে নিয়ে বিতর্ক হবে--প্রশ্ন উঠবে--তবুও !!
গত পরশু আমি জানলাম--এবারের কোচবিহার বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে (৩ জানুয়ারী, ২০১৭) আমাকে অরুণেশ ঘোষ স্মৃতি পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সম্বর্ধনা জানাবে জেলা বইমেলা কমিটি ! বাজারে গুজব ছিল--আমাকে অমিয়ভূষণ স্মৃতি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। আসলে তা নয়। তাতে অবশ্য আমার হতাশ হওয়ার কোন কারণ ঘটছে না। সময়ের থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকা সাহসী কবি-প্রাবন্ধিক-গল্পকার অরুণেশ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কারের মানসিক মূল্য আমার কাছে কম নয়। অরুণেশদার কথায় পরে আসছি--প্রসঙ্গতঃ অমিয়ভূষণকে নিযে দু’চার কথা বলে নিই।
অমিয়ভূষণ মজুমদারের সঙ্গে আমার একটা গভীর মানসিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। আমি উত্তরবঙ্গে আসার আগে ওঁর লেখার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। ঠিকঠাক পড়েছিলাম কিনা সেটা তিনি নানান প্রশ্নের মাধ্যমে যাচাই করেই খুশি হয়েছিলেন। একাধিক বড় সংবাদমাধ্যমে আমিই প্রথম অমিয়ভূষণকে নিয়ে সাক্ষাৎকার ভিত্তিক বড় প্রতিবেদন লিখেছিলাম (গপ্পো নয়--প্রমাণ আছে)। শিলিগুড়ির দীনবন্ধুমঞ্চে সরাসরি সম্প্রচারিত আকাশবাণীর গল্পপাঠের অনুষ্ঠানে কোচবিহার থেকে আমি ও অমিয়ভূষণ আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। সে এক দারুণ স্মৃতি ! আসামের তৎকালীন বাংলা দৈনিক ‘সময় প্রবাহ’ কাগজেও অমিয়দাকে নিয়ে পাতাজোড়া আমার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। মাথাভাঙ্গায় ‘সাহিত্য ভগীরথ’ সাহিত্য সম্মেলনে তাঁকে সম্মানিত করেছিলাম--যদিও কথা দিয়েও শেষপর্যন্ত তিনি উপস্থিত হতে পারেন নি--তাঁর হয়ে স্মারকাদি গ্রহণ করেছিলেন তমসুক পত্রিকার সম্পাদক কবি সমীর চট্টোপাধ্যায়। পরে না আসতে পারার জন্যে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আমায় চিঠিও দিয়েছিলেন ! তাঁর না অাসতে পারার কারণটা পরে জেনেছিলাম। দুঃখ পাইনি--কারণ আমার অভিজ্ঞতা ছিল।
সুনীল-শঙ্খ-জয়--থেকে শুরু করে অনেক কবি-সাহিত্যিককেই তথাকথিত বাংলাসাহিত্য জগতের কিছু চামচিকে সবসময়ে নিজেদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি মনে করে প্রাণপণে আগলে রাখার চেষ্টা করে এসেছে নিজেদের শূন্য বাজার দরকে ঠেলেঠুলে ওপরে তোলার জন্যে। কিন্তু নিজের কিছু না থাকলে যে চামচিকে থেকে কোকিল হয়ে ওঠা যায় না--এটা তাদের কে বোঝাবে !
অরুণেশদাকে ঘিরেও এরকম কিছু চামচিকে অন্যান্য অনেক গুণমুগ্ধদের কাছ থেকে তাকে দূরে সরিয় রাখার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে গেছে। আমি কখনোই চামচিকে বৃত্ত ভেঙ্গে ভেতরে গলে যাওয়ার চেষ্টা করি নি--দূর থেকেই তাদের প্রতি আমার মুগ্ধতা ধরে রেখেছি।
অরুণেশদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেকটাই ছিল মানসিক। কত বিষয় নিয়ে (বিশেষ করে বিদেশি সাহিত্য) কত যে আলোচনা করেছি তা আমিই জানি ! অরুণেশদার বোধ এবং বৈদগ্ধ ছিল রীতিমতো ঈর্ষণীয়। চামচিকেদের মাঝখানে তাকে পেখম ছড়ানো ময়ূর মনে হত। অবশ্য এটা সকলের মনে হত কি না জানি না--আমার মনে হত।
হয়তো কাকতলীয় মনে হবে--২০১২ সালে কোচবিহার থেকে অরুণেশদাকে মরণোত্তর সম্বর্ধনা জানাল বাংলা আকাদেমি (অনেকটাই সাদামাটা ভাবে--আমার অন্ততঃ তাই মনে হয়েছে)। ঐ একই মঞ্চে বাংলা আকাদেমি’র পক্ষে প্রয়াত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী আমার হাতে স্মরকাদি তুলে দিয়ে সম্বর্ধনা জানিয়েছিলেন ! ঐ মঞ্চেই প্রয়াত ক্ষুধার্ত কবি শৈলেশ্বর ঘোষ দীর্ঘ ক্লান্তিকর লিখে আনা ভাষণ পাঠ করলেন--একবারের জন্যেও তিনি অরুণেশদার নামোচ্চারণ করলেন না !! ইতিহাস জানি তাই ভীষণই খারাপ লেগেছিল ! সেই অরুণেশ ঘোষ স্মৃতি পুরস্কার আমাকে নিঃসন্দেহে আবেগাপ্লুত করবে !
অমিয়ভূষণ স্মৃতি পুরস্কার পেলেও আমি একইরম অনুভূতিতে সিক্ত হতাম ! কমিটি যাকে যেরকম উপযুক্ত মনে করেছেন সেই রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্নটা হল অন্যরকম।
এদেশের কোনও পুরস্কার প্রাপকের (এখন তো নোবেলেও!) মনোনয়ন বিতর্ক-এর ওপরে থাকে না। সুতরাং আমার মনোনয়ন প্রশ্নাতীত থাকবে--এমনটা অামি আদৌ ভাবছি না। অনেকেই আমার নাম মনোনয়নে রাজনৈতিক সংযোগ খুঁজে বের করবেন। অনেকেই নিজেদের ঘনিষ্ঠ মহলে সবিস্ময়ে প্রশ্ন করবেন--এ লোকটা আবার কবে কবিতা লিখল? অরুণেশ ঘোষের নামটাই কমিটি ডুবিয়ে দিল !! শেষপর্যন্ত কিছু না পেয়ে ঠোঁট উল্টে কেউ কেউ বলেও ফেলতে পারে--দূর--অরুণেশ পুরস্কার একটা পুরস্কার হল? দেশের ক’জন নাম শুনেছে?
যেখানেই থাকুন--অরুণেশদা এইসব বালখিল্য অর্বাচীনতায় নিশ্চয়ই হাসবেন না। তিনি উপুড় হয়ে কলম চালাতে থাকবেন তাঁর অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপির ওপর। আমি তাঁর নামাঙ্কিত স্মৃতি পুরস্কার গ্রহণের মুহূর্তটিতে প্রবলভাবে আবেগতাড়িত হব ! কোনও পুরস্করের যোগ্য বলে নিজেকে ভাবতে না পারলেও অরুণেশদার জন্যেই আমাকে যেতে হবে। আমাকে নিয়ে বিতর্ক হবে--প্রশ্ন উঠবে--তবুও !!
No comments:
Post a Comment